যশোরের চৌগাছায় বিস্তীর্ণ মাঠে চাষ হচ্ছে হরেক রকমের ফল ও নানা ধরনের মৌসুমী সবজি। অসময়ে এসব ফসল উৎপাদন হওয়ায় তা নির্বিচারে নষ্ট করছে পাখি। তাই পাখির উপদ্রপ হতে ফসল রক্ষায় তারা পুরো জমি জাল দিয়ে ঢেকে রাখছেন। অনেক সময় পাখি ক্ষেতে প্রবেশ করতে গিয়ে জালে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে। এভাবে পাখি মরতে থাকলে প্রভাব পড়বে পরিবেশের ওপর। তাই বিকল্প পন্থায় ফসল রক্ষার পরামর্শ পাখি প্রেমীসহ পরিবেশবাদীদের।
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সীমান্তবর্তী উপজেলা চৌগাছার কৃষক চাষ পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন। পরিবর্তনে কৃষক যেমন লাভবান হচ্ছেন তেমনি অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। গত একদশক ধরে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে হরেক রকমের ফল। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আম, লিচু, পেয়ারা, মাল্টা, কুল, ড্রাগন, আঙ্গুর প্রভৃতি। বছরের বার মাসই মাঠে কোন না কোন ফল গাছে ধরছে এবং দিন যাওয়ার সাথে সাথে তা দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠছে। ফল চাষিরা তার বাগানের ফল রক্ষায় ক্ষেতের মাঝ বরাবরই কিংবা জমির কোনে কুঁড়ে ঘর বানিয়ে দিনরাত পাহারা দিচ্ছেন। দিনরাত পাহারা দিয়ে মানুষ হতে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হলেও পাখির উপদ্রপ হতে কৃষক ফল রক্ষা করতে পারছেনা। এমন পরিস্থিতিতে পাখির অত্যাচার হতে ফসল রক্ষায় বহু কৃষক বাড়তি ব্যয় করে গোটা জমি জাল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। এতেকরে কৃষক লাভবান হচ্ছেন ঠিকই কিন্তু বনের পাখি নির্বিচারে মারা যাচ্ছে। অনেক সময় পাখি না বুঝে ক্ষেতে ঢোকার চেষ্টা করছে। আর জালে জড়িয়ে মারা যাচ্ছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে এলাকা এক সময় পাখি শূন্য হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
ড্রাগন চাষি আশরাফুল ইসলাম, আবু সাঈদ, সেলিম রেজা, সুজনসহ একাধিক কৃষক বলেন, ড্রাগন অত্যন্ত ব্যয় বহুল চাষ। যখন গাছে ড্রাগন পাকতে শুরু করে তখন পাখির উপদ্রপ চরমভাবে বেড়ে যায়। জমির দু’একটি ফল খেলে সমস্যা নেই, তবে পাখি জমিতে ঢুকে একের পর এক ঠোঁট দিয়ে ফলে আঘাত করে আর ওই ফলটি তখন নষ্ট হয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই জমি জাল দিয়ে ঢেকে রেখেছেন। তবে আমাদের জানা মতে জালে আটকা পড়া পাখি দ্রুতই উদ্ধার করে পুনরায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পাখি প্রেমী আব্দুল গনি, সুমন হোসেন, চঞ্চল কবির বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখির কোনই বিকল্প নেই। তাছাড়া পাখির কলকাকলিতে গোটা এলাকা সব সময় থাকে মুখরিত। এক সময় অসাধু ব্যক্তিরা ব্যাপকভাবে ঘুঘু পাখি শিকার করায় প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যায় তা। গেল ৪/৫ বছর শিকারীর উপদ্রপ কমে যাওয়ায় আবারও এলাকাতে প্রচুর ঘুঘু পাখি দেখা মিলছে। নানা কারণে টিয়া, ফিঙে , বাবুই পাখিসহ বেশ কিছু জাতের পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। যেসব জাতের পাখি এখনও চোখে পড়ে তা যদি নির্বিচারে মারা যায় তবে পাখি শূন্য হয়ে পড়বে চৌগাছা। তাই ক্ষেতের ফসল যেমন রক্ষা করা জরুরি তেমনি পাখির অবাধ বিচারণও জরুরি। তাই ক্ষেতের ফসল রক্ষায় জালের বিকল্প কিছু আছে কিনা সেটি নিয়ে সকলের চিন্তা করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
খুলনা গেজেট/ এএজে