যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদের অন্তত ৫টি স্পট থেকে ২৫/৩০টি মেশিনের মাধ্যমে বালু তুলে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেন একজন ইউপি সদস্য। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বালু উত্তোলনকারীদের মোবাইলে নিষেধ করেন। তবুও কপোতাক্ষ নদের চৌগাছা অংশের অন্তত ৫টি স্পট থেকে বালু তুলে বিক্রি করছে এসব অসাধু ব্যক্তিরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এক স্থানে বালু তুলতে নিষেধ করলে সেখান থেকে মেশিন সরিয়ে অন্যস্থানে নিয়ে আবারও বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকা এসব ব্যক্তিরা। এতে আগামী বর্ষা মৌসুমে অথবা যে কোন সময় বিপুল পরিমান আবাদি জমি ধসে ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করছেন এসব অঞ্চলের কৃষকরা।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, চৌগাছার হাকিমপুর ইউনিয়নের তাহেরপুরে ভৈরব নদ থেকে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি হয়ে নারায়ণপুর ও পাতিবিলা ইউনিয়ন, চৌগাছা পৌরসভা হয়ে স্বরূপদাহ, চৌগাছা সদর, ধুলিয়ানী ও পাশাপোল ইউনিয়ন হয়ে ঝিকরগাছা ও কেশবপুর উপজেলা হয়ে বয়ে গেছে এই নদ। বলা চলে উপজেলাটিকে দ্বিখন্ডিত করেছে কপোতাক্ষ। নদের পশ্চিমে রয়েছে উপজেলার বৃহৎ তিন ইউনিয়ন নারায়ণপুর, স্বরূপদাহ এবং সুখপুকুরিয়া।
মঙ্গলবার(৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তিস্থল হাকিমপুরের তাহেরপুরে গেলে দেখা যায় পানিগ্রাম রিসোর্টের দক্ষিণ পাশে ও পানিগ্রাম রিসোর্টের মধ্যে, তাহেরপুর শ্মসানঘাটের পাশে ১০/১২ টি মেশিন বসিয়ে বালু তুলে স্তুপ করে রেখেছেন বালুখেকোরা। আরও কয়েকটি স্থানে মেশিন বসানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এসব বালু তুলে যেসব জমিতে রাখা হয়েছে তাঁদের জমির ভাড়ার নামে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ওই গ্রামের ইউপি সদস্য মোঃ স্বাধীন কয়েকদিন আগে তাঁকে ওই স্থান থেকে বালু তুলতে নিষেধ করার পর একদিন বালু তোলা বন্ধ রেখে ফের তিনি বালু তোলা শুরু করেছেন। এছাড়াও নারায়নপুরের পেটভরা, চৌগাছা পৌরসভার শ্মসানঘাট, চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহাসহ ৫টি স্পটে ২৫ থেকে ৩০টি মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যক্তি।
চৌগাছা সদর ইউনিয়নের দিঘলসিংহা গ্রামের ইউপি সদস্য বায়েজিদ হোসেন গত ২ ফেব্রুয়ারি চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর চার জনের নাম উল্লেখ করে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে ওই ব্যক্তিদের বালু উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তবে সেখানে বন্ধ হলেও তাহেরপুর গ্রামের দুই তিন স্থানে প্রায় ১২টি মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে কয়েক ব্যক্তি। একই সাথে পেটভরা গ্রামে কয়েকটি মেশিন বসিয়ে উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীষ মিশ্র জয় বলেন, একটি পক্ষ পৌরসভার শ্মসানঘাট এলাকায় কপোতাক্ষ নদে মেশিন বসিয়ে বালু তুলছিল। সংবাদ পেয়ে আমি তাঁদের কঠোরভাবে নিষেধ করেছি। পরে সেখান থেকে বালু তোলা বন্ধ হয়েছে। তিনি বলেন, এভাবে নদ থেকে বালু তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও এসব ব্যক্তিরা কিভাবে পার পেয়ে যান সেটা আমার বুঝে আসেনা।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, আমি করোনায় অসুস্থ থাকা অবস্থায় এমন একটি লিখিত অভিযোগ পাই। প্রথমে এক স্থান থেকে বালু তোলার সময় চৌগাছা সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে তাঁদের নিষেধ করা হয়। পরে অন্যস্থানে বালু তোলা শুরু করলে আমি মোবাইলে তাঁদের নিষেধ করি। তাঁরা কথা দিয়েছিলেন আর বালু তুলবেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন চৌগাছায় স্বীকৃত কোন বালু মহাল নেই। কোন উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বালুর প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে বালু তোলা যাবে বলে বালুমহাল নীতিমালায় উল্লেখ আছে। তবে আমার জানামতে চৌগাছার বালু উত্তোলনকারীদের কারও জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া নেই।
তিনি বলেন এসব অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুতই ভ্রাম্যমান আদালত চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই