যশোরের চৌগাছা উপজেলার সদর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন করে আবেদন করেছেন ৯ জন ইউপি সদস্য। বিষয়টি আমলে নিয়ে আগামী ১৪ আগস্ট এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের নিয়ে শুনানির দিন ধার্য্য করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) জেলা প্রশাসক আবরাউল হাছান মজুমদারের কাছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উল্লেখ করে ৯ জন ইউপি সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি রেজুলেশনসহ অনাস্থা জ্ঞাপনের আবেদনপত্র জমা দেন। পরে সেটির কপি স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের নিকট জমা দেন।
পরে বিকাল ৩টার দিকে এই আবেদনের অনুলিপি চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছেন তারা। এসময় সাতজন সাধারণ ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এবং একজন সংরক্ষিত নারী সদস্যের স্বামী উপস্থিত ছিলেন।
রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন- ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জালাল উদ্দিন, ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শান্ত ইসলাম, ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান, ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহব্বত আলী, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইন্তাজ আলী, ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বায়েজিদ হোসেন, ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইউনুচ আলী, সংরক্ষিত (১,২,৩) ওয়ার্ডের সদস্য মুছলিমা খাতুন ও সংরক্ষিত (৭,৮,৯) ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিমা খাতুন। ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তারা ১৪টি অভিযোগ এনেছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ভূমি হস্তান্তর করের ১% এর সম্পূর্ণ টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে তুলে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) অর্থের বিষয় সদস্যদের কিছু না জানিয়ে নিজের ইচ্ছামত প্রকল্প নেন। উন্নয়ন সহায়তার বরাদ্দকৃত অর্থ নিজের ইচ্ছামত প্রকল্প দেন, প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করলে প্রমাণিত হবে কোনো কাজই ঠিকমত হয়নি। টি-আর, কাবিখা-কাবিটা অর্থ কোনো ইউপি সদস্যের সাথে সমন্বয় না করে নিজেই প্রকল্প দাখিল করেন; যা ইউনিয়নের লস্কারপুর তবজেলের বাড়ি থেকে বুদোর বাড়ি পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের ৫৩ হাজার ৯৯২ টাকা এবং ইউনিয়নের হোল্ডিং প্লেট লাগানো বাবদ তিন লাখ টাকার মধ্যে দেড় লাখ টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন। ভিজিডি কার্ড বিতরণে অনিয়ম এবং নিজের পছন্দের লোকদের নামে কার্ড প্রদান করেন। অর্থ গ্রহণের মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড প্রদান। জন্মসদন ও ওয়ারেশ সনদ প্রদানে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ। ইউনিয়নে সালিশ মিমাংশার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করা। ভিজিএফ’র চাল বিতরণে অনিয়ম।
ইতিপূর্বে ইউপি সদস্যরা কিছু জানতে চাইলে হুমকি প্রদান করা এবং শারিরিক নির্যাতন ও মহিলা সদস্যদের উপর মানসিক অত্যাচার করা। প্রাথমিক অবস্থায় আমরা ৯ জন সদস্য ইউনিয়ন পরিষদের অভ্যন্তরীন আয়ের হিসাব চাইলেও দেয়া হয়নি, বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইলেও কোনো হিসাব না দেয়া। ইউনিয়ন পরিষদের নিয়মিত ট্যাক্স আদায় ও ট্রেড লাইসেন্স ফি আদায় হলেও কোনো সদস্যকে জানানো বা হিসাব না দেয়া। এ পর্যন্ত ইউপি সদস্যদের মাত্র ২ মাসের ভাতা দেয়া হয়েছে। টিসিবি পণ্য বিতরণে অনিয়ম।
রেজুলেশনে তারা আরো বলেন, এ অবস্থায় আমাদের পক্ষে সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধা জনগণকে দেয়া ও জনপ্রতিনিধিত্ব করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ কারণে চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের সকল অন্যায় ও দুর্নীতি বিষয় বিশেষ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে চেয়ারম্যানকে অপসারণের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অনাস্থা জ্ঞাপন করছি।
এ বিষয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আগামী ১৪ আগস্ট এ বিষয়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে শুনানি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/কেডি