মাংসের স্বাদ বাড়াতে মানুষ অন্যান্য মসলার সাথে চুইঝাল ব্যবহার করে থাকেন। দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে খুলনার মানুষের কাছে এ মসলাটি বেশ জনপ্রিয়। সারা বছর এর চাহিদা থাকে। কিন্ত ঈদ এলেই এর চাহিদা ব্যাপক আকারে বাড়ে। কোরবানির ঈদ এলে চুইঝালের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা জনগণের পকেট কাটেন।
খুলনার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে মানভেদে প্রতিকেজি চুইঝাল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত এক সপ্তাহ আগে এটি খুলনার বাজারে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
চুইঝাল একটি পরজীবী, অন্য গাছের আশ্রয় নিয়ে বিস্তার লাভ করে। দেখতে পান পাতার মতো। দেশের দক্ষিণাঞ্চল বিশেষ করে খুলনা, যশোর, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা অঞ্চলে এ গাছের আবাদ হয়।
চুইঝাল মূলত তিন ধরনের হয়ে থাকে:
এঁটো চুই : গাছের মোথা বা মূলের অংশটিকে এঁটো চুই বলে। এটি সব থেকে ভালো এবং সুস্বাদু, মুখে দিলে একদম গলে যায়। এর দাম তুলনামূলক বেশি হওয়ায় শহরাঞ্চলে খুব বেশি পাওয়া যায় না।
গাছ চুই : মোটা ডাল বা কান্ডগুলোকে গাছ চুই বলে। এটাও বেশ সুস্বাদু। সহজে গলে যায় বিধায় এই চুইয়েরও রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
ডাল চুই : গাছের সরু ডাল বা কান্ডকে ডাল চুই বলে। এগুলোতে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকে। স্বাদের ভিন্নতার কারণে অনেকেই এই চুইও পছন্দ করেন।
নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ কেসিসি কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মো: আব্দুল খালেক বলেন, সারা বছর জুড়েই চলে এর ব্যবসা। উৎসব বিশেষ করে মুসলমানদের বড় দু’ উৎসবে এর প্রচলন হয় বেশী। আগে সারাদিন বসে ৩০ কেজি চুইঝাল বিক্রি করতেন। বর্তমানে সেখানে আজ দু’দিন এর চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় চাহিদা বাড়লে সে জিনিষের দাম বাড়ে। বর্তমানে তাকে ব্যাপারীর কাছ থেকে বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। তাই তাকে বেশী দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
নগরীর রূপসা কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী মো: আসলাম বলেন, রাত পার হলেই কোরবানির ঈদ। রান্নার স্বাধ বাড়াতে রমনীরা এ মসলার ব্যবহার করে থাকে। এ সময়ে মূলত চুইঝালের চাহিদা ব্যাপক থাকে। চাহিদা বেশী হওয়ার কারণে দাম একটু বেশী থাকে।
মিস্ত্রিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী শেখ মান্নান বলেন, সারা বছর জুড়ে চুইঝাল বিক্রি হয়। কিন্তু ঈদ এলে বাড়তে থাকে এ মসলার চাহিদা। ৮০০ টাকা করে চুইঝাল বিক্রি করলেও ঈদের সময় বেড়ে যায় দ্বিগুন। বেশী দরে কিনে এনে তাকে এ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
চুইঝাল কিনতে আসা মইনুল ইসলাম বলেন, সারা বছর মাঝে মাঝে মাংসের সঙ্গে চুইঝাল খান। কিন্তু কোরবানির সময় গরুর মাংসের সঙ্গে চুইঝাল না হলে চলে না। ঈদের সময় চুইঝাল দিয়ে রান্না করা মাংস অতিথিদের খুবই পছন্দের। দাম একটু বৃদ্ধি পেলেও, মাংস খেতে চুইঝাল লাগবেই।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, চুইঝাল খুলনার ব্রান্ড হিসেবে সারাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। এখানকার নার্সারি মালিকরা চারা তৈরি করে দেশব্যাপী বিক্রি করছেন। ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিকভাবে খুলনায় চুইঝালের চাষ হচ্ছে। ঈদ এলেই এর চাহিদা ব্যাপক বাড়ে।
খুলনা গেজেট / আ হ আ