খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৬ মে, ২০২৪

Breaking News

চালনা পৌর নির্বাচন : টিকিট নিয়ে আ‘লীগে দ্বন্দ্ব, বিএনপিতে স্বস্তি

আজিজুর রহমান 

খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে পৌরমেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতা যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড়। অন্যদিকে পৌরমেয়র পদে জয়ের জন্য বিএনপি নেতারা সমঝোতার মাধ্যমে একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা যেকোনো মূল্যে মেয়র পদে বিএনপির জয় নিশ্চিত করতে চান।

ওই পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হবে। এর মধ্যদিয়ে দাকোপ উপজেলায় প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চালনা পৌরসভাটি দাকোপ উপজেলার সদরে অবস্থিত। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে ৯ দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটার জায়গা নিয়ে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। লোকসংখ্যা প্রায় ৩৩ হাজার।

নির্বাচন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্তে অনড় থাকা আওয়ামী লীগের দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন চালনা পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌরমেয়র সনত কুমার বিশ্বাস এবং সাবেক পৌরমেয়র ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের দিনধার্য্য করে তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর চালনা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে! কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিট তা নিয়েও নেতাকর্মী হতে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ভোটের ফারাক তেমন আর নেই এ পৌরসভায়। ফলে হিন্দু-অধ্যুষিত এলাকা হলেও সংখ্যালঘু ভোটে পার পাবার সম্ভাবনা অনেকটা কম বলে স্থানীয়দের ধারণা।

স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সনত কুমার বিশ্বাস। গত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ৪ হাজার ৯৩৫ ভোট পেয়ে সনত কুমার বিশ্বাস জয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল ২ হাজার ৫১৯ ভোট পান। সেবার অচিন্ত্য মণ্ডল দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের দু‘টি পক্ষ রয়েছে। যার একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন এবং অন্যটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় সাবেক সাংসদ ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ননীগোপাল মণ্ডল। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় থেকে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। ননীগোপাল মণ্ডলের অনুসারী সাবেক মেয়র অচিন্ত্য মণ্ডল ও আবুল হোসেনের অনুসারী বর্তমান মেয়র সনত বিশ্বাস।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময় থেকে ননীগোপাল ও আবুল হোসেনের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। সে সময় ননী গোপাল দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চাকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে ননীগোপাল হেরে যান। এরপর থেকে তাঁর অনুসারীরা অনেকটা চাপে পড়েন।

কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তবে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনসুর আলী খানের কাছে তিনি পরাজিত হন। মুনসুর ছিলেন সাবেক সাংসদ ননীগোপাল মণ্ডলের সমর্থনপুষ্ট।

উপজেলা নির্বাচনে আবুল হোসেনের পরাজয়ে মাঠের রাজনীতিতে আগের চেয়ে সক্রিয় হওয়ায় সুযোগ পান ননীগোপালের অনুসারীরা। অন্যদিকে আবুল হোসেনের অনুসারীরাও চাইছেন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে। আগামী পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে সক্রিয় দুই পক্ষই।

এদিকে নির্বাচনে একক প্রার্থী নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন বিএনপি। দাকোপ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. আবুল খয়ের খাঁন পৌরসভা নির্বাচনে পৌরমেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন। চালনা পৌরসভা ঘোষণা হলে ২০০৪ সালে তৎকালীন সময়ে পৌর প্রশাসক হিসেবে ১৩ মাস দায়িত্ব পালন করেন তিনি ।

বর্তমান সরকারের আমলে সুষ্ঠুভাবে কোনো নির্বাচন হয়নি বলে অভিযোগ তুলে আবুল খয়ের খাঁন খুলনা গেজেটকে বলেন, বিএনপি থেকে যাঁরাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তিনি আরও জানান, এরপরও যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়, তাহলে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক পৌরমেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল পৌরসভার উন্নয়নে তাঁর অবদান রয়েছে উল্লেখ করে খুলনা গেজেটকে বলেন, দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সভা-সমাবেশ করছি। তিনি জানান, দলের টিকিট পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে চালনা পৌরসভার মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, গত নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করার মতো ভোট পেয়ে জয়লাভ করি। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। গেলবার নির্বাচিত হয়ে পৌরবাসির জন্য রাস্তা-ঘাট নির্মাণসহ উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনীয় কাজ করে যাচ্ছি, পাশাপাশি ভোটারদের কাছে নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহবান জানাচ্ছি। তবে এবারও নৌকা প্রতীক পেলে বিপুল ভোটে জয়ী হবো। কেননা ভোটারদের কাছে আমি জনপ্রিয়।

 

খুলনা গেজেট / এ হোসেন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!