খুলনার চালনা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগের সনত কুমার বিশ্বাস, বিএনপির মো. আবুল খয়ের খাঁন ও স্বতন্ত্র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের মধ্যে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। পৌরসভার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই সময়ে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খান পৌর প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালের নির্বাচনে সাবেক মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের কাছে পরাজিত হন বর্তমান মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস। সে বার এই তিন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেন। ২০১৫ সালের নির্বাচনে এর উল্টোটা হয়। সনত বিশ্বাস আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে বিজয়ী হন এবং বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শেখ আব্দুল মান্নান তৃতীয় হন। ওই নির্বাচনে অচিন্ত্য মণ্ডল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মো. জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, ‘তিনজনই হেভিওয়েট প্রার্থী। এবার দলীয় প্রতীক থাকায় ত্রিমুখী লড়াই জমবে। শান্তিপূর্ণ ভোটের আশা করছি। এখনো সিদ্ধান্ত নিইনি, কাকে ভোট দেব।’ একই এলাকার ভোটার মো. আবদুর রহিম বলেন, সেয়ানে সেয়ানে লড়াই হবে। কারণ, এই তিন ব্যক্তিই মেয়রের চেয়ারে বসেছেন।
বৌমার গাছতলা এলাকার ভোটার লতিফা বেগম বলেন, ‘তিন প্রার্থীই দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করছেন। উড়ে এসে কেউ প্রার্থী হননি।’
অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী। তবে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সর্মথকরা প্রভাব খাটিয়ে আমার কর্মী-সর্মথকদের প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। এমন কি হুমকি ও নির্বাচনের মাঠ থেকে তাড়িয়ে বের করে দিচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী সনত কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘দলের বিদ্রোহী একটি অংশ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে পরোক্ষভাবে কাজ করছে। নির্বাচনের পরিবেশ অনেকটা ভাল। স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, পরাজয় নিশ্চিত বুঝে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমন নানা অভিযোগ করে থাকতে পারেন।’ তবে জয়ের ব্যাপারে সনত বিশ্বাস শতভাগ আশাবাদী।
বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল খয়ের খাঁন অসুস্থ থাকায় তাঁর নির্বাচনী এজেন্ট মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, ‘নৌকার কর্মী-সমর্থকরা বিভিন্ন সময় প্রচার-প্রচারণায় বাধা হয়ে দাড়াচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, বিএনপি সেটা প্রত্যাশা করে।’
এদিকে প্রথমবারের মতো পৌরমেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন গৌতম কুমার রায়। তিনি বলেন, অধিকাংশ সময় একাই প্রচারণার কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে দুই একজন কর্মী-ভক্ত নিয়ে মাঠে নামছেন।
দাকোপ উপজেলা সদরে পৌরসভাটি অবস্থিত। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন থেকে দাকোপ উপজেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়। সেখান থেকে এর একাংশে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন সাবেক সাংসদ ননীগোপাল মণ্ডল ও অপর অংশে নেতৃত্ব দেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন। অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল সাবেক সাংসদ ননী গোপাল মণ্ডলের অনুসারী। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুনসুর আলী খানের কাছে পরাজিত হন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী শেখ আবুল হোসেন। সেবারের নির্বাচনে মুনসুর আলী খান ছিলেন ননীগোপাল মণ্ডলের সমর্থনপুষ্ট।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এবারের পৌর নির্বাচনে সাবেক সাংসদ ননীগোপাল মণ্ডল কোনো প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করছেন না। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খানও প্রত্যক্ষভাবে কোনো প্রার্থীর জন্য মাঠে নামেনি। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেন নৌকা প্রতীকের জন্য ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন।
নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহামুদ হোসেন খুলনা গেজেটকে বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ এবং ২৬ তারিখে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট প্রদানের বিষয়ে ভোটারদের হাতে-কলমে শিখানো হবে। তিনি জানান, মোট ভোটার সংখ্যা ১২ হাজার ১০০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ হাজার ৮৬৩ ও নারী ৬ হাজার ২৩৭ জন ভোটার আছে।
খুলনা গেজেট / এমএম