যশোরে পানিতে ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন। ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সোমবার সকাল থেকে শুরু হওয়া দু’দিনের বৃষ্টির পানিতে মাঠে কেটে রাখা বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এদিন সকাল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যশোরে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, যশোরের আট উপজেলা এলাকায় এবার এক লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সারাদেশে গড়ে হেক্টরে ৫.৮২ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হলেই বাম্পার ফলন ধরা হয়। যশোরে সেখানে গড়ে হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হওয়ার আশা করছে কৃষি কর্মকর্তারা। এ ফলনে কৃষকের মুখে ব্যাপক হাসি ফুটলেও এখন তাদের হাসি ম্লান হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় অশনি তাদের হাসি ও স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, যশোর জেলায় বোরো ধান ইতিমধ্যে কৃষকরা মাঠ থেকে ৬০ ভাগ কেটে বাড়ি তুলতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ৪০ ভাগ ধান এখনও মাঠে রয়েছে। এরমধ্যে অর্ধেক ধান কেটে মাঠে রাখা রয়েছে ও বাকি ধান শ্রমিক সঙ্কটে কাটতে পারেনি কৃষক। জেলার প্রায় অর্ধলাখ হেক্টর জমির মাঠে এ ধান রয়েছে। যা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছে গোটা জেলার কৃষক। ঘূর্ণিঝড় আশনির কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে সোমবার থেকে সারাদেশে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। যা মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ওইদিন সকাল থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জেলায় মোট ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে যশোর আবহাওয়া অফিস। এ বৃষ্টির পানিতেই কৃষকের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের স্বপ্নের সোনালী ধান ভাসতে শুরু করেছে। সকাল থেকে এ বৃষ্টিপাতে ধান ক্ষেতে পানি জমতে শুরু করে। এতে ভেসে ওঠে মাঠে কেটে রাখা ধান। যা আগামী দু’একদিনের মধ্যে কৃষক ঘরে তুলতে পারতো।
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এভাবে বৃষ্টিপাত হলে কৃষকের খুব বেশি ক্ষতি হবে না। শুধুমাত্র ক্ষতি হবে যারা ধান কেটে মাঠে ফেলে রেখেছে। কাটা ধানে পানি জমলেই গোটা ধান নষ্ট হয়ে যাবে। আর যারা এখনও ধান কাটেননি, তারা কয়েকদিন দেরি করে কাটলে সমস্যা হবে না। ধান গাছ দাড়িয়ে থাকলে বৃষ্টিতে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে গাছ শুয়ে পড়লে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব কারণে আসন্ন ঘূর্ণিঝড় নিয়ে উভয়মুখি সঙ্কটে রয়েছে কৃষক। এদিন তারা বৃষ্টিতে ভিজেই মাঠ থেকে তাদের কাটা ধান ঘরে তোলার চেষ্টা চালিয়েছেন।
এদিকে, বর্তমানে যশোরাঞ্চলে ধানকাটা শ্রমিকের চরম সঙ্কট চলছে। তাদের হাজিরার মূল্য হাজার টাকা। তারপরও এসব শ্রমিক পাচ্ছে না ক্ষেত মালিকরা। আগে থেকে বায়না করে বুকিং দিয়েও তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে গোটা জেলার মাঠে এখনও ৪০ ভাগ পাকা ধান রয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে মণিরামপুর উপজেলার হানুয়ার গ্রামের মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, তার চার বিঘা জমির ধান কেটে মাঠে রাখা রয়েছে। কাটার সাথে সাথেই ধান ঘরে তোলা যায় না। দু’তিন দিন মাঠে রাখতে হয়। দু’দিন আগে ধান কাটলেও এখন তিনি শ্রমিকের অভাবে ঘরে তুলতে পারছেন না। এ কারণে নিজেই বৃষ্টিতে ভিজে ধান ঘরে তুলছেন।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে যশোরে কৃষকের মাঠের ৬০ ভাগ বোরো ধান ঘরে উঠে গেছে। বাকি চল্লিশ ভাগ এখনও মাঠে রয়ে গেছে। যার পরিমান অর্ধলাখ হেক্টরের কিছু কম হবে। আগামী সাত দিন সময় পেলে মাঠের পুরো ধানই ঘরে উঠে যাবে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বৃষ্টিপাতে কৃষকের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। শ্রমিক সঙ্কটের কারণে এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। তবে কৃষকরা এ প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই