খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ
সরকারি সহায়তা কামনা

ঘুরে দাঁড়াতে চায় চৌগাছার পঙ্গু মিন্টু

মহিদুল ইসলাম, চৌগাছা

স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একটি ভাল চাকরী করে কৃষক পিতাকে বিশ্রাম দিবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস তীরে তরী ভিড়ার আগেই সব শেষ। মরণব্যাধী ক্যান্সার সব স্বপ্নকে তছনছ করে দিয়েছে। বর্তমানে ১৬ লাখ টাকার দেনা নিয়ে নির্ঘুম রাত যায় আর আসে।

এই পরিস্থিতিতে সরকারী সহযোগীতা পেলে ঘুরে দাঁড়াতে পারতো বলে মনে করছেন মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা মেধাবী ছাত্র পঙ্গু জহিরুল ইসলাম মিন্টু (২৮)। যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের কিসমতখাপুর গ্রামের কৃষক জহর আলী ও হাসিনা বেগমের ছেলে জহিরুল ইসলাম মিন্টু। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে ছোট আর সবার ছোট বোন সীমা আক্তার অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী।

সরেজমিন কিসমতখাপুর গ্রামে জহিরুল ইসলামের বাড়িতে যেয়ে দেখা যায় বাড়ির আঙিনায় একটি চেয়ারে বসে মা হাসিনা বেগমের সাথে গল্প করছে। এ সময় কথা হয় মেধাবী ছাত্র মিন্টুর সাথে। তিনি জানান, ২০১৫ সালে যশোর এমএম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভগের ৩য় বর্ষের ছাত্র। ওই সালের ১৩ আগষ্ঠ হঠাৎ ডান পায়ে ব্যাথা অনুভব করি। কলেজ হোষ্টেল থেকে বন্ধুদের সাথে যায় সদর হাসপাতালে। চিকিৎসক কিছু পরীক্ষা করতে বলেন। পরীক্ষা করে রিপোর্ট দেখে ডাঃ বলেন আমি বণ ক্যান্সারে আক্রান্ত। আরও নিশ্চিত হতে খুলনায় যেয়ে পুনরায় পরীক্ষা করা হলে একই রিপোর্ট আসে। এরপর ঢাকা পঙ্গু হাসপাতাল, আনোয়ার খান হাসপাতাল, পপুলার ও সর্বশেষ নর্দান ইউনির্ভাসিটি হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসা গ্রহণ করি। কিন্তু কোন উন্নতি হয় না।

একপর্যায়ে ওই সালের ১৬ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নায় সিএমসি হাসপাতালে যেয়ে ভর্তি হই। সিএমসি হাসপাতালে একটানা ১৩ মাস ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করি। কিছুটা সুস্থ্য হলে বাড়িতে আসি। বাড়িতে থেকেই নির্ধারিত তারিখে চেন্নায় যেয়ে ডাক্তার দেখাতে থাকি। এ ভাবেই পার হয় দীর্ঘ ৬ বছর। ২০২০ সালে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পুনরায় যাই চেন্নায়ের ওই হাসপাতালে। চিকিৎসক দীর্ঘ সময় ধরে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে বলেন, আক্রান্ত পা কেটে ফেলতে হবে, দেরি করলে ক্ষতি হবে। কোন কাল বিলম্ব না করেই ওই সালের ১ নভেম্বর অপারেশন করে ডান পা শরীর থেকে কেটে ফেলা হয়। কিছুটা সুস্থ্য হওয়ার পর আবারও ফিরে আসি নিজ ঠিকানায়। বর্তমানে তিনি ভাল আছেন, তবে চেন্নায় হাসপাতালের ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান।

মিন্টু আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে পুনরায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দিবে, পরীক্ষা দিয়ে শিক্ষা জীবনটা শেষ করতে চাই। পঙ্গু জীবন নিয়ে পরিবারে বোঝা হতে চাইনা, তাই কিছুটা সুস্থ্য হওয়ার পর বাড়িতেই ১৪০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতাম কিন্তু করোনার কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে কিছু গরু, ছাগল পালন করছি পাশাপাশি মুরগী ও হাঁসের খামার তৈরী করি কিন্তু অর্থ অভাবে সেগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার থেকে যদি কোন সহযোগীতা পেতাম তাহলে কষ্টের জীবনটাকে হয়ত নতুন ভাবে সাজাতে পারতাম। এই অবস্থায় অসহায় পরিবারটি সরকারের সহযোগীতা প্রার্থনা করেছেন।

মেধাবী ছাত্র মিন্টুর কৃষক পিতা জহর আলী বলেন, ৩ ছেলে আর ১ মেয়ে তার। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুবই সুখী পরিবার ছিল। কিন্তু এক কালবৈশাখী ঝড় তার সাজানো সংসারকে এলোমেলো করে দিয়েছে। বড় ছেলে নজরুল ইসলাম কমার্স থেকে এমএ পাশ করে। বর্তমানে একটি কোম্পানীতে চাকুরী করে। মেঝে ছেলে মন্টু মিয়া ম্যানেজমেন্টে এমএ পাশ করে সে একটি কোম্পানীতে চাকুরী করে। ছোট ছেলে মিন্টু রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়া অবস্থায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর একমাত্র মেয়ে সিমা খাতুন চৌগাছা মৃধাপাড়া মহিলা কলেজে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী।

অশ্রুসজল কন্ঠে তিনি আরও বলেন, সারা জীবনই কষ্ট করেছি, যখনই সুখ নামক সোনার হরিণ হাতের নাগালে ঠিক তখনই ছোট ছেলের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তার চিকিৎসায় এ পর্যন্ত ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। মাঠে কিছু ফসলি জমি ছিল তার বেশির ভাগই বিক্রি করে দিয়েছি। জমি বিক্রি ও ছেলেরা যা রোজগার করে সেই টাকায় দেনা শোধ করছি। এখনও ১৬ লাখ টাকা দেনা আছি। এই বৃদ্ধ বয়সে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। মাঠের আয় আর বড় দুই ছেলের রোজগারের টাকায় এখন শেষ ভরসা। দেনা পরিশোধে বিকল্প কোন পথ নেই তাই সকলেই দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!