দলের দর্শন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, ১৯ দফা কর্মসূচী এবং সাম্প্রতিক সময়ে ৯ দফা কর্মসূচী কোনোটা নিয়েই বিরোধ নেই। বিরোধ মূলত নেতৃত্ব এবং স্থানীয় কমিটি দুটোটে আধিপত্য নিয়ে।
গত ২২ অক্টোবর নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরের গণসমাবেশ খুলনায় বিএনপির রাজনীতিতে বিরাজমান দু’ ধারাকে এক করতে পারেনি। এর আগে নবম সংসদ নির্বাচনের পূর্বে এখানে দু ধারার রাজনীতি ছিল প্রকাশ্যে।
২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া খুলনা ২ ( সদর ও সোনাডাঙা) আসনে থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে তিনি খুলনার এ আসন ছেড়ে দেন। দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আজগর লবি উপ-নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সে সময়ে নগর কমিটিকে পাস কাটিয়ে দলের সংসদ সদস্য হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে দলীয় প্রধানের আশীর্বাদে নগর কমিটির আহবায়ক মনোনীত হন তিনি।
পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে নগর কমিটিতে খুলনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য এম. নুরুল ইসলাম সভাপতি ও নজরুল ইসলাম মঞ্জু সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল থেকে নগরে বিএনপির রাজনীতিতে নতুন বলয় তৈরি করেন। অষ্টম সংসদের হুইপ ও দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মোঃ আশরাফ হোসেন এ অংশকে সমর্থন জানান। কেন্দ্র ঘোষিত আলী আজগর লবীর কমিটির সাথে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শেখ রাজ্জাক আলী ও তৎকালীন মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমান। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে নগর বিএনপির সম্মেলনে নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতি ও মনিরুজ্জামান মনি সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েও এক যুগ কাল এ কমিটি বহাল ছিল। গেল বছরের ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্র এ কমিটি বাতিল করে জেলা ও নগরে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। নগরের নয়া কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব হিসেবে শফিকুল ইসলাম তুহিন এবং জেলা কমিটিতে আমির এজাজ খান আহবায়ক ও মনিরুল হাসান বাপ্পিকে সদস্য সচিব মনোনীত করা হয়। স্বাভাবিকভাবে মঞ্জু – মনি নগরের নেতৃত্ব হারান। গেল বছরের ৯ ডিসেম্বর স্থানীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দল ঘোষিত কমিটি বাতিল করে তার নেতৃত্বের কমিটিকে পুনঃবহালের পুনঃবিবেচনা করার দাবি তোলেন। সংবাদ সম্মেলনকে দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিযোগ এনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এরপর মঞ্জু-মনি নেতৃত্বাধীন অংশ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবস পালনের বড় ধরনের শোডাউন করে। মঞ্জু নেপথ্যে থেকে হোটেল টাইগার গার্ডেনে নগর বিএনপির সাবেক নেতৃবৃন্দের ব্যানারে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন।
২২ অক্টোবর নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে দলে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর প্রত্যাবর্তনের প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তিনি ২০ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে তার অনুসারীদের গণসমাবেশে যোগদানে আহবানও জানান। মঞ্জু-মনির নেতৃত্বে একটি বড় মিছিল সমাবেশে যোগ দেয়। তাকে মঞ্চে আসন গ্রহণ করানোর জন্য আহবান জানানো হয়নি। এতে তার অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়। সমাবেশের আগে এবং পরে তিনি মরহুম কওসার জমাদ্দার, আজিজুল হাসান দুলু, এস এম কামালের বাসভবনে যেয়ে স্বজনদের সান্তনা দেন। পাশাপাশি সমাবেশে আগত প্রতিপক্ষের আঘাতে আহতদের দেখতে হাসপাতালেও যান। নগর নেতা শফিকুল আলম মনাও হাসপাতালে আহতদের পাশে কিছু সময় কাটান।
প্রসঙ্গক্রমে সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেছেন, তিনি একদফার আন্দোলনে অংশ নেবেন। পাল্টা কোনো কর্মসূচী দেবেন না। বলেছেন, বিএনপির রাজনীতিতে আছেন এবং থাকবেন। তবে গণমাধ্যমে তিনি সরব আছেন। যদিও বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল আলম তুহিন বলেন, দলের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় তারা খুলনায় বিএনপির রাজনীতি এবং কর্মসূচী জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। প্রতিপক্ষের তৎপরতাকে তিনি অস্বীকার করেন।