খুলনা, বাংলাদেশ | ১৭ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩০ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  ৫২ বছরে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড যশোরে
  আপিল করবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ছুটি থাকছে স্কুল-মাদ্রাসা
  হিট স্ট্রোকে এক সপ্তাহে ১০ জনের মৃত্যু : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

খুলনা করোনা হাসপাতাল : নোংরা-দুর্গন্ধ, পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন রোগীর স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় করোনা রোগীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। খুলনা মেডিকেলে করোনা ওয়ার্ডে সর্বত্র নোংরা আবর্জনা। বাথরুম পরিষ্কার হয় না ঠিকমত। নিরুপায় হয়েই রোগীর স্বজনরাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিচ্ছেন। বেড পেতেও দিতে হচ্ছে টাকা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, ‘ওয়ার্ডের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নেই, আসে না পরিচ্ছন্ন কর্মী। দায়িত্বরত নার্সদেরকে অবহিত করেও লাভ হচ্ছে না।’

শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেঝেতে বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ভরা। নিচ তলায় এক পাশে ময়লা স্তুপ হয়ে আছে। বাথরুম থেকে আসছে দুর্গন্ধ । রোগীর স্বজনরা নাকে রোমাল দিয়ে বসে আছেন। দ্বিতীয় তলায় করোনা এইচডিইউ ওয়ার্ডে বারান্দায় একটি বেডে রোগীর স্বজন টাকার বিনিময় বেড পেলেও, পায়নি বেডসিট ও অন্যান্য জিনিসপত্র। বেডে নিজেরাই ‘কাথা’ বিছিয়ে নিচ্ছেন।

এই বেডে করোনায় আক্রান্ত সালাম শেখ (৫০) শনিবার সকালে ভর্তি হন। ভর্তি হলেও বেড পাচ্ছিলেন না। অনেক আকুতি-মিনতু করলেও মন গলেনি। তার সাথে ছিলেন ভাগ্নী ইতি। তিনি বলেন, “ভর্তি হওয়ার পর থেকে বেডের জন্য অনেক ছোটাছুটি করি। কেউ বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় পরিচয়দানকারী এসে বলেন, বারান্দায় খালি বেড পড়ে আছে। টাকা দিলে আমি ব্যবস্থা করে দিতে পারবো। পরে তাকে ১ শ’ টাকা দিলে তিনি বেড দেন। কিন্তু বেডে নেই কোন আনুষঙ্গিক জিনিস পত্র। বেডসিট না পেয়ে কাথা বিছিয়ে নিছি।” ওই সময় ওয়ার্ড বয় পরিচয়দানকারী ওই যুবককে দেখিয়ে দিয়ে ইতি বলেন, ওই তো, ওই লোক টাকা নিছে। পরে জানা গেছে, ওই ওয়ার্ডবয় পরিচয়দানকারীর নাম এজাজুল হাসান জনি। গত এক বছর আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে করোনা হাসপাতালে ডিউটি করছেন।

দ্বিতীয় তলায় রেডজোনে ভর্তি আছেন আরেক রোগী তোফাজ্জেল হোসেন (৬০)। গত ৩০ মে করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ভর্তি হন। তার স্ত্রী জয়নাব আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ওয়ার্ডের মধ্যে ময়লা আবর্জনা গিজগিজ করছে। এখানকার দায়িত্বে থাকা নার্সকে অবহিত করি, কাউকে দিয়ে ওয়ার্ডটি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু কাজ হয়নি। নিজেই ১০০ টাকা দিতে ঝাটা কিনে এনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমে পড়েছি।

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য খাবার দাবার ঠিক মতো পাচ্ছেন। কিন্তু হাসপাতাল এমন নোংরা ও বাথরুম থেকে দুর্গন্ধ আসলে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই এখানে যারা আছেন, সবাই নিজেরাই সবকিছু পরিস্কার করে নিচ্ছেন। নিরুপায় হয়েই আমাদেরই বাথরুম পরিষ্কার করতে হচ্ছে।’

ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের একই ভাষ্য। তারা আক্ষেপ করে বলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হলেও কেউ যেনো এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে না আসে। তার চেয়ে বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নেওয়া ভালো। রোগীর সেবা করতে গিয়ে নিজেরাই এখন অসুস্থ হয়ে পড়ছি। বাথরুম থেকে দুর্গন্ধ আসে, না পেরে নিজেরাই সুইপারের কাজে নেমে গেছি।’

এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যক্ষ ডা: মো: রবিউল হাসান বলেন, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে। আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি, সবকিছু গুছিয়ে নিতে একটু সময় লাগছে। কেউ যদি টাকার বিনিময়ে বেড দিয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমি এখানে আসার পর জনির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খুমেক হাসপাতালে সংলগ্ন করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে ফোকালপার্সন ও আরএমও ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, করোনা হাসপাতালটি ১০০ বেডের। বর্তমানে তার চেয়ে বেশি রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সেই তুলনায় চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারি ওই ইউনিটে সংকট রয়েছে। রোববার থেকে চতুর্থ শ্রেনী কর্মচারি আরও ১৪ জনকে করোনা ইউনিটে কাজ শুরু করবেন। আশাকরি এরপর থেকে এই ধরনের কোন অভিযোগ আসবে না।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!