গণসঙ্গীত সম্রাট ফকির আলমগীরের কন্ঠ থেমে গেছে বছর খানেক আগে, করোনা নামক মরণ ব্যাধিতে। পিরোজপুরের গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা যুবক যেন আলমগীরের সেই সুর বাঁচিয়ে রেখেছে। খুলনা নগরের ফুটপথে দাঁড়িয়ে আঁড় বাঁশিতে সুর তুলেছে ‘ও ছকিনা গেছস কীনা ভুইলা আমারে’। সুর শোনার ভক্ত শ্রোতারা তাকে ঘিরে রাখে গভীর রাত অবধি।
মিরাজ তালুকদার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপাজেলার বৈশাখালী গ্রামের যুবক। বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে এসেছে খুলনা নগরীতে। ৩০ বছর বয়সী এ যুবকের ঠিকানা এখন রেল স্টেশন। পেশায় রিক্সা চালক। সকাল ৮ থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে তার জীবিকা নির্বাহ হয়। রিক্সা ভাড়া মালিককে দিতে হয় গুনে গুনে ৮০ টাকা। প্রতিদিনের সঞ্চয় গড়ে ৪০০ টাকার ওপরে। জমানো টাকা বাবা মায়ের কাছে গ্রামের বাড়িতে পাঠায়। এ নগরীর বাসিন্দা হয়েছে ৫ মাস আগে। এরমধ্যে পথঘাট চিনেছে। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যা অর্জন তার। নিজের নামটুকু লিখতে পারে। গান লিখতে বা পড়তে পারে না। মেধা দিয়ে ধরে রেখেছে। ১০ বছর আগে থেকে শিখেছে বাঁশি বাজানো।
ছকিনা নামের ১৮ বছর বয়সী যুবতীকে বিয়ে করে ৩ বছর আগে। নানা কারণে ছকিনা তাকে ছেড়ে গেছে। আজও ছকিনার মায়া ছাড়তে পারেনি গ্রামের এ যুবক।
আলাপকালে বলতে থাকে দিনরাতের সবসময়ে ছকিনার ছবি ভাসে তার চোখের সামনে। তাকে ছেড়ে যাওয়া গৃৃহবধুকে স্মরণ করতে ফকির আলমগীরের এ গানটি আঁড় বাঁশিতে ধরে রেখেছে। ছকিনার কানে এ সুর পৌঁছায় না।
বাঁশি বাদক মিরাজ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না। তার এ সুরের ভাষ্য বৈশাখালী গ্রাম পর্যন্ত পৌছায় না। এ কষ্ঠ বুকে নিয়ে বেড়ায় দিনরাত। উল্লিখিত গানটির পাশাপাশি আরও চারটি গান ‘আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি’, ‘আমার সোনার ময়না পাখি’, ‘ বন্ধ যখন বউ লইয়া’ ও ‘আম্মা আপনার হাতে ধরি পায়ে পড়ি’ গানগুলোর কলি মেধায় ধরে রেখেছে। আর এ গানগুলো গেয়ে যেমন দর্শকদের মন জয় করে তেমনি নিজের মনের যন্ত্রণাও থামায়।