এবারের কোরবানীর ঈদে খামার থেকেই ৫০০ টাকা কেজি দরে কোরবানীর গরু বিক্রির উদ্যোগে নিয়েছেন এক খামারী। বিক্রি শুরু হয়েছে। নগরীর আড়ংঘাটা থানাধীন তেলিগাতী দক্ষিণপাড়ায় অবস্থিত ‘ফাইজার’ নামে একটি গরুর খামারে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ পদ্ধতিতে ক্রেতাকে প্রথমে নগদ ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে গরু ক্রয়ের বুকিং দিতে হবে। বুকিংকৃত পশুর যাবতীয় দায়ভার খামারের মালিক বহন করবে। কোরবানীর ঈদের ২/১ দিন আগে খামার থেকে ওজন দিয়ে গরু বুঝে নিতে হবে।
ব্যতিক্রমী এই আয়োজনের উদ্যোক্তা আড়ংঘাটার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান। গত ৩ বছর ধরে এভাবেই কোরবানির গরু বিক্রি করছেন। এই দাম মাংস বিক্রেতাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। তার খামারে বর্তমানে দেশীয় প্রজাতির ৯৩ টি গরু রয়েছে। গরু সর্বনিম্ন ওজন ২০০ কেজি থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ কেজি পর্যন্ত।
খামারের মালিক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, মুনাফার আশায় নয় অনেকটা সেবার মানসিকতা নিয়ে খামার পরিচালনা করছি। ঈদুল ফিতরের পর থেকেই বুকিং কার্যক্রম শুরু হয়। বুকিংকৃত গরুর যাবতীয় দায়ভার (যেমন চিকিৎসা খরচ, খাওয়া বাবদ খরচসহ যাবতীয় খরচ) নিজে বহন করে থাকি। গত তিন বছর থেকে এই পদ্ধতিতে কোরবানির গরু বিক্রি করে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। গত বছর এ পদ্ধতিতে গরু বিক্রয়ের ঘোষণা দেওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খামারের সকল গরুর বুকিং সম্পন্ন হয়। পরবর্তীতে গরু কিনতে এসে শত শত ক্রেতা ফিরে গেছেন।
তিনি বলেন, গত ৬ বছর ধরে আমি এ খামারটি পরিচালনা করছি। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের পর হাট থেকে গরুর বাচ্চা ক্রয় করে এনে সেগুলোর পরিচর্যা শুরু করি। গরু গুলোর খাওয়া দাওয়া এবং পরিচর্যার জন্য ১৬ জন লোক রয়েছে। সম্পূর্ণ অর্গানিক উপায়ে গরু গুলোকে খাওয়ানো হয়। নিজস্ব জমিতে লাগানো ঘাস, গমের ভূষি ও কুড়া মিক্সিং করে বস্তায় ভরে রাখা হয়। এবং এই মিক্সিং খাবারগুলো গরুগুলোকে টাইম টু টাইম খাওয়ানো হয়। খামারে গরু মোটাতাজাকরণের কোন কেমিক্যাল বা ঔষধ ব্যবহার করা হয় না।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সরেজমিনে খামারটিতে গিয়ে দেখা যায় খামারে কাজে নিয়োগকৃত লোকগুলোর কয়েকজন গরুগুলোর পরিচর্যা করছেন। কেউ খাবারের মিক্সিং তৈরি করছেন। কেউ খাবার দিচ্ছেন আবার কেউবা খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করছেন। প্রচন্ড তাপদাহে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংখ্যক সিলিং ফ্যান ঝোলানো হয়েছে। অনেকেই গরু দেখতে খামারে আসছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ৩০ হাজার টাকা বুকিং দিয়ে একজন ক্রেতাকে গরু ক্রয় নিশ্চিত করতে হবে। বুকিং দেওয়ার পর কোরবানির ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত খামারে গরু রাখার নিশ্চয়তা রয়েছে। ক্রেতার ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো দিন ডিজিটাল ব্রিজ স্কেলে গরু ওজন দিয়ে ৫’শ টাকা কেজি দরে মূল্য পরিশোধ করার পর ক্রেত গরু নিয়ে যেতে পারবেন। বুকিংকৃত গরু ক্রেতা ঈদের ২/১ দিন পূর্বে অথবা ঈদের দিন সকালে কোরবানির উদ্দেশ্যে খামার থেকে নিয়ে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে তাকে কোন বাড়তি খরচ বহন করতে হবে না। খুলনা শহরের ভেতর নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজ খরচে খামারের মালিক গরু ডেলিভারি করবেন। এছাড়াও কোন কারনে বুকিংকৃত গরু মারা গেলে সেক্ষেত্রে ক্রেতা তার বুকিংকৃত সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাওয়ার শতভাগ নিশ্চয়তা রয়েছে।
খুলনা গেজেট/এইচ