খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের জয়দেবপুরে মালবাহী ট্রেনে যাত্রীবাহী ট্রেনের ধাক্কা, আহত অন্তত ৫০
  ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধ করে দিলো তুরস্ক
উদ্দেশ্য আলোকিত মানুষ তৈরী করা

খুলনাঞ্চলে বই প্রেমিকদের দুই দশক ধরে সেবা দিচ্ছে ‘ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি’ (ভিডিও)

একরামুল হোসেন লিপু

প্রায় দুই দশক ধরে খুলনাঞ্চলে ‘ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি’ বই প্রেমিকদের নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করে যাচ্ছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র কর্তৃক দেশব্যাপী ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৯ সালে দেশের ৪ টি বড় শহরে কার্যক্রম শুরু করলেও খুলনাঞ্চলে এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৩ সাল থেকে। বর্তমানে এ লাইব্রেরি খুলনা ইউনিটের পাঠক সংখ্যা সাড়ে ১৩ হাজার। খুলনা শহরের বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজের হোস্টেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের সামনে, আবাসিক এলাকা, বাজারসহ ৪৪ টি গুরুত্বপূর্ণ স্পটে গিয়ে আধাঘণ্টা থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত সদস্যদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়া করে থাকে। মঙ্গলবার, সাপ্তাহিক এবং সরকারি ছুটি ছাড়া অন্যান্য দিনগুলো ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি খুলনা ইউনিট তাদের সেবা প্রদান অব্যাহত রাখে।

সপ্তাহের কোন দিনে কটার সময় কোন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরীর গাড়ি যাবে, তা আগে থেকে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি খুলনা ইউনিটের বিভিন্ন ধরনের প্রায় ২০ হাজার বই রয়েছে। লাইব্রেরিতে শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী পাঠকদের সব ধরনের বই সংগ্রহে রয়েছে বলে খুলনা গেজেটকে বলেন, খুলনা ইউনিটের লাইব্রেরি কর্মকর্তা ত্রিদীপ অধিকারী।

তিনি বলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে সরকারি গণগ্রন্থাগার কর্তৃক এটি পরিচালিত হয়।

ত্রিদীপ অধিকারী আরও বলেন, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ টি স্পটে ২ শ থেকে আড়াই ‘শ পাঠককে এবং সপ্তাহে ৪৪ টি স্পটে ৮ ‘শ থেকে ৯ ‘শ পাঠককে আমরা বই দেওয়া-নেওয়া করে থাকি। তিনি বলেন, খুলনাঞ্চলে দীর্ঘদিন যাবত ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি মানুষকে বই পড়তে উৎসাহ প্রদান করে চলেছে। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির মাধ্যমে মানুষকে শুধু বই পড়তে নয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করে থাকে। আমরা মনে করি শিক্ষা এবং সাংস্কৃতির মাধ্যমে সুন্দর আলোকিত মানুষ গড়ে তোলা সম্ভব। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এমনই একটা স্বপ্ন দেখেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি তৈরী করেছেন এবং মানুষকে খুব সহজে বই দিয়ে চলেছেন।

পাঠকেরা ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারবেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা আবার ফেরত দিতে পারবেন। নতুন নতুন পাঠক তৈরি করে বইপ্রেমীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমার পেশাটাকে উপভোগ করি এবং নিজেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। দৃষ্টিনন্দন এই গাড়িটি শহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে দেখলে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়।

ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরী থেকে বই নিতে হলে প্রথমে সদস্য হতে হবে। গাড়িতে কর্তব্যরত ব্যক্তির সংগে কথা বলে ১০০ টাকা ফি দিয়ে সাধারণ সদস্য হতে পারবেন। এরা অনধিক ২০০ টাকা মূল্যের একটি বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারবেন। বিশেষ সদস্য হতে ২০০ টাকা ফি দিতে হবে। এরা অনধিক ৫০০ টাকা মূল্যের একটি বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারবেন। অগ্রবর্তী সদস্য হতে ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়। এরা অনধিক ৭০০ টাকা মূল্যের একটি বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারবেন। বিশেষ অগ্রবর্তী সদস্য হতে ৮০০ টাকা ফি দিতে হয়। এরা যে কোন মূল্যের একটি বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারবেন। যে কোন বয়সের যে কোন পেশার মানুষ ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সদস্য হতে পারবেন।

একজন লাইব্রেরি কর্মকর্তা, একজন অফিস সহকারি এবং গাড়িটির চালকসহ মোট ৩ জন ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির খুলনার ইউনিটটি পরিচালনা করে থাকেন।

এদিকে জনগণের মধ্যে পাঠাভ্যাস বাড়াতে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালু রাখতে সরকার সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের একটি সূত্র জানায়।

তারা জানান, আমাদের দেশের ভালো লাইব্রেরি-ব্যবস্থা আজ প্রায় নেই বললেই চলে। লাইব্রেরিগুলো সংখ্যায় দীন, এদের ব্যবস্থাপনা দুর্বল, বইয়ের মান দুঃখজনক এবং পরিবেশ বিমর্ষ। ভালো বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ পাঠকদের আজ নেই বললেই চলে। এমন অবস্থা চলতে থাকলে জাতির মননশীলতা ও জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি কী করে মজবুত হবে? বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আমরা তাই দেশের প্রতিটি বাড়ির দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। দেশভিত্তিক উৎকর্ষ কার্যক্রম ও পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সারা দেশে গড়ে তোলা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি।

ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির দৃষ্টিনন্দন গাড়িগুলো সাতটি আলাদা আকারের- এগুলোতে থাকে যথাক্রমে ৪০০০, ৬০০০, ৮০০০, ১১০০০ ও ১৭০০০ বই। প্রতিটি লাইব্রেরি প্রতি সপ্তাহে শহর ও গ্রাম-এলাকার গড়ে ৪০টি এলাকায় গিয়ে আধঘণ্টা থেকে দু’ঘণ্টা পর্যন্ত সদস্যদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়া করে। সপ্তাহের কোন দিনে ক’টার সময় কোন গাড়ি কোন এলাকায় কোথায় যাবে তা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।

১৯৯৯ সালে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি প্রথমে চালু হয় দেশের চারটি বড় শহরে। এরপর এ লাইব্রেরি ২০২২ সালে দেশের ৬৪টি জেলার মোট ৩০০ টি উপজেলার ৩২০০ লোকালয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, অর্থাৎ ৩২০০ ছোট লাইব্রেরির কাজ করছে। এই লাইব্রেরিগুলোর বর্তমান সদস্যসংখ্যা তিন লক্ষ তিরিশ হাজার।

খুলনা গেজেট / আ হ আ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!