‘কার্যকর’ বিনিয়োগকারী না পাওয়ায় পিপিপি তালিকা থেকে বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর প্রকল্পটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি-অংশীদারত্বে (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের কথা ছিল। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রকল্পটি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফলে ২০১৫ সালে একনেকে অনুমোদন পাওয়া বিমানবন্দর নির্মাণ ফের অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এদিকে প্রকল্পটি সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বাস্তবায়নের দাবিতে সরব হচ্ছেন খুলনার নাগরিক নেতারা। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি রবিবার (১৯ মার্চ ) সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে। ইতিমধ্যে খুলনা নাগরিক সমাজ, বৃহত্তর আমরা খুলনাবাসী, আমরা বৃহত্তর খুলনাবাসীসহ বিভিন্ন সংগঠন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পুনবিচেনার দাবিতে পৃথক পৃথক বিবৃতি জানিয়েছেন।
নাগরিক নেতারা বলেছেন, মোংলা বন্দর সচল, সুন্দরবন কেন্দ্রীয় পর্যটন শিল্পের বিকাশ, ইপিজেড ও শিল্পায়নের পুর্নসুবিধা প্রাপ্তিতে বিমান বন্দরের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ দেখছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবের সভাপতিত্বে পিপিপি প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনা হয়। ওই সভায় ‘বিল্ড অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন খুলনা খান জাহান আলী বিমানবন্দর’ শীর্ষক প্রকল্পের কোনো কার্যক্রম চলমান নেই বলে জানানো হয়।
ওই বৈঠকে প্রকল্পটি পিপিপি তালিকা থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয় । এ সিদ্ধান্তে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থেকেও অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে প্রকল্পটি প্রত্যাহারের পর রাজস্ব খাতে নির্মাণ করা হবে এমন আশাও করা যাচ্ছে না। পদ্মা সেতু চালুর পর বরিশাল বিমানবন্দর ও যশোর বিমানবন্দরে যাত্রী কমছে। সড়কপথেই মানুষ বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।
দেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও পাঁচটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর রয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে আন্তর্জাতিক; আর বরিশাল, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও কক্সবাজারে আছে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। এগুলো দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা তৈরি করেছে।
নতুন করে বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিদ্যমান অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে। নতুন করে বিমানবন্দর নির্মাণের আগে এর অর্থনৈতিক দিকও দেখতে হবে। কারণ তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়া বাকিগুলো লোকসানে আছে। পদ্মা সেতুর ফলে যশোর ও বরিশাল বিমানবন্দরে যাত্রী তুলনামূলক কম। তাই নতুন বিমানবন্দর চালুর আগে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ের দিকটি বিবেচনা করতে হবে।
জানা গেছে, বাগেরহাট শহর, মোংলা বন্দর ও বিভাগীয় শহর খুলনার সঙ্গে প্রায় ২৫ মিনিটের দূরত্বে বিমানবন্দর প্রকল্পের অবস্থান। প্রকল্পের পক্ষে যুক্তি হলো সেখানে বিমানবন্দর হলে সুন্দরবনের ইকো ট্যুরিজম, হজরত খান জাহান আলীর মাজার ও বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদকেন্দ্রিক পর্যটনশিল্পের দ্রুত বিকাশ, মোংলা সমুদ্রবন্দর, মোংলা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা, প্রক্রিয়াধীন মোংলা-ঢাকা ও মোংলা-খুলনা রেলপথ, চিংড়ি শিল্পসহ বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে। কিন্তু পিপিপি থেকে তালিকাটি বাদ পড়ায় রাজস্ব খাতে এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা আপাতত নেই।
১৯৯৬ সালে বাগেরহাটের রামপালে ‘শর্ট টেক অব অ্যান্ড ল্যান্ডিং’ বিমানবন্দর চালু করতে ৯৮ একর জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় উদ্যোগ নেয় বিমানবন্দর নির্মাণের। ২০১১ সালে খানজাহান আলী নামে একটি পূর্ণাঙ্গ বিমানবন্দর করার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৫ সালে বিমানবন্দর নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায়। এখন বিশ^ অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তÑ এ মুহূর্তে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
খুলনা গেজেট/কেডি