যশোরের কেশবপুরে করোনায় খাদ্য সঙ্কটে কালোমুখো হনুমান হানা দিচ্ছে গ্রামের ফসলের খেতে। এছাড়া খাদ্যের সন্ধানে তারা দলছুট হয়ে এলাকা ছেড়েও অন্যত্র চলে যাচ্ছে। সরকারিভাবে কালোমুখো হনুমানের জন্য যে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বিলুপ্ত প্রায় এ হনুমানের পরিচর্যা ও সংরক্ষণে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন কেশবপুরের সাধারণ মানুষ।
উপজেলা বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কয়েকশ’ বছর ধরে কেশবপুর সদর ও পার্শ্ববতী ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৬শ’ বিরল প্রজাতির কালোমুখো হনুমান বসবাস করছে। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর, হাসপাতাল এলাকা, পাইলট স্কুল এলাকা, ভোগতীনরেন্দ্রপুর, মধ্যকুল, রামচন্দ্রপুর, ব্রহ্মকাটিসহ ১২টি পয়েন্টে তাদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। বন বিভাগ থেকে প্রতিদিন কালোমুখো হনুমানের জন্য ৩৫ কেজি পাকা কলা, ৪ কেজি পাউরুটি ও ৪ কেজি বাদাম দেয়া হয়। তবে এতো সংখ্যক হনুমানের বিপরীতে ওই খাবার খুবই সামান্য। যা সকলের মাঝে পৌঁছায় না। বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা কেশবপুরে আসলে তারা হনুমানকে কমবেশি খাবার দেয়।
এদিকে, করোনাকালীন কেশবপুরে পর্যটকের আগমন না থাকায় ও মানুষের জীবন যাত্রা থমকে যাওয়ায় কালোমুখো হনুমান খাদ্য সংকটে পড়েছে। এ কারণে তারা ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য হানা দিচ্ছে গ্রামের ফসলের খেতে। ফলফলাদির গাছসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে। এছাড়া দলছুট হয়ে কালোমুখো হনুমান খুলনা ও চৌগাছা এলাকায় অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।
কেশবপুর পৌর শহরের ভোগতী এলাকার কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, তারা দেড় বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছেন। বুধবার সকালে একদল কালোমুখো হনুমান ওই খেতে এসে প্রায় দেড় কাটা জমির পাটের কচি পাতা খেয়ে ফেলেছে। এছাড়া পাট খেতে ছোটাছুটি করে ফসলের বেশ ক্ষতি করেছে।
উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের বেগমপুর গ্রামের মুরাদ হোসেন জানান, কেশবপুর শহর থেকে ক্ষুধার্ত একটি কালোমুখো হনুমান মঙ্গলবার বিকেলে তাদের এলাকায় যায়। ক্ষুধার্ত ওই হনুমানটিকে বিভিন্ন ফলমূল খেতে দেয়া হয়। প্রায়ই এভাবে ক্ষুধার্ত হনুমান এলাকায় এসে মানুষের বাড়িঘরসহ দোকানপাটে হানা দিচ্ছে।
খুলনা শহরে বসবাসকারী আক্তারুজ্জামান বলেন, সম্প্রতি কেশবপুর থেকে দলছুট হয়ে ২টি কালোমুখো হনুমান তাদের বাড়ির ছাদে আসে। এ সময় তাদেরকে শসা খেতে দেয়া হয়। পরে তারা অন্যত্র চলে গেছে।
বনবিভাগের খাদ্য বিতরণকারী আতিয়ার রহমান বলেন, প্রতিদিন সকালে যে সকল এলাকায় কালোমুখো হনুমান বিচরণ করে, সেখানে ভ্যানে করে গিয়ে কলা, পাউরুটি, বাদাম দিয়ে আসা হয়। সম্প্রতি হনুমানের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ওই খাদ্যে তাদের ক্ষুধা নিবারণ হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্তমানে কেশবপুরে হনুমানের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৬০০ হয়েছে। যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তা অপ্রতুল। এ কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট এ প্রজাতির খাদ্য বৃদ্ধির জন্য জানানো হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি