খুলনার কয়রা উপজেলার কাশির খালের উপর সেতু নির্মাণ কাজে মেয়াদোত্তীর্ণ নির্মাণ সামগ্রী ও মরিচা ধরা রড ব্যবহার করে সেতু নির্মাণের কাজ করছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। প্রায় তিন বছর ধরে লোনা পানিতে তলিয়ে ছিল এসব নির্মাণ সামগ্রী। এলাকাবাসী নির্মাণ কাজে এসব ত্রুটিপূর্ণ সামগ্রী ব্যবহারে বাঁধা দিয়েও তা বন্ধ করতে পারেনি। অবশেষে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) বেতগ্রাম-কাশিরহাট সড়কের কাশিরখালের উপর সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৯ সালের মে মাসে কাজ শুরু হয়ে করোনা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার। প্রায় তিন বছর বন্ধ থাকার পর গত ২ মার্চ সেতুটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হয়। এ সময় তিন বছর ধরে সাইটে ফেলে রাখা নির্মাণ সামগ্রী (রড, সিমেন্ট, পাথর, খোয়া, বালু) ঢালাইয়ের কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করে ঠিকাদারের লোকজন। এতে এলাকার মানুষ বাঁধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় উপজেলা প্রশাসন ও সওজ কর্তৃপক্ষের কাছে গণস্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় মানুষ।
সেতুর পাশের বাসিন্দা ২ নম্বর কয়রা গ্রামের শেখ জাহাঙ্গির কবির বলেন, যেখানে সেতু নির্মাণ চলছে তার দক্ষিণ পাশে এলাকার বড় একটি মাছের আড়ত রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন মাছ আনা নেওয়ার কাজে অসংখ্য যানবাহন যাতায়াত করে থাকে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতুটি নির্মাণ কাজে ত্রুটি করা হলে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। এ কারণে আমরা ঠিকদারের লোকজনকে মেয়াদোত্তীর্ণ মালামাল সরিয়ে নিতে বলেছি। কিন্তু তারা উল্টো আমাদের মামলার ভয় দেখাচ্ছেন।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে সেতুটির নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কাজটি পায়। প্রায় এক কোটি টাকা বরাদ্দের এ নির্মাণ কাজ ২০২১ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা এবং জলোচ্ছ্বাসের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
কাজের সাইটে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘ দিনের ফেলে রাখা লোহার রডের গায়ে মরিচা ধরেছে। শ্রমিকরা ঘষে ঘষে রডের গা থেকে মরিচা ছাড়ানোর চেষ্টা করছেন। শ্রমিকরা জানান, সেতুর উপরে ঢালাইয়ের কাজে এ রড ব্যবহার হবে। সেখানে উপস্থিত হাফিজুর রহমান নামে এক ব্যাক্তি জানান, তিনি ঠিকাদারের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা চুক্তিতে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাচ্ছেন।
সওজের উপসহকারি প্রকৌশলী আজিম কাওছার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজটি সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদার। বর্তমানে কাজটি আবার শুরু হয়েছে। সেখানে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ পেয়ে আপাতত কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সাইটের ব্যবহার অনুপযোগী মালামাল সরিয়ে নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক দিলিপ কুমার বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কাজটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করে চুড়ান্ত বিল প্রদান করা হয়। বর্তমানে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে নতুন করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ত্রুটিপূর্ণ কোন মালামাল ব্যবহার না করতে চেষ্টা করছি।
খুলনা গেজেট/ এস আই