খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জরী বিভাগের ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন ত্রিশোর্ধ নারী শামীমা নাসরিন। তার সমস্ত শরীরের লাঠির আঘাতের চিহ্ন ও দুর্বৃত্তদের কামড়ের দাগ। জিজ্ঞাসা করতে এক নিশ্বাসে বলে ফেলেন, বাবার সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে প্রতিবেশীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এর পূর্বে একই ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানানোর পরও কোন প্রতিকার পাননি বলে তিনি অভিযোগ করেছেন।
ভিকটিম বলেন, তিনি কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি কুচির মোড়ের জনৈক গফ্ফার গাজীর মেয়ে। বাবার বাড়ির পাশে জায়গা কিনে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। বাবার ২ বিঘা জমির উপর এলাকার লিয়াকত গাজী, সাখাওয়াত গাজী, নুর আলম গাজীসহ ওই পরিবারের অনেকের চোখ পড়ে। বাবা একা হওয়ায় প্রায়ই এ দল তার উপর অত্যাচার করে। এক বছর আগে একই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট বিচার দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকা তারা পরিশোধ করেনি।
ঈদের পরের দিন সোমবার সকালে লিয়াকত গং তার বাবার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এসময় তারা ঘরের একটি চাল তৈরি করে নিয়ে আসে। বাবার বসত বাড়িতে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতে চায়। বাধা দেয় শামীমা সুলতানা ও তার ভাবী সালমা খাতুন। এসময় লিয়াকত গংএর সাথে উপস্থিত খালেক ও আসফার গাজী বলে শামীমাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আয়। এরপর রফিকুল, সালাউদ্দিন, সাইফুল, সোয়েব বাড়ির ভেতর থেকে বের করে দাড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে ফেলে। শুরু হয় অমানুষিক নির্যাতন। শরীরের কাপড় খুলে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতে থাকে ওই দুর্বৃত্তরা। এসময়ে ভিকটিমের বড় ছেলে জাফর গাজী ও ছোট ছেলে আহাদ গাজী অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন।
পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে তার এক বোনাই জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। কয়রা থানার এসআই মাসুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দড়ি খুলে ভিকটিমকে উদ্ধার করে কয়রা উপজেলার জায়গীর মহল হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেলে তার অবস্থা আরও অবনতির দিকে গেলে ওই হাসাপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সোমবার বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালোর দিকে।
ভিকটিমের স্বামী আবুল কালাম সানা বলেন, ঘটনার সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। মোবাইলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের সহায়তা নেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর আগে একই ঘটনার জন্য সালিশ করেছেন। কিন্তু তারপরে তারা আবারও আক্রমণ করেছে। তিনি বলেন, লিয়াকত গং এর আগে জামায়েত ও বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। বর্তমানে তারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারীর সাথে হাত মিলিয়ে আমাদের ওপর অত্যাচার করছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন তিনি।
ভিকটিমের দুলাভাই রুস্তম গাজী বলেন, শ্বশুর ও শালা ওই এলাকার নিরীহ প্রকৃতির। তাদের ২ বিঘা জামি দখলের জন্য প্রায়ই তাদের ওপর আক্রমণ চালায় লিয়াকত গং। এ ঘটনার পর তারা একাধিকবার ফোনে হুমকি দিচ্ছে। তার প্রশ্ন লিয়াকত গং এর খুটির জোর কোথায় ? তিনিও এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, জমিজমা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংষর্ষ হয়েছে। ঘটনার সময় আমি এলাকার বাইরে থাকায় বিস্তারিত বলতে পারছি না।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারী বলেন, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের গোষ্ঠির মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। বেশ কয়েকবার সালিশ করা হলেও সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ যায় না। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সংবাদ পেয়ে আমি পুলিশকে অবহিত করেছিলাম। পুলিশ ভালো বলতে পারবে।
কয়রা থানার অফিসার্স ইনচার্জ এ.বি.এম.এস. দোহা খুলনা গেজেটকে বলেন, সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা গেজেট/ এস আই/টি আই