খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ মে, ২০২৪

Breaking News

  অর্থ আত্মসাৎ মামলায় জামিন পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
  রাজবাড়ীতে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
  হবিগঞ্জের মাধবপুরে ট্রাক ও প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলে পাঁচজন নিহত
  ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

কয়রায় বাঁধ বাধার চেষ্টা ফের ব‌্যর্থ, সরঞ্জাম স্বল্পতার অভিযোগ (ভি‌ডিও)

ত‌রিকুল ইসলাম

টিকে থাকার লড়াইয়ে আজও ব্যর্থ কয়রার অবহেলিত বানভাসি জনগণ। শত পরিশ্রমেও মেলেনি শেষ হাঁসি। একদিক ঠেকাতে যেয়ে ধসে যাচ্ছে, অন্য দিক স্বেচ্ছাশ্রমের অভাব না হলেও কমতি রয়েছে বাঁশ-খুটি ও সিনথেটিক-জিও ব্যা গের। এ নিয়ে নানা প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে সাধারণ মানুষের মনে। শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন অভিযোগও।

এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, খুলনার কয়রায় দক্ষিণ বেদকাশির চুরামুখায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ নির্মাণে আজ মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৭ টা থেকে ফের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ কাজ শুরু করেন। গতকালের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হলেও ভেঙেছে দক্ষিণ পাশের একাংশ। পানির তীব্র স্রোতের কারণে সেখানে তৈরি হয়েছে খাল।

এলাকাবাসিরা জানান, ১৭ জুলাই ভোররাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪/১ পোল্ডারের দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের চুরামুখা খালের গোড়া এলাকার বেড়িবাঁধের প্রায় ২০০ মিটার ভাটার টানে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। স্বেচ্ছাশ্রমে পরের দিন দুই হাজার মানুষ রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে সক্ষম হন। কিন্তু এক মাস অতিবাহিত হলে ওই স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোন কাজ না করায় গত ১৪ আগস্ট পুনরায় রিংবাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের লোনা পানিতে ডুবে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। পর পর কয়েকদিন রিংবাঁধ নির্মাণের প্রাণপণ চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ। গত ১৪ আগস্ট সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আড়াই হাজারের বেশি মানুষ কাজ করে ৩০০ মিটার রিংবাঁধ সম্পন্ন করেছিল। সামান্যা কাজ বাকী থাকতে নদীতে জোয়ার চলে আসায় কাজ বন্ধ করে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের। তবে প্রথম থেকেই সরঞ্জামাদি সরবরাহে ধীরগতির অভিযোগ ওঠে।

সেদিন বাঁধে সকলের সাথে কাজ করেন জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার জিএম মাহবুবুল আলম। কাজের শেষে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাঁশ ও ব্যাগ স্বল্পতায় কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড যে সরঞ্জামাদি দিয়েছিল সেটা যথেষ্ট ছিল না। পর্যাপ্ত মানুষ থাকার পরেও বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন করতে পারিনি।

সাবেক ইউপি সদস্যশ ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আছাদুজ্জামান বুলবুল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বলেন, পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি না থাকায় কাজে সমস্যার হচ্ছে। ক্রমাগত খাল সৃষ্টি হচ্ছে। দ্রুত আটকাতে না পারলে নদীর সাথে জনপদ বিলিন হয়ে যেতে পারে।

তবে সরঞ্জামাদি নিয়ে তিনি মুঠোফোনে ভিন্ন কথা জানিয়েছেন। তিনি এ প্রতিবেককে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড তেমন কোন সহযোগীতা করছেন না। নিজেরা স্থানীয়ভাবে অর্থ দিয়ে যতটুকু পারছি কিনে কাজ করছি। একমাস আগেও বেঁধে ছিলাম। পাউবো কাকে কি দিচ্ছে জানিনা। মোজাফ্ফার মেম্বারের সাথে তাদের কি আছে জানিনা। মোজাফ্ফার মেম্বারও ব্যাগ কিনতেছেন আর বলতেছে আমরা কিনে নিয়ে আসছি।

অন্য এক ইউপি সদস্য মো. মাসুদ রানা বলেন, আজ পুরাতন ভাঙা সব মেরামত করা হয়েছে। তবে দক্ষিণ পাশ দিয়ে খাল উঠে ১৫০ ফুটের মত ভেঙে যায়। পানিবন্দি রয়েছে ১৫ হাজার মানুষ। ক্রমাগত ক্ষতির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। সরঞ্জামাদির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেম্বার মোজাফ্ফার পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি। তার মাধ্যমে আমরা সরঞ্জামাদি পাচ্ছি। তবে চাহিদার তুলনায় তা কম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওখানকার যাবতীয় কাজ দেখাশুনা করেন ইউপি সদস্য মো. মোজাফ্ফার শিকারী। সরঞ্জামাদির বিষয়ে মুঠোফোনে সোমবার তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, যথেষ্ট ব্যাগ ছিল। জোয়ারের পানি আসায় শেষ করতে পারিনি। তিনি আরও বলেন, যত খরচ আমিই করেছি এ পর্যন্ত। আমার নিজে হাতেই করেছি। একটা ব্যাগের দাম ৭ টাকা। অপচয় ঠেকাতে হয়ত ছোটদের কাছে ব্যাগ দেয়া হয়নি। আপনি নিজ হাতে কেন খরচ করেছেন ? জানতে চাইলে এড়িয়ে তিনি বলেন, নিজের থেকে করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড দিলে দিবে, না দিলে না দিবে। তিনি আরও বলেন, পাউবো সরাসরি ফান্ড দিতে পারে না, ব্যাগ কিনে দিয়েছিল। তাকে ডিপিএম দিলে তার এই খরচ উঠবে বলে জানান তিনি।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা নাজমুল জানান, প্রতিনিয়ত বাঁধ নির্মাণে কাজে যাচ্ছি। সরঞ্জামাদি চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না। এখানকার মোজাফ্ফার মেম্বার ও এক পাউবো কর্মকর্তার সখ্যতা রয়েছে। তারা মিলে যথেষ্ট সরঞ্জামাদি দিচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, মূল বাঁধের চলমান জাইকার কাজও ওই মেম্বার দেখাশুনা করেন, যেখানে ভেঙে যায় ১৭ জুলাই। এছাড়া ডিপিএম এর কাজও তিনি দেখাশুনা করেন।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, একই স্থানে বারবার ভাঙা দুঃখজনক। আমরা দেখেছি বিগত ১০ বছরে জরুরী কাজের নামে কয়রার বেড়ীবাঁধ সংষ্কার ও নির্মাণ বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ১শ’ ৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৮ হাজার টাকারও বেশি। অথচ সেসব জোড়াতালির বাঁধ সংস্কারের নামে যেটুকু কাজ হয়, সেখানেও রয়েছে আমলা-কর্মকর্তা-জনপ্রতিনিধি-ঠিকাদার মিলিয়ে সরকারি তথা জনগণের অর্থ লুটপাটের অসাধু চক্র। টেন্ডারে কাজ পেয়ে মূল ঠিকাদার নিজের লাভটা রেখে কাজটা বিক্রি করে দেন আরেকজনের কাছে। এভাবে হাতবদল হলে কাজের মান খারাপ হতে বাধ্য- এটাই দেখে এসেছি এতদিন।

কয়রার এই নাগরিক নেতা আরও জানান, শুধু দক্ষিণ বেদকাশি নয়, উপকূলীয় এ উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষকে নদীভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। একটি টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এতোদিন কয়রার মানুষ আন্দোলন করে আসছিল। এখন বরাদ্দ হয়েছে, এবার আন্দোলন সচ্ছতার সাথে কাজটি বাস্তবায়নের বিষয়টি বুঝে নেয়ার।

তবে পাউবো’র বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মশিউল আবেদীন বলেন, আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে বাঁশ, সিনথেটিক ব্যাগ দিয়ে তাৎক্ষণিক সহযোগীতা করছি। আমরা কোন অনিয়ম করি না, প্রশ্রয়ও দেই না।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!