খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আগামীতে সরকারের মেয়াদ হতে পারে চার বছর : আলজাজিরাকে ড. ইউনূস
সাতক্ষীরায় গ্রামীণ নারী দিবসের মতবিনিময় সভায় বক্তারা

কোভিড-১৯ গ্রামীণ নারীর অর্থনীতি, খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবাকে ঝুঁকিতে ফেলেছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

“কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে গ্রামীণ নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধি” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভা বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরা শহরের চালতেতলা মিশন হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার এএলঅরাডি এর সহযোগীতায় উন্নয়ন সংগঠন স্বদেশ, হেড সংস্থা, পদ্মলোককেন্দ্র সহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন যৌথভাবে এই সভার আয়োজন করে।

স্বদেশ সংস্থার নির্বাহি পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রকল্প সমন্বয়ক ফাতেমা জোহরা। বিশেষ অতিথির বত্তব্য রাখেন, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ফরিদা আকতার বিউটি, নারী নেত্রী বেগম মরিয়ম মান্নান, বাংলাদেশ ভিশনের পরিচালক অপরেশ পাল প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হেড সংস্তার পরিচালক লুইস রানা গাইন।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, গ্রামীণ নারী এবং কন্যাশিশুরা এমনিতেই তাদের প্রতিদিনের জীবনে নানামুখী প্রতিকূলতা ও লড়াইয়ের মুখোমুখি হন এবং তারাই তুলনামূলকভাবে বেশি বহুমাত্রিক দারিদ্রতায় শিকার। কোভিড-১৯ মহামারি গ্রামীণ নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বেশি হুমকির মুখে ফেলেছে। তার ওপর এই মহামারিতে গ্রামীণ নারী ও কন্যাশিশুরা সকলধরনের সেবাপ্রাপ্তি থেকে সুবিধাবঞ্চিত। প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে কোভিড-১৯ এর কারণে নারী এবং কন্যাশিশুরা অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যায় মানসম্পন্ন সেবা, প্রয়োজনীয় ঔষুধ সঠিকভাবে পাচ্ছে না। গ্রামীণ পরিবার ও জীবনযাত্রার সার্বিক টেকসই মান উন্নয়নে গ্রামীণ নারী ও কন্যাশিশুরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রামীণ নারীরা অনানুষ্ঠানিক কাজসহ কৃষি শ্রমশক্তিতে একটি উলে­খজনক অবদান রাখছেন। কোনোরকম আর্থিক সুবিধাদি ছাড়াই গ্রামীণ নারীরা গৃহস্থালী কাজসহ কৃষি উৎপাদন, পরিবারের খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ, প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষা এবং জলবায়ু সহনশীলতা তৈরিতে উলে­খযোগ্য অবদান রাখছেন। এটা প্রমাণিত যে বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারিতে এবং পূর্বের অন্যন্য দূর্যোগে ও সঙ্কটে গ্রামীণ নারীরাই সবচেয়ে বেশি আর্থ-সামাজিক বৈষম্যের শিকার হন এবং কষ্ট সহ্য করেন।

সভায় বলা হয়, গ্রামীণ নারীরাই কৃষির মেরুদন্ড। তাঁরা পারিবারিক খাদ্য সুরক্ষা ও শিশুদের একচেটিয়াভাবে পুষ্টি সরবরাহের অভিভাবক। কৃষি উৎপাদনে গ্রামীণ নারীরা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নারীরা একাধারে খাদ্য উৎপাদক, বীজ ও লোকায়ত জ্ঞান সংরক্ষক, কৃষি শ্রমিক, অন্যদিকে খাদ্য প্রস্তুত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও সংরক্ষণ করে। পুরুষরা কৃষি খাত থেকে অ-কৃষিখাতে বেশি যুক্ত হচ্ছেন এবং কাজের সন্ধানে তাদের শহরমুখী প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষিশ্রমে নারীদের সম্পৃক্ততা দ্রুতহারে বাড়ছে। কৃষি, শিল্প ও সেবা অর্থনীতির বৃহত্তর এই তিন খাতে ১ কোটি ৬৮ লাখ নারী কাজ করছেন। কৃষি খাতে নিয়োজিত আছেন ৯০ লাখ ১১ হাজার নারী। বিগত ৮ বছরে কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় ৮ ভাগ (৬৪.৮৪ শতাংশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১০ এবং ৭২.৬ শতাংশ শ্রমশক্তি জরিপ ২০১৬-১৭) বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষিখাতের ২১টি কাজের ধরনের মধ্যে নারীর অংশগ্রহণ ১৭টিতে। যদিও গ্রামীণ নারীরা কৃষি অর্থনীতির অগ্রগতিতে সর্বাগ্রে রয়েছে, তথাপিও কৃষিতে তাঁদের অবদান পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। নারীদের কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি নেই।

কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ার পাশাপাশি তাদের নিজের নামে জমিও না থাকার কারণে গ্রামীণ নারীরা প্রয়োজনীয় কৃষি ঋণ পাচ্ছে না। এমনকি, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অন্যন্য কৃষি সুবিধাদিতেও তাঁদের প্রবেশাধিকার অপেক্ষাকৃত কম। কৃষি কাজে নিয়োজিত নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতিসহ তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষিসেবা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা এখন জরুরী।

সভায় কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও বিস্তার থেকে সুরক্ষায় খাদ্য উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সকল গ্রামীণ নারী ও কন্যাশিশুর স্বাস্থ্যগত সুরক্ষা ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাঁদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা করাসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

খুলনা গেজেট/কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!