কেশবপুরে পৌর শহরের পবিত্র সাহা নামের এক ডেকোরেটর ব্যবসায়ীকে মারপিটের ঘটনায় দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। গত শনিবার (৬ এপ্রিল) রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। মামলার প্রধান আসামি জেলা পরিষদের সদস্য টিপু সুলতানসহ অন্যরা এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে। পুলিশ জানান মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন সাবদিয়া গ্রামের ইকবাল হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেন রকি (৩০) ও তেঘরী গ্রামের মৃত শের আলী মোড়লের ছেলে এরশাদুল মোড়ল এরশাদ (৩৭)। তবে, ডেকোরেটর ব্যবসায়ী ও পৌরসভার ট্রাক ড্রাইভারকে ডেকে নিয়ে মারপিটের ঘটনায় পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং দোষীদের গ্রেপ্তার করার জন্য কেশবপুর পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন।
থানার মামলা সূত্রে জানা গেছে, কেশবপুর পৌরসভার সাহাপাড়ার মৃত সাধন সাহার ছেলে পবিত্র সাহা (৩৬) একজন ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। পৌর শহরে কৃষি ব্যাংকের নিচে “নিউ ভিআইপি ডেকোরেটর” নামে তার একটি দোকান আছে। সে এ উপজেলার রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির প্যানা দিয়ে গেট তৈরি করে থাকে। সেই সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে পৌরসভার মেয়রের গেট তৈরি করে আসছে। গত ৩০ মার্চ পৌরসভার মেয়রের গেট করার কারণে রকির সাথে অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জন তার ডেকারেটর দোকানে গিয়ে হুমকি-ধামকি দিয়ে বলে ভবিষ্যতে মেয়রের নামে কোন গেট বা প্যানা করলে তোর হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া এবং ডেকোরেটরের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এরপর গত ২ এপ্রিল আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে পৌর মেয়রের ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছার ৫টি গেট তৈরি করায় টিপু ও রকি ক্ষিপ্ত হয়ে পবিত্রকে খুঁজতে থাকে। গত ৬ এপ্রিল দুপুরে শহরের হাবিবগঞ্জ ঈদগাহের গেট তৈরি করে দোকানে ফেরার পথিমধ্যে বকুলতলা বাজার কালীতলা মন্দির সংলগ্ন পাকা রাস্তার উপর পৌঁছালে টিপু সুলতানের নেতৃত্বে অন্যান্য পরস্পর পথরোধ করে বলে, তোরে না বলেছিলাম মেয়রের নামে কোন গেট বা প্যানা বানাবি না, তারপরও তুই কেন গেট করেছিস, আজ তোকে জানে মেরে ফেলবো। এরপর সে কিছু বুঝে উঠার আগেই সকলেই এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি, লাথি মারতে থাকায় সে মাটিতে পড়ে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নীলা-ফোলা জখম হয়। ওই সময় দেলোয়ার হোসেন রকি তার শার্টের বুক পকেটে থাকা ব্যবসায়িক নগদ ১৭’হাজার ৫’শত টাকা কেড়ে নেয়। মারধরের একপর্যায়ে বলে, তুই যদি এখনই মেয়রের গেট, প্যানা খুলে না নিস তাহলে তোর হাত কেটে নেবো। তখন সে ভয়ে গেট ও প্যানা খুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে তারা হুমকি ধামকি দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যায়। খবর পেয়ে পবিত্র সাহার কাকাতো ভাই মনজিৎ সাহা এবং ছোট কাকা পরেশ সাহা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে। এ ঘটনা উল্লেখ করে পবিত্র সাহা নিজেই বাদী হয়ে সদ্য জেলা পরিষদের সদস্য টিপু সুলতান, দেলোয়ার হোসেন রকি ও এরশাদুল মোড়ল এরশাদসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে কেশবপুর থানায় একটি মারামারি মামলা করেন। যার মামলা নম্বর-৭।
অপরদিকে ডেকোরেটর ব্যবসায়ী পবিত্র ও পৌরসভার ট্রাক ড্রাইভার নাজমুল হোসেনকে ডেকে নিয়ে মারপিটের ঘটনায় পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য রবিবার সকালে কেশবপুর পুরাতন বাসস্টান্ডে মানববন্ধন ও পৌরসভার সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
সংবাদ সম্মেলন মেয়র লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি জাতীয় দিবস এবং ঈদ, পূজা ও বড়দিনে রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সকল পৌরসভা গেট, ব্যানার ও ফেস্টুন তৈরী করে। ঐতিহ্যগতভাবে কেশবপুর পৌরসভাও এ কাজটি করে থাকে। গত ১৭ই মার্চ বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে পৌর শহরের ত্রিমোহিনী মোড়ে পৌরসভার পক্ষ হতে গেট তৈরী করা হয়। সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদ সদস্য টিপু সুলতান ওইগেট দখল করে সেখানে বর্তমান স্বতন্ত্র এমপি আজিজুল ইসলামের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেন। কেশবপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পৌর শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রতি বছরের ন্যয় এবারও ৫টি গেট তৈরি করা হয় এবং ২১টি ঈদগাহে গেট ও প্যান্ডেলের নির্মাণ কাজ চলমান। গেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয়, শেখ হেলাল উদ্দিন এমপি এবং পৌর মেয়রের ছবি সম্বলিত প্যানা লাগানো হলে সদ্য নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য টিপু সুলতান ও রকি সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জন উক্ত প্যানা ছিড়ে ফেলে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পায়ের তলায় পিস্ট করে এবং ডেকোরেটর মালিক পবিত্র সাহাকে ফোন করে কেশবপুর পৌরসভার বকুলতলায় ডেকে নিয়ে ব্যপকহারে মারধর করে। পৌরসভায় বাস্তবায়ধীন ডেলটা প্লান অব বাংলাদেশ আরবান ডেমোনেস্টেটর প্রকল্পের কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার মুরাদ হোসেন জুয়েল ও পৌরসভার ট্রাক ড্রাইভার নাজমুল হোসেনকে ডেকে নিয়ে ব্যাপক মারধর করে। এমনকি তারা রোজা থাকার কথা বলা স্বত্তেও তাদের আরো ব্যপকভাবে মারধর করে।
বিষয়টি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রচারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষে বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল আলম বলেন, ডেকোরেটর ব্যবসায়ীকে মারপিটের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের রবিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মামলার প্রধান পলাতক আসামিসহ অজ্ঞাতনামা সকল আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিমুক্তসহ সকল অপরাধমূলক কর্মকান্ড রুখতে থানা পুলিশ ব্যাপক তৎপর রয়েছে। অপরাধী যেই হোক-না কেন তাদের কোন প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না।
খুলনা গেজেট/কেডি