কেশবপুরে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ নার্সারি। ফুলকে কে না ভালোবাসে! ফুল ভালোবেসে ও ফুলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করেন অনেকে। অনেকেই নার্সারিতে যেতে পারেন না সময়ের অভাবে। যে কারণে তাদের ফুলের বাগানও আর করা হয়ে ওঠে না। সম্প্রতি কেশবপুরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ নার্সারির দোকান দেখা যাচ্ছে। ভ্যান ও ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে সুসজ্জিত করে ফুলের চারা বিক্রি করা হচ্ছে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। ভ্রাম্যমাণ নার্সারি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় উপজেলার বিভিন্ন নার্সারি ব্যবসায়ি এখন এই পদ্ধতি অবলম্বন করছেন। ফুলপ্রেমিদের জন্যও এটা সুখবর।
এসব ভ্রাম্যমাণ নার্সারিতে পাওয়া যাচ্ছে দেশি-বিদেশি বাহারি সব নামের হরেক রকম ফুলের ও বিভিন্ন প্রকারের ফলজ ও বনজ চারা। যে গুলোর মধ্যে রয়েছে লাল, সাদা ও হলুদ রঙের চন্দ্রমল্লিকা, কয়েক রকমের গোলাপ, নয়নতারা, গাঁদা, ডালিয়া, ক্যালেন্ডুলা ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে নানা রকমের পাতাবাহার গাছ। রংধনু নার্সারির সাইনবোর্ড লাগিয়ে ভ্যানটি ঘুরে ঘুরে হরেক রকম ফুলের ও বিভিন্ন প্রকারের ফলজ ও বনজ চারা বিক্রি করছেন তাহাবুর (ফুল ভাই)। তাহাবুর মানুষের নিকট ফুল ভাই নামে পরিচিতি পেয়েছে।
তিনি জানালেন, কেশবপুর শহর ছাড়াও পাঁজিয়া, কন্দর্পপুর, ভালুকঘর, মঙ্গলকোটসহ পার্শ্ববর্তী তালা, পাইকগাছাসহ বিভিন্ন জায়গায় তিনি ঘুরে ঘুরে ফুলের চারাসহ বিভিন্ন প্রকারের ফলজ ও বনজ চারা বিক্রি করেন। দৈনিক তার দেড় থেকে দুই হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়। প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ শত চারা বিক্রি হয় তাঁর ভ্রাম্যমাণ নার্সারি থেকে। প্রকারভেদে একেকটি চারা বা কলম ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।
মণিরামপুর উপজেলার জামলা গ্রাম থেকে আসা ভ্রাম্যমাণ রংধনু নার্সারির মালিক তাহাবুর জানান, তিনি গ্রামের এক ব্যক্তির নিকট থেকে ২০ শতক জমি ১০ বছরের জন্য ৫০ হাজার টাকায় লিজ নিয়েছেন চারা উৎপাদন করার জন্য। সেখানেই উৎপাদন করেন বিভিন্ন প্রজাতির চারা। শহরের গাছ প্রিয় মানুষজন সেখান থেকে সহজে চারা কিনতে পারতেন। রান্তায় ভ্যান নিয়ে ঘুরে ঘুরে চারা বিক্রি করি। আর তা দিয়েই সংসার চালাই।
কেশবপুর মধুসড়কে ভ্যানে করে গাছ বিক্রির সময় কথা হয় তাহাবুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, নিজের এলাকায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে একটি ফুল ও ফলের গাছের নার্সারি তৈরি করেছেন। সেখানে ৪০ থেকে ৫০ প্রকার ফুল, ফল ও বনজ গাছের চারা রয়েছে। সব মিলিয়ে শতাধিক প্রকারের চারা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, তার নার্সারিতে গোলাপ, ডালিয়া, লজ্জাবতি, কয়েক প্রকার লাল, সাদা ও হলুদ রঙের চন্দ্রমল্লিকা, কয়েক রকমের গোলাপ, নয়নতারা, গাঁদা, ডালিয়া, ক্যালেন্ডুলা, গাঁদা, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, অপরাজিতা, পানভাটিয়া, ক্যকট্রাস, মিনি টগর, স্প্রাইট, জুই, রক্ত জবা, গন্ধরাজ, বিস্কুট ফুলের চারা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন রকম ফুল ও ফল এবং ওষুধি গাছের চারাও রয়েছে। সব বয়সী লোকজন তার কাছ থেকে চারা ক্রয় করেন। তবে ফুলের চারার চাহিদা বেশি। বিভিন্ন দামেও বিক্রি হয় এ ফুলের চারা। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় ফুলের এক-একটি চারা। ফুলের চারার পাশাপাশি আমের চারা, ঝাল, কামরাঙ্গা, হাতিরসুর ঝাল, বঙ্গল, পাতি কাগজি লেবুর চারাসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের চারাও চোখে পড়ে।
স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের লোকদের ভিড় করতে দেখা যায় ফুল ভাইয়ের ভ্রাম্যমাণ নার্সারির ভ্যানের পাশে। অনেকেই চারা কেনার জন্য, আবার কেউ দেখার জন্যও দাঁড়ান তার ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের কাছে। দেখতে দেখতে পছন্দ হলে অনেক সময় চারা ক্রয় করেন।
গোলাপ ফুল গাছের চারা কিনতে আসা ১০ম শ্রেণির ছাত্রী বলেন, ‘আমি গোলাপ ফুল খুব পছন্দ করি। তাই বাজার থেকে বাড়ি যাবার সময় ভ্রাম্যমাণ সার্সারিতে ফুলের চারা দেখলাম। তাই একটা চারা ৫০ টাকা দিয়ে কিনেছি।’
গাধা ফুল গাছের চারা কিনতে আসা ১০ম শ্রেণির ছাত্র বলেন, ‘আমার পছন্দের ফুল গাঁদা। শহর থেকে বাড়ি যাবার সময় প্রায়ই ফুল ভাইয়ের ভ্রাম্যমাণ নার্সারীর সঙ্গে দেখা হয়। তাই আজ ২ টি গাঁদা ফুলের চারা ৩০ টাকা দিয়ে কিনেছি। এর আগেও তার কাছ থেকে বিভিন্ন ফুলের চার কিনেছি।’
মধু সড়কের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তার কাছে থেকে আগেও ফুল ও ফলজ গাছের চারা কিনে ছিলাম। আজ একটি তেজপাতার চারা কিনলাম।’
পৌর শহরের বাসিন্দা মোদাচ্ছের বলেন, ‘আমি আগেও ফুল ভাইয়ের ভ্রাম্যমাণ নার্সারী থেকে বিভিন্ন প্রকারের ফুলের চারা কিনেছি। এখন আবার অনেকদিন পর দেখা হলো। আজ একটি কাঠিমন আমের চারা ও ঘরের সৌন্দয্যবর্ধনের জন্য ছিনারীর গাছ কিনলাম।’
শহরের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ফুল ভাইয়ের ভ্রাম্যমাণ নার্সারী থেকে প্রায়ই চারা কেনা হয়। এখন এই লেবুর চারাটি কিনেছি।’
খুলনা গেজেট/এনএম