খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৭ মে, ২০২৪

Breaking News

  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রাকের সঙ্গে ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত
  রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২
প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে

করোনা পরিস্থিতিতে ধ্বস নেমেছে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায়

মোংলা প্রতিনিধি

করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ধ্বস নেমেছে আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায়। প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে গাড়ি-বেচা কেনা। এ অবস্থায় গত সাত মাসে এ খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন গাড়ি আমদানিকারকরা। আর এ খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন রয়েছেন তারা। এ অবস্থায় সরকারি প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ব্যাংক লোনের ব্যবস্থা না হলে গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা পুজিঁ হারানোসহ নানা সংকটের মুখে পড়ার শংকা রয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও গাড়ি আমদানিকারক সূত্র জানায়, রাজধানীর সঙ্গে দূরত্ব কম হওয়ায় ২০০৯ সাল থেকে দেশে আমদানি করা গাড়ী খালাস হয় মোংলা বন্দর দিয়ে। গত ৯ বছরে এই বন্দর দিয়ে মোট গাড়ী আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৮৫১ টি। সে হিসেবে দেশে মোট আমদানির ৬০ ভাগ গাড়ী আসে মোংলা বন্দরে। এ বন্দর ব্যবহারকারি গাড়ি আমদানিকারকের সংখ্যা ২শ’ থেকে ২৫০ জন।

দেশের রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানীকারকদের এ ব্যবসা জাপানের ওপর নির্ভর করে। এ বন্দরের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্রান্ডের রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি করে থাকেন তারা। কিন্তু গত মার্চে দেশে প্রাদুভাব দেখা দেয়ায় ব্যাংক লোন, এলসি খোলাসহ নানা সংকটের মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে গাড়ির বেচা-কেনায়ও কমতে শুরু করে। এতে ধ্বস নামে রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায়। এ খাতে কোটি কোটি টাকা পূঁজি বিনিয়োগ করে চলমান পরিস্থিতিতে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন আমদানিকারকরা।

বেচা-বিক্রি তেমন না থাকায় আমদানিকারকদের প্রায় চার হাজার গাড়ী পড়ে আছে মোংলা বন্দর জেটি, শেট ও ইয়ার্ডে। এর মধ্যে করোলা এক্সিও, টয়োটা প্রিমিও, টয়োটা মার্ক এক্স ও টয়োটা হাইএক্স, টয়োটা লেক্সাস এনএক্স ও টয়োটা হাইএস সুপার জিএলের, টয়োটা ভিটজ, টয়োটা টয়োএস পিকআপ ও টয়োটা প্রিমিও গাড়িসহ রয়েছে বিলাসবহুল বিভিন্ন ব্রান্ডের গাড়ী।

আমদানিকারকরা জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গাড়ী আমদানি হলেও তেমন বেচাকেনা ছিল না। গত মার্চ মাসে প্রথম যখন দেশে করোনার প্রাদুভাব দেখা দেয় তখন থেকেই কমতে থাকে গাড়ি বেচাকেনা। ধ্বস নামে এ খাতে । আর এ কারণে আমদানিকারকদের কেউ কেউ কাস্টমস শুল্ক ও রাজস্ব প্রক্রিয়া শেষ করে বন্দর থেকে গাড়ী ছাড়িয়ে নিলেও বেশিরভাগ আমদানিকারক ছাড় করাতে পারেনি। এ ছাড়া মহামারির সংকটের মধ্যে ব্যাংক লোনও এলসি নিয়েও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে তাদের। আর এতে সংকটে পড়া ব্যবসায়ীরা বন্দরের ইয়ার্ডে রক্ষিত গাড়ির অনুকুলে ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হন।

এ দিকে রিকন্ডিশন গাড়ির খাতে গত জুন পর্যন্ত কাস্টমসের শুল্ক ও রাজস্ব কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। বন্দরে আসা গাড়ি নির্ধারিত সময় আমদানিকৃত ছাড় করিয়ে না নেয়ায় কমে যায় শুল্ক ও রাজস্ব আয়। এ অবস্থায় রাজস্ব আয়ের গতি ফেরাতে বন্দরে দীর্ঘদিন পড়ে থাকা গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়ায় এগুচ্ছে কাস্টমস। নিয়মানুযায়ী আমদানি করা গাড়ীর বন্দরে পৌঁছার এক মাসের মধ্যে ছাড় করিয়ে নিতে হয়। না হলে শুল্ক ও রাজস্ব আদায়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা নিলামে তুলতে পারে।

করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে বিভিন্ন ব্রান্ডের পাঁচ হাজার ৬৫৩ টি রিকন্ডিশন গাড়ী নিলামে ওঠে। এর মধ্যে মাত্র ৬ টি গাড়ি ছাড় করাতে পেরেছেন ক্রেতারা। আর করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম পর্যায় নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও গত ২৮ অক্টোবর ৯২টি গাড়ি নিলামে ওঠে। প্রাথমিকভাবে আরও বিভিন্ন ব্রান্ডের ৯শ’ গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাস্টমস। আর এ নিলাম প্রক্রিয়াকে মড়ার উপর খড়ার খা হিসেবে দেখছেন গাড়ী ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে গাড়ী আমাদানিকারকদের সংগঠন বারভিডার সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম জানান, করোনা সংকটের প্রথম ৩ মাসে এ খাতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ দাড়ায় ৭৫০ কোটি টাকায়। আর এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়েছেন এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরও বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে রিকন্ডিশন গাড়ির ক্রেতা কমেছে ৪০ শতাংশ। কিন্তু তাদের নিত্যদিনের খরচ কমছে না। জাহাজে আসা গাড়ির পরিবহন ভাড়া, বন্দরে রক্ষিত গাড়ির ভাড়া, কর্মচারী ও গোডাউন ভাড়াসহ রয়েছে ব্যাংক লোনের বোঝা। সব মিলিয়ে আড়ের মতো ব্যয় হলেও আয় নেই তাদের। তাছাড়া সময় মতো এলসি ও যোগাযোগ বিছিন্ন হলেও বিদেশে (জাপানে) এ খাতের ব্যবসা নিয়ে সংকটে পড়ার শঙ্কাও রয়েছে। এ অবস্থায় কাস্টমসের নিলাম প্রক্রিয়া শিথিল করার দাবি জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে বারভিডা’র সভাপতি মোঃ আব্দুল হক বলেন, ছোট পরিসরের হলেও রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসা এবং এ খাতটি অর্খনীতিতে গুরুত্ব বহন করে। তাই এ খাতের দূরাবস্থার কথা সরকারকে বিবেচনায় নেয়া উচিৎ। আর রিকন্ডিশন গাড়ি ব্যবসায় এ খাত টিকিয়ে রাখতে হলেও প্রণোদনাসহ ব্যাংক লোন ব্যবস্থা আরও সহজ করা প্রয়োজন। অন্যথায় দূর্বিপাকে থাকা ব্যবসায়ীরা পূঁজি হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হবে। তাই এ বিষয় নিয়ে বাণিজ্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করছেন। চলতি মাসে প্রথম সপ্তাহে বারভিডার একটি প্রতিনিধি দল তাদের চলমান সংকটময় পরিস্থিতি নিয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এম শাহজাহাজনসহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতি বন্দরে থাকা তাদের আমদানিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ির অনুকুলে অন্তত দু’মাসের ভাড়া মওকুফের দাবী জানানো হয়। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনও কোন সাড়া না দিলেও নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে মওকুফের বিষয়টি আশ্বস্ত করা হয়েছে বলে জানান আমদানিকারকরা।

এ বিষয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক ট্রাফিক গোলাম মোস্তফা জানান, ২০০৯ সাল থেকে মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি শুরু হয়। আর এ গাড়ির খাতটি বন্দরের আয়ের অন্যতম উৎস । গত জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ বন্দরে ৯ হাজার রিকন্ডিশন গাড়ি আসে। বর্তমানে বন্দরে ৩ হাজার গাড়ি রক্ষিত আছে। এর মধ্যে আমদানি নিয়ন্ত্রিত ও মামলা জটিলতায় আটকা রয়েছে ৪ শতাধিক গাড়ি।

তবে বন্দরে থাকা বা আনা রিকন্ডিশন গাড়ির ভাড়া মওকুফের বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, করোনাকালীন পরিস্থিতিতে এ বন্দরে আমদানীকৃত গাড়ির খালাস প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে।

মোংলা কাস্টমস হাউজের কমিশনার হোসেন আহমদ জানান, কাস্টমসের শুল্ক ও রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত বিদেশ থেকে আমাদনিকৃত রিকন্ডিশন গাড়ি। করোনা পরিস্থিতির শুরুতে গেল ( ২০১৯-২০২০) অর্থ বছরে এ খাতে রাজস্ব আয় ৭০ ভাগ কমে যায়। তবে সম্প্রতি এ থাতে রাজস্ব আয় কিছুটা বাড়ছে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ খাতে রাজস্ব আয় আগের মতো ঘুরে দাঁড়াবে। এ ছাড়া রিকন্ডিশন গাড়ির নিলাম প্রক্রিয়াকে রাজস্ব আদায়ের স্বাভাবিক গতি বলে জানান তিনি।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!