খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

করোনায় অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে বেদে জনগোষ্ঠির

মহিদুল, চৌগাছা

‘গেল দেড় বছর আমরা খুব কষ্টে আছি। করোনার কারণে আয় রোজগার কমে গেছে, সেই সাথে থেমে থেমে চলছে লকডাউন। মানুষ আগের মত আর একাত্রিত হয়না, সাপ-বানর খেলাও দেখেনা। এই অবস্থায় বাজারেও সব কিছুর দাম বাড়ছে। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে আমরা অনেক সমস্যায় আছি।’ এমনটাই বলছিলেন চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে ফাঁসতলা বাজারের বেদে পল্লির শফিকুল ইসলাম।

করোনাকালীন এই সময়ে বেদে জনগোষ্ঠির দিন কাটছে চরম কষ্টে। দেশের একপ্রান্ত হতে অন্য প্রান্ত ছুটে বেড়ানো মানুষ গুলো অনেকটাই হয়ে পড়েছেন কোনঠাসা। থেমে থেমে লকডাউন, গ্রামাঞ্চলে গেলে সেভাবে আর হচ্ছে না আয় রোজগার, নিত্য পণ্যের বাজার উর্ধমুখী সব মিলিয়ে বিপাকে আছেন স্বল্প আয়ের এই মানুষেরা।

চৌগাছা-মহেশপুর সড়কে ফাঁসতলা বাজার সংলগ্ন গুয়াতলী মৌজায় অস্থায়ী আবাসস্থল গড়ে তুলেছে বেদে বা টুলে জনগোষ্ঠির সদস্যরা। সম্প্রতি তারা ঝিনাইদহ জেলা হতে এই স্থানে এসে বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে নির্মাণ করেছে কুঁড়ে ঘর। সপ্তাহখানের এখানে থাকার পর আবার নতুন কোন জায়গার সন্ধানে এলাকা ছাড়বেন।

অস্থায়ী ওই বেদেপল্লীতে যেয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকটি কুঁড়ে ঘরের বাসিন্দারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিকটস্থ বাজার বা গ্রামাঞ্চলে যাওয়ার জন্য। তারা সাপ, বানর, ও কবিরাজি চিকিৎসার সরঞ্জাম নিয়ে রওনা হচ্ছে। সারা দিন পায়ে হেটে এক এলাকা হতে অন্য এলাকায় যেয়ে সাপ-বানরের খেলা দেখিয়ে ও নানা ধরনের তাবিজ-কবজ বিক্রি করে যা রোজগার হবে তাই নিয়ে ফিরবে অস্থায়ী ঝুপড়িতে। রাতে রান্না করে ওই কুঁড়ে ঘরে গাদাগদি করে ঘুমাবেন। সকাল হলেই আবার ছুটবেন জীবিকার সন্ধানে।

কথা হয় অস্থায়ী বেদে পল্লীর সর্দার সিরাজুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, তাদের জীবনটাই হচ্ছে এমন। বছরের পুরো সময়টা জুড়ে কাটে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেয়ে। সেখানে নির্মাণ করি কুঁড়ে ঘর, রান্নার জায়গা, টয়লেট বা গোসলের জায়গা। সময় শেষ হলে আবার চলতে শুরু করেন নতুন ঠিকানায়। বছরের উৎসবের সময় জন্মস্থান এলাকাতে যান। উৎসব শেষে আবার বের হয়েযান হয় জীবন জীবিকার সন্ধানে। তবে এখন করোনার কারণে উপার্জন কম, অনেক সমস্যায় আছেন তারা।

পল্লীর আনজুয়ার বেগম জানান, তারা যাযাবর একদেশ থেকে অন্যদেশে ঘুরে বেড়ায় তাই সরকারী সাহায্য সহযোগীতা থেকেও এক প্রকার বঞ্চিত। যখন যে এলাকাতে থাকেন সেই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা যদি সদয় হন তাহলে হয়ত কিছু সাহায্য পায় অন্যথায় তাও কপালে জোটেনা।

মাহিনুর বেগম জানান, আগে একটি সাপ ধরে ৫/৭ শ টাকায় বিক্রি করতেন এখন ২শ টাকায়ও বিক্রি হয়না। অনেক কষ্টে পার হচ্ছে দিনগুলো।

তথ্য সূত্রে জানা গেছে, বেদে সাধারণ ভাবে বাদিয়া বা বাইদ্যা নামে পরিচিত একটি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠি। কথিত আছে যে, ১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শরনার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সাথে এরা ঢাকায় আসে। পরবর্তীকালে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। এরা প্রথমে ঢাকা বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে, পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও আসামে ছড়িয়ে পড়ে। বেদের আদি নাম মনতং। বেদে নামটি অবজ্ঞাসূচক বাইদ্যা (হাতুড়ে ডাক্তার)।

অধিকাংশ বেদেই নানা ভাবে চিকিৎসা সেবা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। বেদেরা আরাকান রাজ্যের মনতং আদিবাসি গোত্রের দেশত্যাগী অংশ। তাই এরা নিজেদের মনতং বলে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। যুদ্ধ ও শিকারে অতিশয় দক্ষ, বেদেরা কষ্টসহিষ্ণু ও সাহসী। বেদেরা পিতৃপ্রধান সমাজ হলেও মেয়েরা যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেদে ছেলেরা অলস প্রকৃতির, সব ধরনের কঠোর পরিশ্রম মূলত মেয়েরাই করে থাকে। বেদেরা সাধারণত সমতল ভূমিতে, নদ-নালার পাশে দলবদ্ধ ভাবে কুঁড়ে ঘর তৈরী করে অথবা নৌকায় বসবাস করে।

খুলনা গেজেট/ এস আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!