বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ছোট-বড় বিভিন্ন খালের কচুরিপানা কৃষকের ক্ষেতের পাকা ধান ঘরে তুলতে বাধা সৃষ্টি করছে। স্থানীয় কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুয়াযী এ বছর উপজেলায় বেরো মৌসুমে প্রায় ৩০ হাজার একর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। মাঠ ও বিল জুড়ে রয়েছে নয়নাভিরাম পাকা ধান। বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু সেই ফলন এখন বাড়িতে আনা দায়। প্রতিদিন আকাশে মেঘ জমছে। দিন যত এগোচ্ছে ধান ঘরে তোলা তত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। স্থানীয়রা কিছু কচুরিপানা অপসারণে চেষ্টা করলেও সে কাজ আর্থিক সংকটে থেমে গেছে। তাই পাকা ধান খেত থেকে বাড়িতে আনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক।
ধান চাষিরা জানান, প্রতিদিন ঝড়বৃষ্টির আতংকের মধ্যে একদিকে মাঠের পাকা ধান কাটার চাপ। অন্যদিকে কচুরিপানায় খাল আটকা থাকায় ধান নৌকায় করে বাড়ি আনতে না পারায় তারা এখন দিশেহারা। কারণ বৃষ্টির আগে মাঠের ধান কেটে বাড়িতে আনতে না পারলে চরম ক্ষতি হয়ে যাবে। এমন মারাত্মক সংকটের মুখে ভুক্তভোগীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উপজেলা প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চিতলমারী উপজেলার রায়গ্রাম এলাকায় গেলে ভুক্তভোগী কৃষক নূর মোহাম্মদ শেখ, দীনেশ রায়, বিকাশ হালদার, খিলিগাতির সেন্দোর হাওলাদারসহ অনেকে বলেন, ‘ধান পেকে গেলেও, খালে কচুরিপানার কারণে নৌকা দিয়ে বিল থেকে ধান আনতে পারছি না। আকাশে মেঘাচ্ছন্ন, বৃষ্টি নামলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে। আমাদের এক মেম্বার ভাই বাঁশতলা খালের কিছু কচুরিপানা অপসারণ করেছেন। চার কিলোমিটার খালটি এখন কচুরিপানায় আটকে আছে। এই খালের দুইপাড়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কচুরিপানার কারণে সেই ফসল ঘরে উঠাতে না পারলে আমার মতো অসংখ্য কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সরকারের জরুরি সাহায্যে যাতে কচুরিপানা অপসারণ হয় তার দাবী জানাই।’
নুর মোহাম্মদ শেখ আরও বলেন, ‘কিভাবে যে ঘরে ধান নিবো মাথায় কোন কাজ করছে না। এই খালে নৌকা কচুরিপানা আটকে আছে। পাকা ধান কেটে ওই নৌকায় করে বাড়ি নেয়া সহজ। এখন তো তা হচ্ছে না। এতো পরিশ্রমের ধান মাঠে নষ্ট হলে আর বাঁচবো না।’
স্থানীয় ইউ’পি সদস্য মোস্তফা তালুকদার জানান, সদর ইউনিয়নের ছোট-বড় প্রায় ১৩-১৪টি খাল কচুরিপানায় বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকেরা তাদের পাকা ধান ঘরে যাতে সহজে নিতে পারে সেই জন্য ইতিমধ্যে বাঁশতলা খালের কিছুটা জনগণ নিয়ে পরিস্কার করা হয়েছে। একটা মেশিন স্থানীয় ভাবে তৈরির কাজ চলছে। যা দিয়ে কচুরিপানা দ্রুত অপসারণ করা যাবে। কিন্তু আর্থিক সংকটে বাঁশতলা, গাবতলাসহ অন্য অন্য খালের কচুরিপানা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই জরুরী ভাবে সরকারি বরাদ্দ দরকার।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সিফাত-আল-মারুফ মোবাইলে জানান, অন্য বছর কৃষকেরা স্লুইসগেট হতে লবণ পানি ঢুকিয়ে খালের কচুরিপানা মারতো, তাতে উপকারে থেকে বেশি ক্ষতি হতো। এবার কৃষকেরা লবণ পানি না ঢুকানোয় বেশি লাভবান হয়েছে। কৃষক যাতে তাদের ফলন ভালো ভাবে ঘরে তুলতে পারে, তার জন্য সবধরনের সহযোগিতা করা হবে। সদর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি খাল কচুরিপানায় আটকে আছে।
এ ব্যাপারে জানতে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাপস পালকে দুইবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
খুলনা গেজেট/জেএম