পয়ঃনিষ্কাশন পাইপ বসানোর জন্য দুই ফুট সড়ক খোঁড়ার অনুমতি নিয়েছিলো খুলনা ওয়াসা। কিন্তু পাইপের পর সড়ক আরও ৬/৭ ফুট বর্গাকার করে খুঁড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ম্যানহোল। খুঁড়তে গিয়ে সড়কের আশপাশের অংশও ধসে পড়েছে। এরপর আরেক দফা খুঁড়ে বসানো হয়েছে সংযোগ পিট (আইপি) বা ছোট চেম্বার। তিন দফা খোঁড়ায় সড়কগুলো আর চলাচলের উপযোগী নেই।
এ অবস্থা নগরীর শেখপাড়া ক্রস-২, মির্জাপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ ১২টি সড়কের। পাইপ বসানো শেষে অল্প দিনের মধ্যে সড়ক উন্মুক্ত করার কথা ছিলো। কিন্তু ধীরগতির কাজের কারণে মাসের পর মাস বন্ধ রয়েছে এসব সড়ক। সড়কগুলোর করুণ দশা দেখে ক্ষুব্ধ খুলনা সিটি করপোরেশনও (কেসিসি)।
খুলনা ওয়াসা থেকে জানা গেছে, গত জুন মাস থেকে ‘খুলনা পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শুরু করে ওয়াসা। প্রকল্পের আওতায় নগরীর ২৭ হাজার বাড়ি থেকে পয়ঃবর্জ্য পাইপ লাইনের মাধ্যমে নগরীর সীমান্তবর্তী মাথাভাঙ্গা ও ঠিকারাবাঁধে দুটি পরিশোধন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হবে। এজন্য নগরীর ভেতরে ১৭৩ কিলোমিটার স্যুয়ারেজ পাইপ লাইন এবং ৭৭ কিলোমিটার সার্ভিস লাইন স্থাপন করা হবে। সহজে বর্জ্য স্থানান্তরের জন্য সড়কে স্থাপন করা হবে প্রায় ১১ হাজার ম্যানহোল। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। নগরীর সড়কে এখন পাইপলাইন স্থাপন, ম্যানহোল তৈরি এবং বাড়ি বাড়ি সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
॥ এক সড়কে তিন দফা খোঁড়াখুড়ি ॥
খুলনা নগরীর শেখপাড়া ক্রস-২ সড়কটিতে ওয়াসার কাজ শুরু হয়েছিলো গতবছরের ২২ জুন। প্রথম দফায় সড়কটির মাঝ বরাবর খুঁড়ে বসানো হয় পাইপ। প্রায় ৩ মাস ধরে চলা কাজ শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো এলাকার মানুষ। কিন্তু ওই মাস পার হওয়ার আগেই ফের সড়ক খুঁড়ে কংক্রিটের ম্যানহোল বসানোর কাজ শুরু করে ওয়াসা। এই কাজ চলে আরও ৪ মাস। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে শেষ হয় ম্যানহোল নির্মাণ।
দীর্ঘ খোঁড়াখুড়ি শেষ হওয়ায় হাফ ছেড়েছিলো এলাকার মানুষ। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষে একই সড়ক আবারও খুঁড়ে বাড়িতে সংযোগ প্রদান এবং সংযোগ পিট তৈরির কাজ শুরু করে ওয়াসা। গত সপ্তাহে সেই কাজও শেষ হয়েছে। সড়কটি মেরামতের জন্য আবারও খুঁড়তে হবে কেসিসিকে। একই সড়ক বার বার খোঁড়া, মাসের পর মাস যাতায়াতের ভোগান্তি নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত শেখপাড়া এলাকার মানুষ।
শুধু শেখপাড়া নয়; নগরীর সামছুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোডসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ ১২টি সড়কের অবস্থা এমনই। এসব সড়কে অসংখ্য শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ লক্ষাধিক মানুষের বাস। সড়ক দিয়ে যাতায়াতে কষ্টের শেষ নেই মানুষের। বেচাকেনা না থাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধের উপক্রম।
নগরীর শেখপাড়া ক্রস-২ সড়কের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান রহিম বলেন, সড়ক বার বার না খুঁড়ে একবারে কাজ করলে অর্থ সাশ্রয় হয়, মানুষের ভোগান্তিও কমে। কিন্তু এই সহজ বিষয়টা ওয়াসার কর্মকর্তাদের মাথায় কেন ঢোকে না- সেটাই ভুক্তভোগীরা বুঝে উঠতে পারছেন না।
॥ সড়কের করুণ দশা ॥
সরেজমিন দেখা গেছে, শেখপাড়া ক্রস রোড-২, বি কে রায় রোড, সামছুর রহমান ও আহসান আহমেদ সড়ক, ছোট মির্জাপুর ও বড় মির্জাপুর, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, ট্যাংক রোড, টিবি ক্রস রোডসহ অন্তত ১২টি সড়কে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। সড়কগুলোতে এখন চলছে ম্যানহোল ও গৃহসংযোগ দেওয়ার কাজ।
দেখা গেছে, পাইপের গর্ত ভরাট করা হয়েছে এবড়োথেবড়োভাবে। সেই অংশ দিয়ে যান চলাচলের উপায় নেই। এরমধ্যে ম্যানহোলের জন্য নতুন গর্ত খোঁড়া হচ্ছে। এতে যান চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ম্যানহোলের জন্য তৈরি প্রায় ৭/৮ফুট গভীর গর্তে আশপাশের মাটিও ধসে পড়েছে। এতে পুরো সড়কই যানচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কাজ চলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ এসব সড়ক।
সামছুর রহমান সড়কের ব্যবসায়ী হেলাল চৌধুরী বলেন, সড়ক খোঁড়াখুড়ির কারণে ক্রেতারা এদিকে আসতে পারেন না। বেচাকেনা প্রায় বন্ধ। ওয়াসার কারণে এখন পথে বসার অবস্থা।
সামছুর রহমান রোডের শিক্ষা সহায়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারএইডের পরিচালক আজিজুল হক বলেন, প্রায়ই সড়কটি বন্ধ থাকে। ধুলো কাদার মধ্যে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসতে চায় না। খানাখন্দের কারণে অনেকে রিকসা থেকে পড়ে আহতও হয়েছে।
এ ব্যাপারে খুলনা সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, এক সড়ক বার বার খোঁড়ায় একদিকে যেমন দুর্ভোগ বাড়ছে, অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করলে এগুলো এড়ানো যেতো।
সার্বিক বিষয় নিয়ে খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ বলেন, শুরুতে পাইপ বসানোর পরে ম্যানহোল নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো। প্রথম পাইপ বসানোর পর পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন সড়কে পাইপলাইন, ম্যানহোল ও পিট একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। কোনো সড়কই বার বার খোঁড়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কেসিসির সঙ্গে যৌথ জরিপে সাড়ে ৭ ফুট করে সড়ক খোঁড়ার কথা ছিলো। সে অনুযায়ী ক্ষতিপূরণের টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত কোনো অংশ খোঁড়া হয়নি। তাহলে কেন অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ চাইছে বুঝতে পারছি না।
খুলনা গেজেট/এইচ এইচ