খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

এনজিওতে জমানো টাকা ফেরৎ পেতে মাঠকর্মীর বাড়িতে গ্রাহকদের অবস্থান

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় বরসা এনজিও থেকে জমানো টাকা ফেরৎ পেতে গ্রাহকরা মাঠ কর্মী তপন গায়েনের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। ৯ মার্চ থেকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার জাওয়াখালি গ্রামের ওই বাড়ি ঘেরাও করে রাখার পর কৃষি জমি দখলের উদ্দেশ্যে সোমবার সকালে খুঁটি পুঁতা হয়েছে।

অভিযোগ, তপন গাইনের তিন ভাই ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। রাতের আঁধারে ইট পাটকেল ছোড়া হচ্ছে। পলিথিনে করে ছোঁড়া হচ্ছে মানুষের বিষ্টা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোববার শ্যামনগরের জাওয়াখালি গ্রামের বরসা এনজিও এর শ্যামনগর শাখার মাঠ কর্মী তপন গাইনের বাড়ির ভেতরে ২৫ থেকে ৩০ জন নারী অবস্থান নেয়। উঠানে কাপড় টানিয়ে বাসা বানানোর পর সেখানে অবস্থান করছেন একই গ্রামের তফিজউদ্দিন ঢালী । বাড়িতে গ্রাহকদের অবস্থানের কারণে তপন গাইন বাড়িতে না থাকায় তার স্ত্রী শ্যামলী গাইন পাশে ভাসুর সন্তোষ গায়েনের বাড়িতে চলে যান। এ ঘটনায় তপন গায়েনের স্ত্রী, সন্তোষ গায়েন, শান্তি স্বরুপ গায়েন ও স্বপন কুমার গায়েন ও তাদের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ।

জাওয়াখালি গ্রামের হালিমা খাতুন বলেন, তপন গায়েন বরসা এনজিও এর মাঠকর্মী হিসেবে তাকে বেশি লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৪ সাল থেকে মাসিক ২০০ টাকা কিস্তিতে ৪০ হাজার টাকা জমা নিয়েছেন। পাস বইয়ে ওই টাকার উল্লেখ রয়েছে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিন বছর কেটে গেলেও ফিরে পাননি আসল টাকা।

একই গ্রামের মর্জিনা খাতুন বলেন, ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন তপন গায়েনের মাধ্যমে। পাঁচ বছরে ডবল হওয়ার কথা থাকলেও সাত বছর পেরিয়ে গেলেও টাকা পাননি আজো। বাধ্য হয়ে তারা ৯ মার্চ থেকে তপন গায়েনের বাড়ির উঠানে দিন রাত অবস্থান করছেন।

একইভাবে ২০১৪ সালে মোমেনা চার লাখ, জাহানারা খাতুনসহ তার পরিবারের তিন সদস্য ৮১ হাজার টাকা, লিয়াতক গাজী ও তার পরিবারের সদস্যরা দেড় লাখ টাকা, আশামনি ৪০ হাজার, ছখিনা ৫০ হাজার, আয়েশা এক লাখ ২০ হাজার, রাবেয়া ৯০ হাজার, শেফালী খাতুন এক লাখ নয় হাজার, মাসুরা দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়েও এ পর্যন্ত কোন টাকা ফেরৎ পাননি।

মনোয়ারা খাতুন তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে ৭০ হাজার টাকা ফেরৎ পেলেও গৌর পদ মণ্ডল নয় লাখ টাকা জমা দিয়ে একটি টাকাও ফেরৎ পাননি। এভাবে শ্যামনগর শাখার প্রায় চার হাজার গ্রাহক প্রতারিত হয়েছেন বলে তাদের অভিযোগ।

তপন গায়েনের বাড়িতে অবস্থানকারী গ্রহকরা জানান, তাদের অধিকাংশই বরসা এনজিও এর অফিস চেনেন না। চেনেন তপন গায়েনকে। তার কথামত টাকা জমিয়েছেন। টাকা দেওয়ার কথা বলে তিন মাস আগে থেকে তপন গায়েন এলাকায় আসছেন না। তার দুই মেয়েও বাড়িতে আসে না। স্ত্রী রয়েছেন বাড়ি পাহারা দিতে। বরসা এনজিও কর্ত্তৃপক্ষের কথা বলে টাকা দেওয়ার জন্য বারবার সময় নিচ্ছেন তপন গায়েন। মোবাইল করলেই বলেন মিটিং এ আছেন। তপন গাযেনের আলিশান বাড়ি দেখিয়ে তারা বলেন, টাকা জমা না দিয়ে তপন এ বাড়ি বানানোসহ কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। ব্যংকে জমিয়েছেন বিপুল পরিমান টাকা। আর কোন সময় নয়। রোজা শুরুর আগেই তপন গায়েনের জমি জায়গা সব দখল করে নেবেন। এ টাকা না পাওয়ায় তাদের পরিবারে অশান্তির শেষ নেই বলে অভিযোগ করেন । সুদ নয়, জমাকৃত টাকা ফেরৎ দিলেই তারা তপনের বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন বলে জানান।

তপন গায়েনের স্ত্রী শ্যামলী গায়েন বলেন, বরসা এনজিও মালিক আনিছুর রহমান মারা যাওয়ায় রতনপুর, শ্যামনগর, আশাশুনিসহ বিভিন্ন শাখার গ্রাহকরা টাকা ফেরৎ পেতে শাখা অফিস ঘেরাওসহ মানববন্ধন করে যাচ্ছে। এরই মাঝে আনিছুর রহমানের ভাই আশিকুর রহমান গ্রহকদের টাকা ফেরৎ দিতে বার বার সময় নিচ্ছেন। ফলে দিনমজুর, কৃষক ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষজন ধৈর্য্য হারিয়ে মাঠ কর্মী ও ম্যানেজারদের বাড়ি ঘেরাও করছে। ৯ মার্চ থেকে তার বাড়িতে অবস্থান করছে শতাধিক গ্রাহক। ভয়ে তিনি রাতে অন্যত্র অবস্থান করেন। হলে স্বামী ও মেয়েরা বাড়িতে আসতে পারছেন না।

এ ব্যাপারে বরসা এনজিও এর বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, তারা গ্রাহকদের টাকা পর্যায়ক্রমে ফেরৎ দেওয়ার জন্য আগামী ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল ইসলাম বাদল বলেন, টাকা ফেরৎ না পাওয়ায় গ্রাহকরা তপন গায়েনের উপর ক্ষুব্ধ। তবে বিষয়টি নিয়ে তার স্বজনদের উপর কোনরুপ হুমকি দেওয়াটা বেআইনি।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!