খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুইজন নিহত
  মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ
বিশ্ব বেতার দিবসের সাক্ষাৎকার

একসময় বিনোদনের একমাত্র মাধ্যম ছিল বেতার : আঞ্চলিক পরিচালক

একরামুল হোসেন লিপু

বিশ্ব বেতার দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক নিতাই কুমার ভট্টাচার্য খুলনা গেজেটের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মহান মুক্তিযুদ্ধে বেতারের ভূমিকা, এক সময় বেতার একমাত্র বিনোদনের মাধ্যম, বর্তমান ডিজিটাল এবং স্মার্ট বাংলাদেশে অন্যান্য মিডিয়ার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কিভাবে বেতার এখনো ঠিকে আছে এসকল বিষয় নিয়ে কথা বললেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেতার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় গণমাধ্যম। ১৯৩৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় ধনী বিস্তার দিয়ে সারা ভারতীয় উপমহাদেশের ৬ টি রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম এর যাত্রা শুরু হয়।পরবর্তীকালে বিভাগীয় শহরগুলোতে এর কেন্দ্র স্থাপিত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ১৪ টি কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার তার প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে। ১০০ বছরের কাছাকাছি সবচেয়ে প্রাচীন গণমাধ্যম হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার।

বাংলাদেশ বেতার হচ্ছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের পূর্বসূরী। আর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তিযুদ্ধের দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করেছে। প্রথম ফ্রন্ট হচ্ছে পাকিস্তান কাউন্টার পার্টি এর মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণ যারা মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।এই যে সম্মুখ সমরে যারা অংশগ্রহণ করে এদেরকে উজ্জীবিত করার জন্য যে গণমাধ্যমটি সর্বতো এবং নিরলসভাবে কাজ করেছে সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ বেতার।

যেটির নাম ছিল ওই সময় “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র”। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বুদ্ধ, উজ্জীবিত এবং উৎসাহ দেয়ার জন্য নানা ধরনের অনুষ্ঠান তৈরি করে সেগুলো প্রচার করা হতো। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করা হতো। এজন্য সরকার ২০০৬ সালে বাংলাদেশ বেতারকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে। এটা বাংলাদেশ বেতারের জন্য একটা বড় অ্যাসিভমেন্ট।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী জনগণকে বিভিন্নভাবে সচেতন করার জন্য বাংলাদেশ বেতার বিভিন্নভাবে কাজ করেছে। আমাদের দেশে কৃষির যে বিপ্লব, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, মাতৃ মৃত্যুর হার কমানো এগুলোর পিছনে বাংলাদেশ বেতারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে মানুষের তথ্য, বিনোদন এবং শিক্ষা বিস্তারে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে বাংলাদেশ বেতার। এক সময় আমাদের দেশের মানুষের একমাত্র বিনোদন ছিলো বাংলাদেশ বেতার। কিন্তু কালের বিবর্তনে বাংলাদেশে টেলিভিশন এসেছে, পত্রিকা, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া এসেছে। এখন আমাদের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এই প্রতিযোগিতার সময় আমাদেরকে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। আর এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এখনো কিন্তু আমরা টিকে আছি। এর পিছনে কিন্তু অনেকগুলো উইনডো জাজ করছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ বেতার শুধুমাত্র তার সেটের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা এই প্রচার ট্রেন্টটাকে আরো পরিকল্পিতভাবে বিস্তৃত করেছি।

সরকার যে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছে। এখন আমরা ঘরে বসে অনেক সেবা পাচ্ছি, মোবাইল ব্যাংকিং করতে পারছি। দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বেতারও এর থেকে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ বেতার এখন চ্যালেঞ্জের মুখে। এখন আগের মতো রেডিও সেট নেই। সকল কিছুই এখন মোবাইল বেজ হয়ে গেছে। সমস্ত কিছুই এখন সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইলের মধ্যে চলে এসেছে। বাংলাদেশ বেতারকে যদি টিকে থাকতে হয় তাহলে এই স্মার্ট ভার্সনের মাধ্যমে টিকে থাকতে হবে। তাহলে আমাদের রেডিওকে একসেপ্ট করবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শুধু রেডিও সেটের উপর নির্ভরশীলতা তা নয়। এখন বাজারে আগের মতো রেডিও সেট পাওয়া যায় না । এই জন্য আমরা এখন মাল্টি এপ্রোচ অনুষ্ঠান প্রচার করছি।

মোবাইলে এ্যাপস ডাউনলোডের মাধ্যমে রেডিওর অনুষ্ঠান মানুষ শুনতে পারছে। আর কত মানুষ শুনছে সেটা কিন্তু আমরা টিআরপির মাধ্যমে জানতে পারছি। এখন বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের প্রচারিত অনুষ্ঠান লক্ষ লক্ষ শ্রোতা, দর্শক শুনতে, দেখছে। একই ছাতার নীচে বসে আমরা অডিও ভিজ্যুয়াল অনুষ্ঠান প্রচার করছি, অডিও তৈরি করছি, প্রিন্ট ভার্সনে আসছি, ফেসবুক, ইউটিউব ব্যবহার করছি। আমরা সেটের মাধ্যমে অনুষ্ঠান প্রচার করছি যেটা গাড়িতে বসে শোনা যায়। এই যে আমরা মাল্টি এপ্রোচ অনুষ্ঠান প্রচার করছি এর মাধ্যমে খুলনা বেতার কেন্দ্রের অডিও ভিজ্যুয়াল লক্ষ লক্ষ শ্রোতা এবং দর্শক এগুলো দেখছে, কমেন্টস করছে।

এখন টেলিভিশন এবং পত্রিকাকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছি। এক সময় বাংলাদেশ বেতার ছিলো ট্রেডিশন্যাল মিডিয়া বা একমুখী প্রচার মাধ্যম। যেখানে জনগণের সম্পৃক্ততা ছিল না। তখন জনগণ অনুষ্ঠান শুনছে কি শুনছে না সেটা কিন্তু আমাদের তদারকি বা ধারণা ছিল না। ট্রেডিশন্যাল সিস্টেমে প্রচার একমুখী। আগে মানুষ চিঠি লিখে মনের ভাব প্রকাশ করত। এখন বাংলাদেশ বেতারে পিপলস পার্টিসিপেশন হয়েছে। এখন শ্রোতারা কি শুনতে চায়, দর্শক কি দেখতে চায় তার মতো করে অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। এক একটা শ্রেণী বা পেশার যে চাহিদা সেই চাহিদা অনুযায়ী আমাদেরকে অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে হবে। শ্রোতা এবং দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী যদি আমরা অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে পারি তাহলে রেডিও টিকে থাকবে এটাই এখন রেডিও’র বড় চ্যালেঞ্জ।

অন্য মিডিয়াগুলো সমাজের ত্রুটি-বিচ্যুতি গুলো তুলে ধরে এ কারণে যে তাদের পেপার কাটতি হবে নিউজ কাটতি হবে। আর আমরা কি করি উন্নয়ন, সম্ভাবনার বার্তা, সরকারের উন্নয়নের বার্তা, সরকারের সেবা জনগণের ভিতর সঠিকভাবে পৌঁছাচ্ছে কিনা সেটা আমরা সঠিকভাবে তুলে ধরি। আগে বেতার যে একমুখী মিডিয়া ব্যবস্থাপনা ছিলো এখন সেটা মিডিয়া কনভারসেশনের যুগে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার খুলনা কেন্দ্রের ১০ টি জেলায় যারা শিল্প ও সাহিত্য, কৃষি নিয়ে কাজ করে তাদের যে ট্যালেন্ট সেগুলো বেতারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। যা অন্য কোন প্রতিষ্ঠান করে না। আমাদের দেশের শিল্প, সাংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা বেতারের প্রধান কাজ। বাংলাদেশ বেতারের জিওগ্রাফিক্যাল সারা বিশ্বব্যাপী অগ্রযাত্রায় চলবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ বেতারও কাজ করবে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!