খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু
  বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় আজ জরুরী সিন্ডিকেট সভা আহ্বান
শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নে নানামুখী পদক্ষেপ

উপাচার্যের কর্মমেয়াদের এক বছরেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতি‌বেদক

করোনা মহামারীর এক স্থবির পরিস্থিতির মধ্যে ২০২১ সালের ২৫ মে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম উপাচার্য হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই শিক্ষক-গবেষক প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন। তখন সারাদেশে সশরীরে শিক্ষাকার্যক্রম বন্ধ ছিলো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য কার্যক্রমও হয়ে পড়েছিলো স্থবির। এ পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব গ্রহণ করলে তাঁর সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। এছাড়া করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে পড়ে থাকা শত কোটি টাকারও বেশি অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ সচল করাও ছিলো চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ায় তিনি যোগদানের পরপরই শিক্ষা, গবেষণা ও অবকাঠামো উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন।

এর ফলে সার্বিক ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গবেষণার ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নতুন উদ্যম। উপাচার্যের একান্ত প্রচেষ্টায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য এযাবতকালের সর্বোচ্চ ১৪৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকার রাজস্ব বাজেট বরাদ্দ পেয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

গত এক বছরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে উপাচার্য অনেকগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। করোনা মহামারীর মধ্যে অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ ও পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অর্ডিনেন্স সংশোধন করা হয়। চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল কর্তৃক প্রণীত স্ট্যান্ডার্ড এন্ড ক্রাইটেরিয়া অর্জনে সরকার কর্তৃক সকল বিশ্ববিদ্যালযের জন্য প্রণীত শিক্ষক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশন নীতিমালার আলোকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নয়ন এর ক্ষেত্রে যুগোপযোগী একটি নীতিমালা প্রণয়ন এবং সিন্ডিকেট কর্তৃক অনুমোদনের মাধ্যমে তা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেম ওয়ার্ক এবং বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল এর গাইড লাইন অনুসরণ করে আন্ডার গ্রাজুয়েট ও মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য প্রোগ্রাম ও অর্ডিনেন্স অনুমোদন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি অটোমেশনের কাজ সম্পন্ন করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের পর আইকিউএসি’র মাধ্যমে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ২১টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের মাধ্যমে অনলাইনে প্রথম বর্ষে রেজিস্ট্রেশনে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব তৈরির কাজ শুরু হয়েছে।

এছাড়া এই মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উদ্দেশ্য সাধনসহ অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যবহারের জন্য একটি অত্যাধুনিক মানের ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল পর্যায়ে গভর্নেন্স জোরদারে সিনেট কার্যকরের অংশ হিসেবে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন শেষ হয়েছে এবং গ্রাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

ই-নথি কার্যক্রম বাস্তবায়নে প্রথম পর্যায়ে ৪টি ধাপে প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। আগামী অর্থ বছরে যথাশীঘ্র সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ে ই-নথি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে গ্রিন ক্যাম্পাস হিসেবে গড়ে তুলতে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের জন্য ৬৪ লাখ টাকার একটি পরিবেশবান্ধব প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। যার বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে।

গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বর্তমান উপাচার্য। বিশেষ করে গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি তথা নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণার অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ৬২টি গবেষণা প্রকল্পে দুই কোটি টাকারও বেশি অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়েছে। মাস্টার্স, এমফিল ও পিএইডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা অনুদান প্রবর্তন করা হয়েছে।

এ খাতে ইতোমধ্যে ৭৭ জন গবেষককে ৬১ লাখ ২০ হাজার টাকা আনুষ্ঠানিভাবে গবেষণা অনুদান প্রদান করা হয়েছে। গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে আইকিউএসির মাধ্যমে নবীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে কেন্দ্রীয় গবেষণাগারের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণা সেলে স্থাপিত আরটি-পিসিআর মেশিনে করোনা নমুনা পরীক্ষা করা হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেডিকেল সেন্টারে ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান সৃষ্টিতে সবিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজকে যুগোপযোগী করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-গবেষকদের রিসার্চ আইডি খুলতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।

বিশ্বের উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথ শিক্ষা ও গবেষণায় ৯টি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি-ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোলাবরেশন বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং ইতোমধ্যে ২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০ তলা জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, ৫ তলা আইইআর ভবন, ৪ তলা মেডিকেল সেন্টার, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পার্শ্ব ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, টিএসসি ভবন, জিমনেশিয়াম কমপ্লেক্স, দুটি ভবনের ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে ১২৫ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ উল্লেখযোগ্য।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!