ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) জাদুর বাক্স বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলাম মধু।
তিনি বলেন, ভোটের কোনো সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। অন্য প্রার্থীর সমর্থকদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। অথচ নৌকার প্রার্থী হলে তাকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। আমি এখনও বলি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা সন্দেহ।
তবে তিনি শেষ পর্যন্ত ভোটে লড়বেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সোমবার (১২ জুন) সকাল পৌনে ১১ টার দিকে নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের খুলনা কলেজিয়েট স্কুল কেন্দ্রে ভোট প্রদান শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেও বলেছি ‘ইভিএম হচ্ছে একটি জাদুর বাক্স’। আমি কয়েকটা কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করেছি সেখানে ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়েছে। পল্লীমঙ্গল ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াবাটিতে মেশিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যারা দায়িত্ব পালন করেছে তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা বলেছে মেশিনে ডিস্টার্ব দিয়েছে। দুই ঘণ্টা হয়ে গেলেও ভোট কাস্ট হয়েছে ৩০টি। ২ ঘণ্টায় যদি ৩০টি ভোট হয় তাহলে ভোটের সংখ্যা কমে। আমার সন্দেহ হচ্ছে এখানে কোনো কারচুপি আছে কি না। খুলনা-২ আসনের ভোটারদের ইভিএম সম্পর্কে কিছু ধারণা আছে। কিন্তু খুলনা-৩ আসনের ভোটারদের মোটেও ধারণা নেই। তারা বলেছে একটা ভোট দিতে গেলে ২০/২৫ মিনিট সময় লেগে যায়। আমি নির্বাচন কমিশনকে আগেই বলেছি আপনাদের এই ‘জাদুর বাক্স’ এইবার মাফ করেন, শুনলো না। বেশিরভাগই একঘণ্টা ইভিএম চালাতে পারে নাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা দরকার।
ইভিএম মেশিন পরিচালনায় প্রিজাইডিং অফিসারদের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মধু বলেন, অফিসাররা ইভিএম পরিচালনায় দক্ষ না। তাদের অদক্ষতার কারণে ভোটাররা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, ভোট দিতে পারছে না। অনেক সময় লাগছে। এগুলো আমি এর আগে বারবার বলেছি, আবার আপনাদের বললাম।
নিজ দলের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ মেয়র প্রার্থী। তিনি বলেন, নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমার এজেন্টকে বের করে দিয়েছে। পরে আমি জানতে চেয়েছি কেন আমার প্রার্থীদের বের করে দেওয়া হলো। তারা আমাকে কোনো উত্তর দিতে পারেনি।
কোন কোন কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভোটার উপস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আধিপত্য এবং ভয় থেকে মানুষ ভোটকেন্দ্রে কম আসছে। তবুও তিনি ভোটারদের ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, অবশ্যই থাকবো। রাত ১২টা পর্যন্ত আছি। আমি একটা দলের থেকে প্রার্থী হয়েছি আমি কেন মাঝপথে ছেড়ে দেব।
ভোটের ফলাফল মেনে নিবেন কি না তা স্পষ্ট করেননি মধু। তিনি বলেন, এখনও সময় আসেনি। আরও অনেক সময় পড়ে আছে।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনের মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), জাতীয় পার্টির এস এম শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আব্দুল আউয়াল (হাতপাখা), স্বতন্ত্রপ্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান (দেয়াল ঘড়ি) ও জাকের পার্টির এস এম সাব্বির হোসেন (গোলাপ ফুল)।
৩১টি ওয়ার্ডের ২৮৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭৩২টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ চলছে। ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ জন ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যার মধ্যে নগরীর ১৩ ও ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ২ জন কাউন্সিলর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এবারের সিটি নির্বাচনে ৩১টি ওয়ার্ডে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ২ লাখ ৬৬ হাজার ৬৯৬ জন ও পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৬৮ হাজার ৮৩৩ জন।