খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  আজ খুলছে সব স্কুল-কলেজ
  রাতভর জ্বলছে সুন্দরবন, দেড় কি.মি. এলাকাজুড়ে আগুন

আশাশুনি সড়কে সহস্রাধিক মরা রেইন্ট্রি, যান চলাচলে বাড়ছে ঝুঁকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কে এক থেকে দেড় হাজার মরা রেইন্ট্রি গাছ এখন যান চলাচলের জন্য চরম বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত শুকনা ডাল ভেঙে পড়ছে যানবাহন ও পথচারীদের গায়ে। ফলে বাড়ছে নানা দুর্ঘটনা। দ্রুত এসব মরা গাছ সড়কের দুইধার থেকে সরিয়ে না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

ভুক্তভোগিদের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট জেলা পরিষদ ও সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে সড়কটি যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য অনিরাপদ হয়ে পড়ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়কের ধুলিহর বাজারের পাশে কয়েক মাস আগে ডাল ভেঙে স্কুলছাত্র প্রণব সরকার গুরুতর আহত হয়। সে আশাশুনি সদরের শংকর সরকারের ছেলে। সম্প্রতি সড়কের মালির মোড়ের কাছে চলন্ত মোটরসাইকেলের ওপর ডাল ভেঙে পড়ায় মারাত্মক আহত হন সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের আরশাদ আলী ওরফে ভোলা। তার কোমরের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানায় পরিবার। বেশ কিছুদিন আগে মোটরসাইকেলে যাওয়ার পথে সড়কের মেল্লেকবাড়ী মোড়ের কাছে ডাল ভেঙে গুরুতর আহত হন মোটরসাইকেল আরোহী ফারুক হোসেন।

ধুলিহর ইউনিয়নের জাহানাবাজ গ্রামের বাসিন্দা আকতার হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও গোপাল চন্দ্র মন্ডল জানান, রাস্তার দু‘পাশে সারি সারি মরা রেইন্ট্রি গাছের কারণে তাদের ছেলে মেয়েরা নিরাপদে স্কুল কলেজে যেতে পারেনা। এসব মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যে কোনো সময় পথচারীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে।

তারা আরও জানান, গত কয়েক বছর যাবত এক থেকে দেড় হাজার রেইন্ট্রি গাছ মরে আছে আশাশুনি সাতক্ষীরা সড়কে। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি কমে গেছে। কয়েক বছরে মাটিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। এ কারণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন সড়ক মহাসড়কে প্রায় দেড় হাজার রেইনট্রি যারা গেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. নাসরিন আক্তার জানান, রেইনট্রি মরে যাওয়ার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাটির লবণাক্ততা ও ক্ষার বেড়ে যাওয়া। তাছাড়া প্রত্যেক গাছের নিজস্ব বৈশিষ্ট রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাত কমে গেছে। মৌসুমি বৃষ্টি না হলে রেইনট্রি গাছ খাদ্য সংকটে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও গাছ মরে যেতে পারে।

সাতক্ষীরা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ জানান, সড়কটির দু‘পাশেই অসংখ্য মরা রেইনট্রি গাছ এখন যাত্রীবাহী যান চলাচলে মারাত্মক ঝুকির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, প্রায়ই শুকনা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে যাত্রীবাহী বাসের উপর। এতে করে যাত্রীসহ বাস চলাচলে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা আশাশুনি সড়কটি। তিনি দ্রুত এসব মরা রেইন্ট্রি গাছ কর্তন করে সড়কটি নিরাপদ রাখতে জেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট সামাজিক বনবিভাগের কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানান।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ জানান, এটি অত্যন্ত দু:খজনক। জনবহুল ও ব্যস্ততম একটি সড়কে সহস্রাধিক মরা রেইন্ট্রি গাছ দীর্ঘদিন কর্তন বা অপসারন হচ্ছে না। কেন এতো দায়িত্ব অবহেলা? এই সড়কে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। তিনি অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সব মরা গাছ অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সামাজিক বনবিভাগ সাতক্ষীরা জেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিএম মারুফ বিল্লাহ জানান, আশাশুনি সাতক্ষীরা সড়কের পাশে যে সমস্ত গাছ আছে তার মালিক জেলা পরিষদ। তবে মরা গাছের মুল্য নির্ধারণ করে এক বছর আগে সাতক্ষীরা জেলা পরিষদকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরও কেন তারা গাছ কর্তনের জন্য টেন্ডার আহবান বা অন্য কোনো প্রক্রিয়া গ্রহণ করেননি তা বলতে পারবো না।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা খলিলুর রহমান জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এসব মরা গাছ কর্তন বা অপসারণ করা হবে। তিনি বলেন, সামাজিক বনবিভাগের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়েছে এসব গাছের আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করার জন্য। সম্ভাব্য মূল্য নির্ধারণ করার পরই টেন্ডার আহবান করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!