খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চাওয়াই নদীতে গোসলে নেমে প্রাণ গেল দুই শিশুর
  গরুবাহী নছিমনের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত
  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

আশাশুনিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নে জমির দখল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ২৭ জন আহত হয়েছে। এসময় ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ভাংচুর করা হয়।

রোববার (১৩ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনুলিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে এঘটনা ঘটে। এঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। গুরুতর আহত ৬ জনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সদর হাসপাতালে ভর্তি আহতরা হলেন, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার রাজাপুর গ্রামের মোসলেম আলী সানার ছেলে মোঃ সিদ্দিক সানা (৪৫), একই গ্রামের বাবুরালী সানার ছেলে মনিরুল সানা (৩৫)ও আনার আলী (৩৩), আবুল সানার ছেলে মফিজুল ইসলাম (৩০), মৃত নুর আলী সানার ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৩) ও মুনসুর আলী সানার স্ত্রী হামিদা খাতুন।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, রাজাপুর চৌরাস্তার মোড়ে জমির দখল নিয়ে ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল এবং আয়ুব আলী এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব, মারামারি ও হামলা মামলা চলে আসছে। এনিয়ে কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধনও করা হয়েছে। থানা পুলিশ, জন প্রতিনিধি ও গ্রাম্য শালিস মিমাংসাও হয়। কিন্তু পরবর্তীতে একটি পক্ষ মেনে না নেওয়ার ঘটনায় পরিস্থিতি ক্রমশঃ ঘোলাটে হতে থাকে। বিরোধপূর্ণ স্থানে ইতিমধ্যে মেম্বার বাধাবিপত্তির মধ্যে পাকা ঘর নির্মান কাজ করে আসছেন। এনিয়ে রোববার উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুল জানান, প্রতিপক্ষ আয়ুব আলী দিং শনিবার ঘরের কাজে বাধা দিয়ে মিস্ত্রীর ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়ে যায়। রোববার ফের মোশা ঢালীর নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ অফিসে ভাংচুর করে। বাধা দিতে গেলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে তাদের ১০ জনকে রক্তাক্ত জখম করে। তারা আইন আদালত মানেনা। অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ও ভাংচুর করে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছে। খুন জখমের হুমকী দিয়েছে বলে দাবী করেন তিনি।

ইউপি সদস্য মামুন ইকবাল শহিদুলের পক্ষের আনারুল সানা, মনিরুল সানা, মফিজুল, ছিদ্দিকুর সানা, আবু ছাইদ, শফিকুল সানা, সিরাজুল সরদার, আলা উদ্দিন সানা, মাছুরা খাতুন, হামিদা খাতুন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত ৬ জনকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অপর পক্ষের হাসান গাজী জানান, পরিকল্পিত ভাবে তাদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। তাদের কয়েকজন মৎস্য ঘের থেকে বাড়ি ফেরার পথে মারপিটের শিকার হলে ঘটনার সুত্রপাত হয়। খবর পেয়ে আমাদের লোকজন ঠেকাতে গেলে নির্মমভাবে মারপিট করে ১৭ জনকে আহত করে। এসময় তারা নিজেরা প্রকাশ্যে আওয়ামীলীগ অফিস ভাংচুর করে অন্যদের উপর দায় চাপিয়ে ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।

সংঘর্ষে আয়ুব আলী পক্ষের কদম আলী শেখ, মইদুল মোড়ল, নুরুজ্জামান গাইন, সুরাইয়া খাতুন, হাসান গাজী, শিশু সাব্বির (৯), আয়ুব গাইন, মোশাররফ ঢালী, শাইনুর ঢালী, জামিনুর গাজী, খোরশেদ শিকারী, মুছা শিকারী, এছমাইল শিকারী, লাভলু গাজী, শাহিন সরদার, রহিম সরদার, আলম সরদার আহত হন। গুরুতর আহত প্রথমোক্ত ৭ জনকে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রতক্ষ্যদর্শী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ জানান, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের এলাকা ছাড়া করতে রাজাপুর গ্রামের কাজল শেখের ছেলে শেখ জালাল উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে দলীয় লোকজন নিয়ে পাঁয়তারা করছে। তার জের ধরে রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে অবৈধ টাকার মালিক জালাল উদ্দিনের মদদে রাজাপুর গ্রামের মৃত মুজো ঢালীর ছেলে হত্যা ও একাধিক নাশকতা মামলার আসামি বিএনপি কর্মী মোশাররফ ঢালী মোশা ও উত্তর একসরা গ্রামের মৃত ফজলু ঢালীর ছেলে শাহীনুর ঢালীর নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের সন্ত্রাসী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর করে। এসময় তারা ঘরের টিনের বেড়া দা দিয়ে কাটতে শুরু করেও ভাংচুর চালিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। খবর পেয়ে স্থানীয় আ’লীগের নেতা কর্মী ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে মারপিট করে জখম করা হয়।

এবিষয়ে আনুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর আলম লিটন জানান, বিগত ২০১০ সাল থেকে ওখানে আওয়ামী লীগের অফিস চলছে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে জালাল উদ্দিন এলাকায় এসে সরকার বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বিএনপি-জামায়াতকে অর্থ জোগান দিয়ে যাচ্ছে এবং নাশকতা ও হত্যা মামলার আসামিদেরকে এলাকায় এনে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুর ও নেতাকর্মীদের উপর হামলার জন্য উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের পরামর্শ নিয়ে থানায় এজাহার দাখিল করার কথা জানান তিনি।

এ ব্যাপারে আশাশুনি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মমিনুল ইসলাম (পিপিএম) জানান, আনুলিয়ায় উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। আহতরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতাযয়ন করা হয়েছে। এখন ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখনো কেউই অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যাবস্থা নেয়া হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!