খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  প্রথম ধাপের উপজেলা ভোট শেষ, চলছে গণনা
  উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ : রিজভী
  তেঁতুলিয়ার খয়খাটপাড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

আমেরিকায় সপ্তাহে দুটি সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাচ্ছে

আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু

২০০৫ সাল থেকে আমেরিকায় প্রায় ২,২০০ সংবাদপত্রের প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। বহু সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। শুধু যে সংবাদপত্র বন্ধ হয়েছে বা সার্কুলেশন কমেছে তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সাংবাদিক সংখ্যাও অনেকে কমেছে। ২০০৮ সালে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় রিপোর্টার, ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার ও বিভিন্ন পর্যায়ের সম্পাদক সংখ্যা ২০০৮ সালের ১ লাখ ১৪ হাজার থেকে কমে ২০২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার; অর্থৗাৎ ৩০ হাজার সাংবাদিক চাকুরিচ্যুত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় দৈনিক ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ এর মুদ্রিত মূল্য পরিশোধিত সার্কুলেশনও কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। ২০২১ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের রোববারের সার্কুলেশ যেখানে ৮ লাখ ৬০ হাজার ছিল, ২০২২ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৫ হাজারে। তবে আশার কথা দৈনিকটির ডিজিটাল সার্কুলেশন বেড়েছে বহুগুণে। ২০১৯ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের ডিজিটাল গ্রাহক যেখানে ১৬ লাখ ছিল, ২০২০ সালে তা ৬৬ শতাংশ বেড়ে ২৩ লাখে পৌছে। টাইমস আশার করছে ২০২৪ সালের মধ্যে তাদের ডিজিটাল গ্রাহক সংখ্যা ৭৫ লাখে পৌছবে। নিউইয়র্ক টাইমস ২০১৯ সালে আয় করেছিল ৫৯৮.৩ মিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ বিলিয়ন ১৯৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সব সংবাদপত্র এতটা সৌভাগ্যবান নয়।

২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২০ সালে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত সার্কুলেশনের এক তৃতীয়াংশ দৈনিক লে-অফ করেছে। ফলে কর্মচ্যুত হয়েছে অনেক সাংবাদিক ও সংবাদপত্র কর্মচারি। আড়াই লাখ বা এর বেশি সার্কুলেশনের দৈনিকের অর্ধেক ২০২০ সালে লে-অফ করেছে। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষা অনুযায়ী, এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান সংবাদপত্রগুলোর এক তৃতীয়াংশ বন্ধ হয়ে যাবে। তবে ইতোমধ্যে লে-অফ করা সংবাদপত্রের অনেকগুলো স্বল্প জনশক্তি নিয়ে শুধু ডিজিটাল ভার্শন চালু রেখেছে।

‘ব্রুুকিং ইন্সটিটিউশনের ২০১৫ সালের এক রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি দশ কোটি লোকের মধ্যে সংবাদপত্রের সংখ্যা যেখানে ১,২০০ ছিল, ২০১৪ সালে তা কমে প্রতি দশ কোটি জনসংখ্যায় ৪০০ তে নেমে এসেছে। গত প্রায় দুই দশক সময়ে প্রায় ২,২০০ স্থানীয় সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ২০ শতাংশ আমেরিকান সংবাদহীন মরুভূমিতে বসবাস করছে। কারণ তারা গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় ঘটনার ও ওপর সামান্য জানতে পারছে অথবা নির্ভরযোগ্য তথ্য জানতে পারছে না।

স্থানীয় সংবাদের এই নাটকীয় অনুপস্থিতি আমেরিকাকে ক্রমবর্ধমানভাবে বিভক্ত করছে এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থা হ্রাস পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেকে মনে করেন যে, স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশনা বন্ধ হওয়ার অর্থ মানুষের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ক্রমেই বদলে যাচ্ছে।

‘গুগল,’ ও ‘ইয়াহু’র মতো ইন্টারনেট সার্চ প্রভাইডারগুলোর নিউজ সাইট রয়েছে। কিন্তু তারা মূলত অন্যান্য মাধ্যমের সংবাদ ধার করে ব্যবহার করছে। কোনো ঘটনাস্থল বা তথ্যের উৎসে রিপোর্টার পাঠিয়ে সংবাদ প্রস্তুত করার মতো কাঠামো তাদের গড়ে উঠেনি। ব্লগগুলোর পক্ষেও তা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া এসবের ব্যবহারকারীদের সিংহভাগই তরুণ। বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্র, এমনকি স্যাটেলাইট টেলিভিশনগুলো জনবলের অভাবে সামাজিক মাধ্যমগুলোতে পরিবেশিত সংবাদের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছে, যেসব সংবাদে সবসময় সংক্ষিপ্ত ও একপেশে সংবাদ পরিবেশন করে। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে পূরণ হবে অধিকাংশ পাঠকের চাহিদা।

২০০৮ সালে প্রস্তাবিত ‘গুগল-ইয়াহু এডভার্টাইজিং পার্টনারশিপ’ বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্র শিল্পের রাজস্বের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে বলে ‘ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অফ নিউজপেপারস’ এই উদ্যোগ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে একটি নিয়ন্ত্রণকারী কাঠামো গঠনের আহবান জানিয়েছিল। ‘ওয়ার্ল্ড এসোসিয়েশন অফ নিউজপেপারস এন্ড পাবলিশার্স’ও একই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিল যে, এই বিশাল দুটি ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন গণমাধ্যমের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের আশঙ্কা ব্যক্ত করার পর গত দেড় দশকে সংবাদপত্রের রাজস্ব আয় হ্রাসের ক্ষেত্রে যা ঘাঁর ঘটেছে, কিন্ত ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন পাঠকের অভ্যাস বদলে দিয়েছে। শুধু তাই নয় অনলাইন সংস্কৃতি প্রত্যেককে সম্পাদক, রিপোর্টার, ফটোগ্রাফার বানিয়ে দিয়েছে।

এসব সত্ত্বেও মানুষ কোনো ঘটনার বিস্তারিত জানতে চায়, তথ্যের ভেতরে প্রবেশ করতে চায় এবং পেশাদার সাংবাদিক ছাড়া তাদের এই চাওয়া আর কারো পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ভূঁয়া, চটুল সংবাদ পরিবেশন করে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে, প্রকৃত সংবাদেও জন্য পাঠকে সংবাদপত্রের কাছেই ফিরে আসতে হচ্ছে। অতএব সংবাদপত্রের ভবিষ্যৎ তেমন অনুজ্জ্বল মনে করার কারণ নেই। (ফেসবুক ওয়াল থে‌কে)।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!