বোরো মৌসুমের শুরু থেকেই ব্লাস্ট রোগ নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছিলো কৃষি বিভাগ। কিন্তু তারপরও ব্লাস্ট রোগ থেকে রক্ষা পায়নি যশোরের অভয়নগর উপজেলার কৃষকরা। অভয়নগরে বিঘার পর বিঘা জমির ধান ব্লাস্টের আক্রমণে চিটা হয়ে গেছে। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। বিশেষ করে উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন।
কৃষি বিভাগের নূন্যতম পরামর্শও তারা পাননি বলে অভিযোগ। এমনকি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ব্লক সুপার ভাইজারকেও তারা কখনও দেখেননি। এলাকার কিটনাশক বিক্রির দোকানীর পরামর্শই তাদের একমাত্র ভরসা।
উপজেলার বাঘুটিয়া ইউনিয়নের বুড়বুড়ি বিল, ধান গড়ার মাঠ, নাতকোয়ার বিলসহ ইউনিয়নের বেশ কিছু মাঠে সরেজমিনে দেখা গেছে, ধানের শিষ বের হওয়ার সাথে সাথে সেগুলো সাদা হয়ে চিটায় পরিণত হয়েছে। ধানগাছ গুলো মরে যাচ্ছে। বিশেষ করে আটাশ ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমন বেশি দেখা গেছে। অনেকের ক্ষেতের ফসল অর্ধেকের বেশি চিটায় পরিণত হয়েছে।
কৃষক রবিউল ইসলামের ৬০ শতাংশ জমির ধান, রফিক মোড়লের ১০ কাঠা জমির ধান, মহিরউদ্দিনের আঠারো কাঠা জমির ধান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
ওই গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন, ধান রোপনের পর থেকে তারা কোনদিন ব্লক সুপারভাইজারের দেখা পাননি। একই অভিযোগ করেন, কৃষক রফিক মোড়ল, ইউনুস মোল্যা, প্রদীপ কুমার পাল, কাওছার শেখসহ অনেকেই।
কৃষক পরিতোষ কুমার পাল অভিযোগ করেন, গত প্রায় এক মাস আগে ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিলে কৃষি অফিসে যাই। কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা আক্রান্ত ধান গাছ তুলে কৃষি অফিসে নিয়ে দেখাতে বলেন। সে মোতাবেক ধান গাছ গোড়া সমেত উপড়ে নিয়ে কৃষি অফিসে দেখালে তারা পরামর্শ দেন। তবে এলাকায় কখনও কৃষি অফিসের কাউকে আসতে দেখিনি।
এ ব্যাপারে সংশিষ্ট ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ব্লক সুপারভাইজার অপূর্ব মন্ডলের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, তিনি অতিরিক্ত দায়িত্বে কিছু দিন ছিলেন। ১৫/২০ দিন হলো মহিবুল ইসলাম নামে একজনকে ওই অঞ্চলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। মাঠে না যাওয়া প্রসংগে তিনি বলেন, প্রতিনিয়তই মাঠে যেয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারনে এবং শারীরিকভাবে বেশ কিছুদিন অসুস্থ্য থাকায় কোন অঞ্চল গ্যাপ পড়তে পারে। এ ব্যাপারে কথা বলতে মহিবুল ইসলামের ব্যবহৃত নম্বরে ফোন করলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে অভয়নগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানীর সাথে কথা বললে তিনি কৃষকদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বোরো মৌসুমের শুরু থেকে আমরা কৃষকদের এ ব্যাপারে পরামর্শ দিয়ে আসছি। এবং ধান রোপনের পর থেকে টিম করে বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, কৃষি অফিসে মারাত্মক জনবল সংকট থাকায় কখনও কখনও মাঠ পর্যায়ে কিঞ্চিৎ ঘাটতি পড়তে পারে। তবে আমরা সকল এলাকার কৃষকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি। এবং সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বরদেরও ব্লাস্টের ব্যাপারে সতর্ক করে কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি।
খুলনা গেজেট/ এস আই