একই মোবাইল নম্বর। একাধিক ব্যক্তির কাছে কল। অপর প্রান্তের ভাষ্য আমি সন্ত্রাসী মৃণাল বাহিনীর লোক। চাঁদার টাকা দিবি, না হলে জীবন দিবি।গম্ভীর কন্ঠের শব্দে ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এ নিয়ে এলাকায় চলতে থাকে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটেছিল যশোরের অভয়নগর উপজেলার ৬নং বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পোতপাড়া ও মরিচা গ্রামে।
অপরদিকে একই নম্বর দিয়ে চাঁদা দাবি করেছিল নড়াইল জেলার সদর থানার দক্ষিণ নড়াইলের চাকই ও মধুরগাতী গ্রামে একাধিক ব্যক্তির কাছে। চাঁদা চেয়েছিল চাকই বাজারের ধান ব্যবসায়ী নওয়াব আলির কাছে। চাঁদা চাওয়া অজ্ঞাত ব্যক্তির ব্যবহৃত ০১৯০৬৪৩৫৪১৪ নাম্বারটি নিয়ে ১৩ জানুয়ারি অভয়নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করে নওয়াব আলী। পুলিশ তাতেই বের করে নেয় আসল রহস্য। তবে মামলায় আসামী করা হয় অপর দুই ভুক্তভোগি চাঁদা দিতে অস্বীকার করা আজমল হোসেন খোকন ও নড়াইল সদরের ১২নং বিছালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বর আকুঞ্জি মুনজুরুল ইসলামকে। যাচাই বাছাই করে পুলিশ দেখতে পায় অজ্ঞাত পরিচয়দানকারী ব্যক্তি নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার ইতনা পশ্চিম পাড়ার মৃত মফিজুর রহমান শেখ ও মনোয়ারা দম্পতির ছেলে মোঃ কুদরত শেখ। ওই নাম্বার ব্যবহার করে একাধিক বার কথা বলেছে নড়াইল সদরের ১২ নং বিছালী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বর মুনজুরুল ইসলামের সাথে।
পুলিশের ধারণা মেম্বরের সাথে রয়েছে কুদরতের সখ্যতা। অন্যদিকে ২০২০ সালের ৭, ৮, ৯, ১০ জানুয়ারি দক্ষিণ নড়াইলের চাকই গ্রামের মৃত মজনু মোল্যার ছেলে আজমল হোসেন খোকনের কাছেও একই ভাবে চাঁদা চেয়ে ৪ দিনে ১৩ বার মোবাইল করে কুদরত। তাতেই মুনজুর, আজমল ও কুদরতকে আসামী করে অভয়নগর থানায় চাঁদাবাজীর অভিযোগ সত্য বলে প্রতিবেদন দেয় ক্যাম্প পুলিশ। নওয়াব আলীর অভিযোগে মামলা রেকর্ড করা হয়। মামলা নং ১৩/২০ ধারা ৩৮৫। জি আর নং১৩/২০।
মামলার মূল নথির তথ্য অনুযায়ী বাদী উল্লেখ করেছেন, ২০ সালের জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর থেকে আসা ফোনে সন্ত্রাসী মৃণাল বাহিনির লোক পরিচয় দিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বাদি নওয়াব আলির কাছে। একই মাসের ১৩ তারিখ পর্যন্ত টাকা না দিলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিতে থাকে। উপায় না পেয়ে বাদি প্রশাসনের আশ্রয় গ্রহণ করে।
বাদী আরো উল্লেখ করেন, সে একজন স্থায়ী চাকই বাজারের ধান ও চাউল ব্যবসায়ী।
মামলার আসামী আজমল হোসেন খোকন জানান, সন্ত্রাসী কুদরত তার কাছে ১৩ বার চাঁদার টাকার জন্য ফোন করেছিল। একাধিক বার হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা চেয়েছিল।
অন্য আসামী মেম্বর জানালেন, কুদরত একাধিকবার তার কাছে ফোন দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে চাঁদা চেয়েছিলো। অথচ পুলিশ জেনে শুনে দেখেছিল সে (আজমল ও মেম্বর) সন্ত্রাসী নজরে। তারপরও সন্ত্রাসী কুদরতের নাম্বার তাদের ফোনে পাওয়াতে রাজনৈতিক নেতা আজমল হোসেন খোকন ও মেম্বর মুনজুরের নামে মামলা দিয়ে চালান করে দিয়েছিল থানা পুলিশ। তদন্ত ছাড়া মামলার আসামী করা বেআইনি কাজ হলেও থানা পুলিশের খামখেয়ালিতে চাঁদা না দেওয়ায় আজমল ও মুনজুরকে আসামী করা হয়েছে বলে ধারণা করছে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, আজমল হোসেন একজন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ব্যক্তি। মামলা যশোরের বিঙ্গ সিনিয়র জুড়িসিয়াল আদালতে চলমান রয়েছে। অন্যদিকে অভয়নগর উপজেলার ভৈরব উত্তর অঞ্চলের একাধিক স্কুল ও কলেজের প্রধান শিক্ষকের কাছে বিভিন্ন সময় মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে।
সিংগাড়ী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন জানান, রোজার প্রথম দিকে তার কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছে।
বাশুয়াড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালযের প্রধান শিক্ষক আওয়াল হোসেন বলেন, একই সময় তার কাছেও চাঁদা দাবি করা হয়েছে। জানা গেছে এ অঞ্চলের প্রত্যেক প্রধান শিক্ষকের কাছে একই চক্র চাঁদা দাবি করেছে।
বাঘুটিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা সাইফার মোল্যা জানান, সন্ত্রাসী পরিচয়দানকারী কুদরত তার ভাজতে হয়। দীর্ঘদিন কুদরতসহ তার তিন ভাইয়ের সাথে পারিবারিকভাবে কোন যোগাযোগ নেই।
নড়াইলের ইতনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, কুদরতের বাড়ী ইতনা দক্ষিণ পাড়ায়। চারিত্রিকগত ভাবে তারা বাজে স্বভাবের। সমাজে অনেক অপবাদ রয়েছে কুদরতের পরিবারের নামে।
জানা গেছে, কুদরত পেশায় একজন চোর প্রকৃতির লোক। সে বিভিন্ন সময় হাঁস মুরগি ছাগল চুরি করে জীবন নির্বাহ করে থাকে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী নওয়াব আলী বলেন, মামলা চলমান রয়েছে পুলিশের পর এখন পুনঃতদন্তের জন্য নিরপেক্ষ তদন্তকারি প্রতিষ্ঠান পিবিআই’র উপর দায়িত্ব দিয়ছে আদালত।
বিতর্কিত এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক অভয়নগরের ভাটপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের এস আই আকিকুর রহমান জানালেন, বাদীর উল্লেখিত আসামীর বিষয়ে তদন্ত করে মামলা রেকর্ড করা হয়েছিল। যদিও অজ্ঞাত ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছেন থানা পুলিশ তিনি নড়াইল জেলার লোহাগাড়া থানার ইতনা পশ্চিম পাড়ার মৃত মফিজুর রহমান শেখ ও মনোয়ারা দম্পতির ছেলে। তারপরও আজ অবদি গ্র্রেপ্তার হয়নি পলাতক কুদরত। এই মামলায় পলাতক আসামী হিসাবে রয়েছে সে।
খুলনা গেজেট/এনএম