যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় ফতেমা (প্রা:) হাসপাতাল ও আরোগ্য সদন (প্রা:) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশনে রোগী মারা যাওয়ার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডাঃ মো. মাহামুদুল হাসান এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: ওয়াহিদুজ্জামানকে প্রধান করে ডা: শাহিন সারমিন তিথি ও ডা: মাহাফুজুর রহমান সবুজকে এই কমিটি সদস্য করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মো. মাহামুদুল হাসান স্বাক্ষরিত তদন্ত কমিটির চিঠি বুধবারে কমিটির প্রধান ডা: ওয়াহিদুজ্জামান হাতে পেয়ে ইতোমধ্যে তিনি তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। গত ৩০ জুন ফাতেমা (প্রা:) হাসপাতালে ইতি বেগম (২২) নামের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এবং আরোগ্য সদন (প্রা:) হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে ভুল অপারেশনে অর্চনা (২৫) নামের পৃথক দুই রোগীর মৃত্যু হয়।
তদন্ত কমিটি জানান, উভয় ক্লিনিকে অপারেশনের সময় এ্যানেসথেশিয়া ডাক্তার রাখা হয় না বলে এই ধরনের দূর্ঘটনা বারবার ঘটছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
উল্লেখ্য-২৯ জুন শনিবার ওই নারী গর্ভবতী অবস্থায় ফাতেমা (প্রাঃ) হাসপাতালে ভর্তি হন, শনিবার রাতেই খুলনা বিভাগের পরিচালক ডাক্তার মঞ্জুরুল মোরশেদ তার নিজস্ব উক্ত ক্লিনিকে ওই নারীকে সিজারিয়ান অপারেশন করেন এবং একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। পরে রাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে ওই নারী ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে অবস্থা খারাপ দেখে (৩০ জুন) রবিবার রাতে খুলনায় ওই নারীকে রেফার্ড করেন ডাক্তার মঞ্জুরুল মোরশেদ। স্বজনরা খুলনা নেয়ার পথে ওই নারীর মৃত্যু হয়। নিহত ইতি বেগম চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা উপজেলার রকির স্ত্রী ও অভয়নগর উপজেলার ধোপাদী গ্রামের আরশাফ শেখের মেয়ে। পরে এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা ওই হাসপাতাল ঘেরাও করে আন্দোলন করতে থাকে, পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে বিষয়টি বসাবসি করে মিমাংসার আশ্বাসে উত্তেজিত জনগণ আন্দোলন বন্ধ করে। পরে ৪ লাখ টাকায় বিষয়টি মিমাংশা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, যশোরের অভয়নগরে নওয়াপাড়া আরোগ্য সদন (প্রাঃ) ক্লিনিকে ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় অর্চনা (২৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার (৩০ জুন) সকাল আনুমান সাড়ে ৯ টার সময় এ ঘটনা ঘটে। জানা যায়, ওই নারী গর্ভবতী অবস্থায় গত শনিবার ২৯ জুন নওয়াপাড়া আরোগ্য সদন (প্রাঃ) ক্লিনিকে ভর্তি হয়। ওইদিন রাতে তাকে ডাক্তার মিলন কুমার বোস সিজারিয়ান অপারেশন করেন। সিজারিয়ান অপারেশনে ওই নারীর একটি পুত্র সন্তান জন্ম হয়। কিন্তু ওই নারীর সিজারিয়ান অপারেশন সঠিক ভাবে না হওয়ায় তার রক্তক্ষরণ হতে থাকায় শরীরে রক্ত কমে যায়। ফলে অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তার মিলন কান্তি বোস দ্রুত ওই নারী রোগীকে খুলনা গাজী মেডিকেলে রেফার্ড করে পাঠিয়ে দেন। রোগীর স্বজনরা তাকে গাজী মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই নারীকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত অর্চনা মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া প্রতাপকাটি গ্রামের অনল কান্তির স্ত্রী। তার এর আগেও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
স্বামী অনল কান্তি বলেন, অনেক টাকার টেস্ট করিয়ে তারপর ডাঃ সিজার করেছেন। শেষ মুহূর্তে গাজী মেডিকেলে রেফার্ড করেছেন। সেখানে পৌছানোর আগেই আমার স্ত্রী মৃত্যু বরণ করে। আমি তদন্ত পূর্বক দোষীদের শাস্তির দাবি করছি।
খুলনা গেজেট/এএজে