খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ মে, ২০২৪

Breaking News

  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখালো যশোর-চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৮ ও খুলনায় ৪২
  সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুর্নীতি অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন
দেড়যুগ পর চাঞ্চল্যকর মামলার রায়

অপহরণে আসামির যাবজ্জীবন, হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক

কুষ্টিয়ার মেয়ে মুক্তিয়ারা খাতুন মুক্তি। তিনি ২০০৪ সালের ৩ মার্চ অপহরণ হন। পরেরদিন সকালে নগরীর ছোট বয়রা পুরাতন রেস্ট হাউসের মাঠ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বাদী হয়ে সেদিন থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেন। বিষয়টি নিয়ে খুলনায় বেশ আলোচিত হয়।

দেড়যুগ পর বুধবার (২৩ নভেম্বর) আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

খুলনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ৩ এর বিচারক আ: ছালাম খান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আসামির বিরুদ্ধে হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় হত্যা ও ধর্ষণ মামলা থেকে আসামি শরীফসহ অন্যদের খালাস দেওয়া হয়েছে। তবে অপহরণে জড়িত থাকায় তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম করাদন্ড প্রদান করা হয়। একই সাথে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের সশ্রম করাদন্ড প্রদান করা হয়।

সাজাপ্রাপ্ত আসামি হল, নগরীর ছোট বয়রা এলাকার এনসার উদ্দিনের ছেলে শেখ শরীফুল ইসলাম শরীফ। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। এ রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো: রুবেল খান।

আলোচিত এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এড. ফরিদ আহমেদ। হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাদীর দায়ের করা মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ৪ মার্চ সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে সোনাডাঙ্গা থানার এস আই মো: ইন্তাজ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য বয়রা থেকে ডিউটি সেরে নিউমার্কেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ছোট বয়রা পুরাতন রেস্ট হাউসের সামনে পৌছামাত্র কিছু মানুষের ভিড় দেখতে পান তারা। সেখানে গিয়ে অজ্ঞাত এক নারীর লাশ দেখতে পান। মরদেহের শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না।

পরে স্থানীয় কয়েকজন নারীর সহায়তায় মৃত ওই নারীর শরীর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর দেখা যায় তার গোপনাঙ্গ থেকে রক্ত বের হচ্ছে। লাশের সুরাতহাল রির্পোট তৈরি করে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। মরদেহটি শনাক্ত করার জন্য পুলিশ তৎপর হয়। দেশের বিভিন্ন থানায় সংবাদ পাঠানো হয়। ওইদিন সোনাডাঙ্গা থানার এস আই ইনতাজ উদ্দিন থানায় বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন/ ২০০০ এর ৯(৩) ধারায় মামলা রুজু করেন, যার নং ৪। সংবাদপত্রে ছবিসহ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে মুক্তির পরিবারের সদস্যরা এসে লাশটি শনাক্ত করে। পরবর্তীতে ধর্ষণ, অপহরণ ও হত্যার জট খুলতে থাকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুক্তি হত্যার অভিযোগে কয়েকজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। আদালতে তারা জবানবন্দি প্রদান করেন। মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মো: রেজাউল করিম এ মামলায় শরীফুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

এ মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৩ ফ্রেব্রুয়ারি মুক্তিয়ারা খাতুন নার্সিং খুলনায় ভর্তি হওয়ার জন্য যশোর বোর্ডে আসে। সেখানে শরীফের সাথে তার স্বাক্ষাত হয়। তিনি ভিকটিমকে বলেন, নার্সিং এ কর্মরত আছেন। তখন উভয়ে তাদের ঠিকানা দেয়।

২৪ ফ্রেব্রুয়ারি মুক্তা তার ফুফাতো বোনসহ চারজন নার্সিং খুলনা ফরম জমা দিতে আসে। আসামি শরীফুলের ঠিকানা ঠিক আছে কি না তা যাচাই করার জন্য তার বাসায় যান তারা। আসামি আগে থেকে তার স্ত্রীকে মুক্তার কথা বলে রেখেছিল। শরীফুলের বাসায় তারা গেলে স্ত্রী জানান তিনি বাসায় নেই।

পরে আসামি ১ মার্চ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আরাকান্দি গ্রামে মুক্তার বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে আসামি বলেন, মুক্তার ফরম জমা ভুল হয়েছে। মুক্তার পরিবারের সদস্যদের তিনি বলেন, মুক্তাকে নিয়ে যেতে হবে। শুক্রবার সকালে আবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। পরিবারের সদস্যরা তাকে সরল বিশ্বাসে শরীফের সাথে ছেড়ে দেয়। মুক্তা শুক্রবার বাড়ি ফিরে না গেলে পরিবারের সকলে অস্থির হয়ে যান। পরে পত্রিকার মাধ্যমে মেয়ের ছবি দেখে বাবা-মা মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করে।

বুধবার খুলনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী-২০০৩) এর ৭ ধারায় আসামি শরীফকে উক্ত সাজা প্রদান করেন।




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!