দশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলে জাকারিয়ার খোঁজ জেনেও কাছে পেলেন না বৃদ্ধা মা জয়গুন্নেছা। দশ বছর পর পাবনা মানসিক হাসপাতালে থাকা রোগীদের নিয়ে ইউটিউবে করা এক অনুষ্ঠানে ছেলেকে দেখে ফিরে পাওয়ার আশা জেগেছিলো মায়ের। কিন্তু সেখানে গিয়ে ইউটিউবে দেখা ছেলের কোন সন্ধান পাননি বৃদ্ধা মাসহ তার স্বজনরা। কে ওই ছেলেক ভর্তি করেছিলেন এবং কত তারিখে তাকে রিলিজ করা হয়েছে এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি সেখানে। এমনকি হাসপাতালের ভর্তি এবং রিলিজ রেজিস্ট্রেশন বইয়ের পৃষ্ঠা তন্ন তন্ন করে খুজেও পাত্তা মেলেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতার কারণে সেখানে জাকারিয়ার সন্ধান মেলেনি বলে স্বজনদের অভিযোগ।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার দিঘিরপাড় গ্রামের কওছার আলীর ছেলে মাদ্রাসায় ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া জাকারিয়া হোসেন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয়। ছেলে হারানোর পর আত্বীয়-স্বজনের বাড়িসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজির পরও সন্ধান পাননি। ছেলে হারানোর ব্যাথা বুকে পাথর চেপে রেখে ছিলেন বৃদ্ধা মা জয়গুন্নেছা। ছেলে একদিন ফিরে আসবে এ আশায় এখনো পথপানে চেয়ে থাকেন আর শাড়ির আঁচলে চোখের পানি মোছেন।
জাকারিয়ার বৃদ্ধা মা জয়গুন্নেছার সাথে কথা হলে তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, তার দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে জাকারিয়া ছোট। শিশুকাল থেকেই সে লেখাপড়ায় মেধাবী ছিল। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালিন জাকারিয়াকে ভর্তি করা হয় পাশের গ্রামের একটি দাখিল মাদ্রাসায়। সেখানে পড়াকালিন মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে জাকারিয়া। ডাক্তার-কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করিয়েও কোন ফল আসেনি। হঠাৎ একদিন কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে উধাও হয় জাকারিয়া। চলতি মাসের প্রথম দিকে তাদের এক আত্বীয় ইউটিউবে জাকারিয়াকে গান গাইতে দেখেন। যা ছিলো পবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জীবনের গল্প নিয়ে করা অনুষ্ঠান। এরই সূত্র ধরে গত ৬ ডিসেম্বর বৃদ্ধা জয়গুন্নেছা তার মেয়ে ফতেমাকে নিয়ে পাবনা মানসিক হাসপাতালে যান। হাসপাতালে সংশ্লিষ্টদের কাছে ছবি দেখিয়ে জাকারিয়ার সন্ধান চাওয়া হয়। সেখানকার রোগী ভর্তির কালেক্টর নজরুল ইসলামের শরণাপন্ন হন তারা। নজরুল ইসলাম ছবি দেখে রেজিস্ট্রেশন বইয়ের পৃষ্টা উল্টিয়ে ইউটিউবের ওই অনুষ্ঠানের অন্যদের ছবিসহ ঠিকানা পেলেও জাকারিয়ার ছবি এমনকি কে জাকারিয়াকে ভর্তি কিংবা রিলিজ করেছেন তার কোন হদিস পাননি। এভাবে দুই দিন থেকেও জাকারিয়ার সন্ধান পাননি।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের সুপার ডাঃ রতন কুমার রায় বলেন, নিজ পরিবারের লোকজন না থাকলে অনেক সময় মানসিক রোগী ভর্তির ব্যাপারে ভুয়া ঠিকানা হতে পারে। ভর্তি রোগীর রেজিষ্টার ফাইল না দেখে এ মুহুর্তে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/কেএম