খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে

সাতক্ষীরা করোনা হাসপাতালে জনবল সংকট, ভোগান্তিতে রোগীরা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় সাতক্ষীরার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে দেখা দিয়েছে চিকিৎসা সংকট। সীমিত লোকবল নিয়ে রোগীর চাপ সামলানো গেলেও ভবিষ্যতে জনবল না বাড়ালে বড় বিপর্যয়ে পড়বে চিকিৎসা ব্যবস্থা। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল বানানোর দাবি নাগরিক সমাজের।

সূত্রে জানা যায়, করোনা উপসর্গে গত ২৪ ঘন্টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২ জন এবং করোনা উপসর্গে ৬ জনসহ মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১১ জুন পর্যন্ত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালসহ জেলার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে মোট করোনা পজিটিভ রোগী চিকিৎসাধীন আছেন ৫৪৯ জন। এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৫১ জন ও করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ২৩৯ জন।

বৃহস্পতিবার ২১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১১১ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫২ দশমিক ৬০ শতাংশ। তার আগের দিন ৯৫ জনের করোনা টেস্ট করে ৪৮ জনের পজিটিভ এসেছে। যার আক্রান্তের হার ৫০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। জেলায় এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৫৬ জন। করোনা রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি দেখা দিয়েছে চিকিৎসক, সেবিকা ও শয্যা সংকট। ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেয়ে অনেকেই বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক আনিসুর রহিম বলেন, করোনা নিয়ে মানুষকে সচেতনতা তৈরি করা দরকার কিন্তু স্বাস্থ্যবিভাগ সেটা সঠিকভাবে করছে না। যারা করোনা পরীক্ষা করাতে ইচ্ছুক সবাইকে পরীক্ষা করা হয় না। অধিকাংশ মানুষকে বাড়ি যেয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে বলা হয়। তুলানামূলকভাবে পরীক্ষা কম হচ্ছে। মারাত্মক রোগী এবং ধরে নেওয়া হয় যাদের করোনা হয়েছে শুধু তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে, সে কারণে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেলের চিকিৎসা সেবা তুলনামূলক ভালো। তবে করোনা ইউনিট সম্পূর্ণভাবে আলাদা না থাকার কারণে ডাক্তার, নার্স এবং স্টাফ আলাদা না থাকার কারণে সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হলেও তাদের আলাদা করোনা ইউনিট না থাকায় তাদের কারণে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল না করা হলে ভবিষ্যতে জেলা স্বাস্থ্যসেবা ভেঙ্গে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, করোনা চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল হয়ে যাচ্ছে কিছু কিছু ডাক্তারদের কারণে। তারা অযথা বেশি বেশি ওষুধ ও দামি ইনজেকশন দিচ্ছেন। এটা থেকে চিকিৎসকের বিরতি থাকার অনুরোধ জানান তিনি।

স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, হাসপাতাল গুলোতে ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ সংকট রয়েছে। অনেক নার্স করোনা আক্রান্ত হয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের হোম কোয়ারেন্টিন দরকার কিন্তু তাদের ছুটি দিলে তো হাসপাতাল চলবে না। সে কারণে তাদের দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় তারাই রোগ ছড়াচ্ছে। তাদের মাধ্যমে আরও অনেক মানুষ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে। করোনা ইউনিটে কাজ করে দুইদিন পর সে অন্য ইউনিটে যাচ্ছে যে কারণে সুস্থ মানুষ ওই নার্সের কারণে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে।

তারা আরও বলেন, অনেক চিকিৎসক নিজের চেম্বারে রোগী দেখে মেডিকেলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন, এতে এখানকার সেবিকারা বিপদে পড়ছেন। মেডিকেলের অনেকে অস্থায়ী নিয়োগে আছেন। কিছু আবার ঠিকাদারী নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করেন। কিন্তু তারা বেতন-ভাতা ঠিকমতো পায় না। তারা অফিসেও ঠিকমতো আসে না। তাদের কারণে সেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক চিকিৎসক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লাসের নাম করে প্রাইভেট প্রাকটিস করছেন। ইন্টার্নশিপ চিকিৎসকদের দিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে চিকিৎসা দিচ্ছেন কিছু কিছু ডাক্তার।

সাতক্ষীরা মেডিকেলের নার্সিং সুপারভাইজার অর্পণা রাণী পাল বলেন, জেলায় প্রতিনিয়ত করোনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু সীমিত সংখ্যক জনবল নিয়ে সেবা দিতে গিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি। মেডিকেলে ১৮টি ইউনিট চালু আছে। করোনা রোগীর সেবা করার পরও কোয়ারেন্টিনে রাখতে পারছি না। তারপরও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেবিকা ১৬৫ জন থাকার কথা থাকলেও আছে ১৫০ জন। বর্তমানে ডিউটি করছে ৯৫ জন। ৬০ সেবিকার মধ্যে কেউ কোয়ারেন্টিনে আছে, কেই অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারপরও সবোর্চ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ কুদরত-ই-খুদা বলেন, এখানে চিকিৎসক ও নার্স সংকট। চিকিৎসক যেখানে থাকার কথা ৫৮ জন তার বিপরীতে আছে ৩১ জন। ২৭টি পদ শুন্য। নার্স যেখানে থাকার কথা ১৬৫ জন সেখানে আছে ১৫৬ জন। কিন্তু এখানে অনেক সমস্যা আছে ১৪দিন ডিউটি করানোর পর তাকে আবার ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখতে হয়। এতে ৩৬ জন অফ থাকছে সব সময়। ৭/৮ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। ১০ জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছে। ১২০ টি বেডে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি আছে। ডাক্তার ও নার্স সংকটের জন্য ওই ভর্তিকৃত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। করোনা যেভাবে সাতক্ষীরায় বেড়েই চলেছে তা সামাল দিতে শয্যার পাশাপাশি ডাক্তার ও নার্স এর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। এর জন্য জনবল বাড়াতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বার বার চিঠি লিখছি। কিন্তু কোনো সুফল পাচ্ছি না।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়াত বলেন, আমাদের আগাগোড়াই জনবল সংকট ছিল। করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় সংকট আরো প্রকট হয়েছে। এইভাবেই সামাল দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এমনকি সদর হাসপাতালে করোনা বেড ১০টি থেকে বাড়িয়ে ৪০টি বেডে রুপান্তরিত করেছি। এছাড়াও করোনা রোগির চিকিৎসার জন্য প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ৫টি করে বেড এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ডাক্তারের পদায়ন চেয়ে স্বাস্থ্যদপ্তরে বার বার চিঠি পাঠিয়েছি। ভিডিও কনফারেন্সে বলেছি। কিন্তু তার কোনো সদুত্তর পাইনি। তবে চিকিৎসকের চেয়ে এখন বেশি দরকার সাপোর্ট স্টাফ।

করোনা রোগী কিভাবে হাসপাতালের বাইরে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমার কাছে একজন অভিযোগ করছেন। মেডিকেলে ভর্তির জায়গা নেই। এখন মেডিকেল থেকে সদরে রেফার করা হচ্ছে। করোনার আগে সদর হাসপাতলে আনছার (নিরপত্তাকর্মী) বরাদ্দ চেয়ে চিঠি লিখেছিলাম কিন্তু পাইনি। নিরাপত্তা কর্মী ছাড়া আমার তো করার কিছু নেই। আগামী সপ্তাহে সদর হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল ঘোষণা করবো আর সাধারণ রোগী ভর্তি করাবো না। জেলায় করোনা রোগীদের সেবা সঠিকভাবে দিতে জনবল সংকট সমাধান করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!