খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার
  বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে প্রধান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়, অচিরেই বিচার কাজ শুরু হবে : আইন উপদেষ্টা
আড়াই মাসে ১১ হাজার গাছ লাগিয়েছেন, লক্ষ্য ২০ হাজার চারা রোপণ

সবুজের জন্য ভালোবাসা

এ এইচ হিমালয়

জৈষ্ঠ্যের খরতাপে মাঠ ফেটে চৌচির। আষাঢ়েও বৃষ্টির দেখা নেই। শ্রাবণ শেষ হতে চললেও আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারেননি কৃষক। বৃষ্টির অভাবে চাষ বন্ধ। এদিকে আমন চাষ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৃষ্টির ভরা মৌসুমে অনাবৃষ্টির থেকে বাঁচার উপায় কী ? জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় কি করা যায়- বটিয়াঘাটার গ্রামে বসে এসব ভাবছিলেন মাঠ পর্যায়ে দুই কৃষি কর্মকর্তা জীবননান্দ রায় ও দীপন কুমার হালদার।

নিজেরাই ভেবে বের করলেন, কার্বন কমানো এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখতে সবুজায়নের বিকল্প নেই। এজন্য লাগাতে হবে প্রচুর গাছ। তখনই সিদ্ধান্ত নিলেন নিজেরা গাছ লাগানো শুরু করবেন। বৈশ্বিক এই সমস্যা সমাধানে তাদের এই উদ্যোগ হয়তো খুবই সামান্য। কিন্তু ছোট ছোট উদ্যোগই তো একদিন বড় সাফল্য আনবে।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রবিউল আলমের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন আরেক কৃষি কর্মকর্তা সরদার আবদুল মান্নান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মবিনুর রহমান রাজি হলেন একসঙ্গে কাজ করতে।
শুরু হয়ে গেল গাছ লাগানো। গত দুই মাসে ব্যক্তিগত অর্থে তারা ৫ জন মিলে প্রায় ১১ হাজার গাছের চারা লাগিয়েছেন। আপাতত লক্ষ্য আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে ২০ হাজার গাছ লাগানো। প্রতিটি চারা নিজেরা লাগানো কষ্টসাধ্য। তাছাড়া শুধু লাগালেই হবে না, পরিচর্যাও জরুরী। এজন্য এই কাজে সম্পৃক্ত করেছেন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী এবং আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দাদের।
গত দুই মাস ধরে তাদের সঙ্গে নিয়েই চলছে ৫ জনের বৃক্ষরোপন অভিযান। গত কয়েকমাস ধরে প্রায়ই বটিয়াঘাটার কৃষি কর্মকর্তাদের গাছ নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ছুটে বেড়াতে দেখা যায়। দাপ্তরিক কাজের বাইরে সরকারি কর্মকর্তাদের এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে।

উদ্যোক্তারা জানান, গত ২৭ জুলাই ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর কলেজ থেকে গাছ লাগানো শুরু হয়। ওই দিন কালীতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মধ্যতলা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রায় ৩০০ শতাধিক চারা রোপন করা হয়। অনাবৃষ্টির কারণে মাঝের কিছুদিন বিরতী ছিলো। আগস্টের শেষ দিকে বৃষ্টি শুরু হলে পুরোদমে শুরু হয় বৃক্ষরোপনের কাজ। যা এখনও চলছে।

গাছ লাগানোর উদ্যোক্তা ও বটিয়াঘাটা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জীবননান্দ রায় জানান, গত আড়াই মাসে প্রায় ১১ হাজার গাছের চারা লাগানো হয়েছে। গাছের চারা লাগানোর পর পরিচর্যার বিষয়টি মাথায় রেখে আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কারণ নতুন আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর পাশে গাছপালা নেই। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পাওয়া পরিবারগুলো গাছ পরিচর্যার বিষয়ে আন্তরিক। এজন্য প্রথম দুই মাসে ৪৬১টি বাড়ির চারপাশে গাছ লাগানো হয়েছে।
এর বাইরে ১১টি স্কুল, একটি কলেজ, দুটি মাদ্রাসা, এলাকার মসজিদ, মন্দির ও শশ্মান, উপজেলা কৃষি অফিসের সামনে, উপজেলা পরিষদের ফাঁকা স্থানে গাছ লাগানো হয়েছে। শোলমারি, সাচিবুনিয়াহ, দরগাতলাসহ ৬টি গ্রামের কৃষক সংগঠনের সদস্যদের মাধ্যমে গ্রামগুলোতেও গাছ লাগানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা সরদার আবদুল মান্নান জানান, গাছের চারা সম্পূর্ণ নিজেদের বেতনের টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে। অবশ্য একসঙ্গে অনেক চারা কেনা এবং ভালো কাজ দেখে কয়েকটি নার্সারি কিছু চারা আমাদের উপহার হিসেবে দিয়েছে।

সম্প্রতি তরুণ কর্মকর্তাদের দলটির সঙ্গে বটিয়াঘাটা ভান্ডারকোর্ট আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, গাছ লাগানোর কথা শুনে সেখানে আগে থেকেই বাসিন্দারা জড়ো হন। তাদের সঙ্গে নিয়েই ঘরের সামনে এবং ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগানো হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রটিতে ৬০ ঘর রয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ৩টি করে চারা দেওয়া হয়েছে। চারার মধ্যে ছিলো পেয়ারা, আমলকি, জাম, কাঠাল, নিম।

আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘স্যারেরা কিভাবে গাছ লাগাতে হবে দেখিয়ে দিচ্ছে, চারাও দিচ্ছে। আজ গাছ লাগাচ্ছি, বড় হলে নাতী-পোতারা খাবে।’

গাছের চারা লাগানো দেখতে আশ্রয়কেন্দ্রে যান ভান্ডারকোর্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওবায়দুল্লাহ শেখ। তিনি বলেন, উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কৃষি কর্মকর্তাদের দেখাদেখি অন্যরাও গাছ লাগানোয় উৎসাহী হবে। এভাবেই দেশটা আবার ফুলে ফলে ভরে উঠবে। ওই দিন ভান্ডারকোর্ট থেকে বড় হাজিরাবাদ সড়কের দুই পাশে প্রায় শতাধিক তালবীজ রোপন করা হয়।

বটিয়াঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, অফিসের কাজের ফাঁকে সময় বের করে গাছ লাগানোর কাজ চলছে। শুরুতে শুধু আমরাই গাছ লাগাতাম। এখন আমাদের দেখে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গাছ লাগানো শুরু করেছে। সরকারি চাকরির কারণে আমরা হয়তো এই এলাকায় থাকবো না, কিন্তু আমাদের লাগানো গাছই প্রকৃতির দুর্বিপাক থেকে একসময় মানুষকে আশ্রয় দেবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!