কুশল মেন্ডিস আর সাদিরা সামারাবিক্রমার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে রানের পাহাড়ে চড়েছিল শ্রীলঙ্কা। শাহিন শাহ আফ্রিদি-হারিস রউফদের তুলোধুনো করে পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জই ছুঁড়ে দিয়েছিল তারা। কিন্তু আকাশচুম্বী সেই সংগ্রহকে মামুলি বানিয়ে ছেড়েছেন পাক ব্যাটার আব্দুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। তাদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে লঙ্কানদের অনায়াসে টপকাল বাবর আজমের দল।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মেন্ডিস-সামারাবিক্রমার জোড়া সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩৪৪ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ করেছে শ্রীলঙ্কা। জবাবে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে জোড়া উইকেট হারালেও শফিক-রিজওয়ানের সেঞ্চুরিতে ১০ বল হাতে রেখেই ৬ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। এই জয়ে টানা দুই ম্যাচে জিতল ম্যান ইন গ্রিনরা।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) হায়দ্রাবাদের রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে হাসান আলীর বলে উইকেটের পিছনে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দিয়ে শূন্যতেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার কুশল পেরেরা। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা।
তারা দুজনে মিলে ১০২ রানের জুটি গড়েন। কিন্তু ক্যারিয়ারের দশম হাফ সেঞ্চুরির পরেই সাজঘরে ফিরে যান নিশাঙ্কা। তার ৬১ বলে ৫১ রানের ইনিংসে ছিল ৭ চার ও ১ ছক্কার মার। তাকে সাজঘরে ফেরান লেগ স্পিনার শাদাব খান। এরপর পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ নিয়ে ছেলেখেলায় মাতেন মেন্ডিস। ৬৫ বলে স্পর্শ করেন লঙ্কানদের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি সেঞ্চুরি।
৭৭ বলে ১২২ রান করে হাসান আলীর বলে আউট হয়ে ফেরেন মেন্ডিস। ১৪টি চার এবং ছয়টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। তাঁর সেঞ্চুরির পর হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৮৯ বলে তার ব্যাট থেকে আসে ১০৮ রানে অববদ্য ইনিংস, যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ দিকে ধনঞ্জয়া সিলভার ২৫ রানের পর ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৪ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা।
বোলিংয়ে পাকিস্তানের হয়ে ১০ ওভারে ৭১ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন হাসান আলী। আরেক পেসার হারিস রউফ নেন ২টি উইকেট। এছাড়া শাহিন শাহ আফ্রিদি, শাদাব খান ও মোহাম্মদ নওয়াজ নেন ১টি করে উইকেট।
রানতাড়ায় নেমে চতুর্থ ওভারেই ব্যক্তিগত ১২ রানে ফিরেন পাকিস্তানি ওপেনার ইমাম। দিলশান মাদুশঙ্কার শর্ট লেংথের বাউন্স বল খেলতে গিয়ে তিনি কুশল পেরেরার হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ব্যর্থতার পর আজও রান পাননি পাক অধিনায়ক বাবর। বলতে গেলে মাদুশঙ্কার দুর্বল ডেলিভারিতে তিনি নিজের উইকেট তুলে দিয়েছেন সামারাবিক্রমার হাতে। ফিরেছেন ব্যক্তিগত ১০ রানে।
এরপরই নিজেদের খোলস ছেড়ে দারুণ ফর্ম দেখিয়েছেন আব্দুল্লাহ শফিক ও রিজওয়ান। টানা ব্যর্থতার পর এদিন একাদশে জায়গা মেলে শফিকের। এর আগে যখনই সুযোগ পেয়েছেন ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন এই ২৩ বছর বয়সী ব্যাটার। সেই ধারাবাহিকতায় আরও একবার দায়িত্ব পেয়ে তিনি দলের জন্য জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছেন। চতুর্থ ওয়ানডে খেলতে নেমেই দেখা পেয়েছেন প্রথম সেঞ্চুরির।
যদিও এরপর বেশিক্ষণ আর ক্রিজে টিকে থাকতে পারেননি শফিক। ১০৩ বলে তিনি ১০টি চার ও তিন ছক্কায় ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছেন। অন্যদিকে, ফিফটি পূরণ করার পর থেকেই খুড়িয়ে হাঁটছিলেন রিজওয়ান। প্রতি রান-আপেই তাকে বেশ সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। তবুও শফিকের সঙ্গে তিনি জুটি গড়েছেন ১৭৬ রানের। এরপর পাকিস্তানের জয় পাওয়াটা কেবল কিছু সময়ের অপেক্ষা মনে হয়েছিল।
তবে সেট-ব্যাটসম্যান শফিক আউট হওয়াতে কিছুটা ধাক্কা খান রিজওয়ানরা। এরপর সৌদ শাকিলকে সঙ্গে নিয়ে আরেকটি জুটি গড়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার। চোটের অস্বস্তি নিয়েও ৯৭ বলেই তিনি ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক।
খুলনা গেজেট/এমএম