যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্যসেবায় দেশের মডেল। চিকিৎসার মান দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার চিকিৎসা খাতকে গুরুত্ব দেওয়ায় এর সুফল পাচ্ছে শার্শা উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ইতিমধ্যেই স্থানীয় এলাকাবাসীর আস্থার প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি সরকার হাসপাতালটিতে উন্নয়নের কাজ করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন পদে অভিজ্ঞ জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করছে। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪০০ রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা পেয়ে এলাকার সাধারণ মানুষ খুবই খুশি।
গেল ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে যখন প্রথম করোনা সনাক্ত হয়। তখন থেকে নড়েচড়ে বসে দেশের সরকার। তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক উপজেলার নাভারণ স্বাস্থ্য বিভাগ বেনাপোল স্থলবন্দরে মেডিকেল টিম নিয়োজিত করেন। হেলথ স্কিনিং, মূমূর্ষ রোগীদের চিকিৎসা সেবা, আক্রান্ত যাত্রীদের আইসোলেশন, ১৪ দিনের কোয়ারেনটাইন বাস্তবায়ন, কোয়ারেনটাইনকৃত যাত্রীদের চিকিৎসা সেবা, করোনা পরীক্ষা পূর্বক প্রশাসনের সহযোগীতায় তাদের জেলা শহরের বিভিন্ন হাসপাতালসহ বিভাগীয় বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার করার দায়িত্ব যিনি পালন করেন তিনি হলেন শার্শা উপজেলার নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. ইউসুফ আলী। উক্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উপজেলায় একটি মডেল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরীতে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। জরায়ূমূখে ক্যান্সার প্রতিরোধ কার্যক্রম অবদানের জন্য ২০২২ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
শার্শা উপজেলাসহ বেনাপোল বন্দরের কর্মকর্তা কর্মচারী, কাস্টমস, বিজিবি, পুলিশ, সাংবাদিক, আনসার সদস্য, খালাসি এবং শ্রমিক সকলের করোনা পরীক্ষা করা, করোনা টিকা প্রদানে অসামান্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন এই হাসপাতালটি। হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে আরও গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লক্ষে মডেল এন সি ডি কর্ণার প্রতিষ্ঠা, ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন রোগীদের জন্য বিনামূল্যে ঔষধ সরবরাহসহ আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জরুরি বিভাগে ২৪ ঘন্টা মেডিকেল অফিসারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। একটি পূর্ণাঙ্গ ডায়াগনস্টিক সেবা চালু করেছে। ডাক্তার ইউসুফ আলী শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানের পর ক্যাম্পাসে একটি নান্দনিক দৃশ্য ফুটে উঠেছে। হাসপাতালের রান্নাঘরের পরিবেশ উন্নত এবং সেখানে কাঠের পরিবর্তে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে। করোনাকালীন সময় থেকে করোনা রোগিদের অক্সিজেন সরবরাহের জন্য উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে জাইকার অর্থায়নে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
হাসপাতাল ক্যাম্পাসটি পূর্বে জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিলো বর্তমানে হাসপাতালের আগের সেই চিরচেনা পরিবেশ এখন আর নেই। বর্তমান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইউসুফ আলী আগের সেই নোংরা পরিবেশকে একেবারেই পরিবর্তন করে ফেলেছেন। ক্যাম্পাসে এখন ফুলের বাগান, ভেষজ বাগান এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক হাসাপাতালের পতিত জমিতে সবজি বাগান করেছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা শাহিনুর রহমান বলেন, যশোর জেলার শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে দেশের একটি মডেল হাসপাতাল। স্বাস্থ্য জনিত বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গত দুই বছর আমি এখানে চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ নিচ্ছি। এখানে চিকিৎসা নিতে এসে এখন কেউ ফিরে যায় না। মেডিকেল অফিসাররা অতি যত্নসহকারে রোগীদের কথা শোনেন এবং চিকিৎসাপত্র দেন।
এছাড়া ডাক্তার, নার্স ও টেকনিশিয়ানদের কর্মতৎপরতায় মুখর থাকে যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি। দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে কয়েক হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারাও খুশি এখান থেকে চিকিৎসা সেবা পেয়ে।
এদিকে হাসপাতালে সার্জিক্যাল বিভাগ, মেডিসিন বিভাগ, গাইনি বিভাগ ও অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট পদে আরো ডাক্তার নিয়োগ দেবেন বলে জানিয়েছে ডাক্তার ইউসুফ আলী।
তিনি আরও জানান, সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দীন মহোদয়ের নিকট হতে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি হাসপাতালে গাড়ি পার্কিং ও শেড নির্মাণ করেছেন। করোনা কালীন সময়ে হাসপাতালের জন্য একটি নতুন এম্বুলেন্স প্রাপ্তিতে জটিলরোগীদের আনা নেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, শার্শার নাভারণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার সব হাসপাতাল আধুনিকায়ন এবং চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। শার্শা উপজেলায় দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল। এখানে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন এবং পাসপোর্ট যাত্রী যাতায়াত করেন। করোনা কালীন সময় থেকে এ হাসপাতালটির গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
খুলনা গেজেট/এনএম