শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম সুপার টুয়েলভ ম্যাচ খেলতে শারজার মাঠে নামছে বাংলাদেশ। খুব বেশি আতঙ্ক বিরাজ করছে না মাহমুদউল্লাহদের ক্যাম্পে। রাসেল ডমিঙ্গো কারণ জানালেন। বাংলাদেশ কোচের প্রত্যাশা, প্রতিপক্ষ আর কন্ডিশনের সঙ্গে পরিচিতি থাকার সুবিধা পাবে দল। এই বছর দুই দল একটি টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে। ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলঙ্কাকে ২-১ এ হারানোর সুখস্মৃতি আছে বাংলাদেশের। তবে সতর্ক তারা। সাদা বলের ক্রিকেটে লঙ্কানরা যে কোনো কিছু ঘটাতে পারে। সেক্ষেত্রে শারজার পিচ সহায়ক হবে মনে করেন ডমিঙ্গো। ঢাকায় আগস্ট-সেপ্টেম্বরে যে পিচে বাংলাদেশ খেলেছে, এই পিচ অনেকটা সেরকম দেখতে পাচ্ছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
একসময় শারজার উইকেটে রাজত্ব করতেন ব্যাটসম্যানা। ওই ২২ গজে ব্যাট হাতে নামলেই রানের চাষ করতেন সাঈদ আনোয়ার, শচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, ইনজামাম-উল-হকরা। কিন্তু সেই দিনগুলি এখন রূপকথার মতো। উইকেট নতুন করে তৈরি পর বদলে গেছে ঐতিহ্যবাহী এই মাঠের উইকেটের চরিত্রও। সেই বদল এতটাই যে, মিরপুরের সঙ্গে শারজাহর উইকেটের মিল পাচ্ছেন বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।
শারজার উইকেটের এই পরিবর্তন আলোচনার জন্ম দেয় বিশ্বকাপের ঠিক আগে আইপিএলে। এই আসরে ভীষণ মন্থর উইকেট দেখা যায় এখানে। ধীরগতির, টার্নিং উইকেটে রান করতে ভুগতে দেখা যায় সব ব্যাটসম্যানকেই। এরপর বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডেও দেখা গেয়ে প্রায় একই চিত্র। সুপার টুয়েলভের লড়াইয়েও উইকেটের চরিত্র রাতারাতি বদলে যাওয়ার কথা নয়।
এই মাঠেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রোববার বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কোচ বললেন, এই উইকেট মনে ধরেছে তাদের। “এই ধরনের কন্ডিশন আমাদের উপযোগী হতে পারে। শারজাহর উইকেট অনেকটা ঢাকার উইকেটের মতো। আশা করি, কাল আমরা এখান থেকে সহায়তা পাব।”
দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ থাকার সময় এখানে দলকে নিয়ে এসেছেন ডমিঙ্গো। সেই সময় আর এই সময়কে মিলিয়ে উইকেট নিয়ে যথেষ্ট ভালো ধারণাই তার তৈরি হয়েছে। “আমি জানি, উইকেট নতুন করে তৈরি করা হয়েছে এবং এরপর থেকে স্কোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে এসেছে। তবে দীর্ঘকায় বোলার, যারা উইকেটে জোরে হিট করে, তারা এখানে সবসময় সুযোগ তৈরি করেছে। বেশ কয়েক বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আমি এখানে এসেছিলাম, মনে আছে, মর্নে মর্কেল যে কঠিন লেংথে বল করত, দারুণ কার্যকর হতো সে। বল স্কিড করত।” “তো, লম্বা ফাস্ট বোলারদের সুযোগ থাকবে। স্পিনারদের সুযোগ এখানে সবসময়ই থাকে। উইকেট সোজা বল করলে এলবিডব্লিউ, বোল্ডের সম্ভাবনা থাকবে।”
শুধু উইকেট নয়, বাংলাদেশ কোচ সুবিধা দেখছেন মাঠের আকারেও। পেশি শক্তি দিয়ে বড় শট খেলার ব্যাটসম্যান এই দলে নেই। শারজাহর ছোট মাঠও তাই কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে ডমিঙ্গোকে। “সীমানা এখানে তুলনামূলক ছোট। আমরা পাওয়ার-হিটিং দল হিসেবে পরিচিত নই, আমাদের জন্য বাউন্ডারি বের করা তাই কিছুটা সহজ হতে পারে। এটা একটা সুবিধা হতে পারে।”
ডমিঙ্গো বলেছেন, ‘আমরা গত কয়েক মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বেশ কিছু ম্যাচ খেলেছি। ওয়ানডে ও টেস্টে তাদের বিপক্ষে ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। দক্ষতাসম্পন্ন বোলার ও কিছু বিপদজনক ব্যাটসম্যানদের নিয়ে আমাদের দল ভারসাম্যপূর্ণ। আমাদের আছে সাকিবের মতো বিশ্বমানের অলরাউন্ডার। এই ধরনের কন্ডিশন আমাদের সঙ্গে মানানসই। শারজার উইকেটগুলো ঢাকার মতোই। আশা করি সেটা কালকের ম্যাচে আমাদের সহায়তা করবে।’
ম্যাচের সময় নিয়েও সন্তুষ্টি কোচের ‘আমাদের ম্যাচ শুরু হবে বেলা ২টায় (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা)। সময়টা আমাদের সঙ্গে মানানসই। আমি মনে করি আমাদের স্পিনাররা খুব ভালো প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবে। শিশির নিয়ে ভাবা লাগবে না। আমরা জানি অনেক দলই এখন শিশির নিয়ে ভাবছে।’
শারজায় খেলার খুব কম অভিজ্ঞতা হয়েছে দুই দলের। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এই ভেন্যুতে প্রথম ম্যাচ খেলেছে শ্রীলঙ্কা। আর সাকিব কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে এখানে খেলেছেন তিনটি ম্যাচ।
প্রতিপক্ষের লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে নিয়ে তিনি বললেন, ‘গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার আমরা হাসারাঙ্গাকে খেলেছি। আমরা জানি সে কী করতে পারে।’
দলের এখন পর্যন্ত পারফরম্যান্সে খুশি ডমিঙ্গো, ‘আমি মনে করি প্রত্যেক বিভাগে সবসময় উন্নতি করার সুযোগ আছে। আমরা জানি ব্যাট হাতে শুরুতে, মাঝে ও ডেথ ওভারে আমরা ঠিকভাবে খেলতে পারিনি। কিন্তু বল হাতে আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে আমরা খুব খুশি। মাঠেও আমরা দারুণ করেছি।’