নার্গিস আক্তার সেতু। বয়স ৪৬। এই বয়সেও হার মানেননি তিনি। শত বাধা পেরিয়ে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছেন। বুটিকের ব্যবসায় পাশে থেকে সহযোগিতা করছেন তারই দুই সন্তান। ব্যবসার পাশাপাশি পাটজাত পণ্য তৈরিতে গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণও দেন সেতু।
খুলনা খালিশপুর এলাকার মেয়ে সেতু। ২০১০ সালে স্বামীর স্বেচ্ছাচারিতা ও মাদকাশক্তির কারণে হঠাৎ-ই ১৬ বছরের সংসারের ইতি টানতে হয় তাকে। শুরু হয় ছোট্ট দুই সন্তানকে নিয়ে জীবনের কঠিন যুদ্ধ। প্রথমে সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়িতেই থাকতেন তিনি। বেসরকারি একটা প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেছেন বেশ কয়েক বছর। এক পর্যায়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়াতে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এদিকে মা মারা যাওয়ার পর ভাড়া বাসায় সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করেন। কাজ না থাকায় অনেকটা দিশহারা হয়ে পড়েন সেতু। এরপর প্রথমে ঘরে বসে নিজের মেয়ের জন্যই তৈরি করেন বুটিকের জামা। যা দেখে অনেকেই অর্ডার দিতে শুরু করেন। এরপর সকলের উৎসাহে শুরু করেন ‘নবাবী ফ্যাশন’ নামে বুটিকের ব্যবসা। আগে থেকে কাজ শেখা থাকায় তেমন কোনও ঝামেলায় পড়তে হয়নি। তবে ভাড়া বাসায় বসে ব্যবসা করা যাবে না বলে দিব্বি জানিয়ে দেন বাড়িওয়ালা। এরপর অন্যত্র বাসা ভাড়া নেন সেতু। তবে সবটা গুছিয়ে নিতেই ব্যবসায়ে শুরু হয় মহামারি করোনার প্রভাব। ব্যবসা কিছুটা থমকে গেলেও দমেনি সেতু। এখন তার ছেলে মেয়ে দু’জনই ব্যবসায়ে তাকে সহযোগিতা করছেন। তার মেয়ে কাপড়ে হ্যান্ডপেইন্টের কাজ করে দেন।
নিজের ব্যবসার পাশাপাশি সেতু ২০২০ সাল থেকে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে পাটজাত পণ্য তৈরিতে প্রশিক্ষণ দেন তিনি।
বর্তমানে খুলনা নগরীর খালিশপুরের মেগার মোড় এলাকায় দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া থাকেন সেতু। ছেলে সবে এইচএসসি পাশ করেছে এবং মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। ছেলেমেয়েকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন তার।
নার্গিস আক্তার সেতু বলেন, ‘ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনেক চেষ্টা করেছি সংসারটাকে বাঁচানোর। কিন্তু সে-ই নিজেকে শুধরাতে পারেনি। এখন আর তেমন কোনও কষ্ট নেই। ব্যবসা করছি, ছেলেমেয়েও যথেষ্ট বড় হয়েছে। এখন ওরাও আমাকে অনেক কাজে সাহায্য করে। মেয়ের পরীক্ষার পর ব্যবসাটাকে আরও বড় করে তুলব। ইচ্ছে আছে এরপর থেকে অনলাইনে অনেক বড় পরিসরে আমাদের তৈরি শাড়ি, থ্রিপিস বিক্রি করব। এতদিন স্বল্প টাকায় ঘরে বসেই ব্যবসাটা পরিচালনা করেছি। তেমন সহযোগিতা পেলে একটা শো-রুম দিতে পারতাম। ভাড়া বাসায় থেকে সবটা আসলে নিজের মনের মত করা সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে আমরা খুলনার ৮ উপজেলার নারীদের পাটজাত পণ্যের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। আগামীতে এ প্রশিক্ষণ অব্যাহত থাকবে। আসলে প্রতিটি নারীরই উচিত সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠা। আর তার জন্য প্রতিটি মাকেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে প্রতিটি নারীর পথচলা মসৃণ হয়।’