খুলনা, বাংলাদেশ | ২৪ আশ্বিন, ১৪৩১ | ৯ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  এনআইডির তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে কাফরুল থানায় মামলা
  হাইকোর্টে ২৩ জনকে অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ, আজ শপথ
এনজিও কর্মীরা কাবুলিওয়ালার ভূমিকায়

লকডাউনে থেমে নেই কিস্তি আদায়, বিপাকে ঋণ গ্রহীতারা

ফুলতলা প্রতিনিধি

ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে এক কাপ চায়ের জন্য ফুলতলা বাজারের জামরুলতলা এলাকার এভি সুপার মার্কেট গলিতে সিয়াম টি-ষ্টলে যাওয়া। প্রশাসনের তদারকির চোখ ফাঁকি দিতে সামনের সার্টার বন্ধ থাকলেও পাশের সার্টারের অর্ধেকটা ঠিকই খোলা। জ্বলন্ত চুলায় কেটলিতে পানি ফুটছে। চায়ের কাপ পিরিচ সবই ঠিক আছে, নেই শুধু নিম্ন আয়ের চায়ের দোকানি জুলহাস মোল্যা জুলু (৪০)। খানিকটা দূরে ইউএফএস মোড়ে তার সাথে দেখা।

দোকান খোলা রেখে এভাবে গাঁ ঢাকা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কঠোর বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে সংসারের প্রয়োজনে দোকান খুলে রাখা। ইসলামী ব্যাংকের আরডিএস প্রকল্পের অধীনে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েছিলাম। আজ ছিল সাপ্তাহিক সাড়ে পাঁচ’শ টাকা কিস্তি। যে টাকার কেনা-বেচা হয়েছে তা দিয়ে বাড়ির বাজারও হবে না। অন্যদিকে কিস্তির টাকা দিতে পারবো না বলেই আদায়কারীকে ঢুকতে দেখে সটকে পড়তে বাধ্য হয়েছি।’

এমন অবস্থা ফল ব্যবসায়ী জামাল শেখ, চা দোকানী মিজান, শফি, বকুল, রবিউল শেখসহ আরো অনেকেরই ।

ফুলতলা বাজার, জামিরা, বেজেরডাঙ্গা, পথেরবাজার, বেনেপুকুর, ছাতিয়ানী বাজার, ট্রান্সমিটার বাজার, শিরোমনি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্র্যাক, আশা, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন, বন্ধু কল্যাণ ফাউন্ডেশন, টিএমএসএস, ডিএসকে, ব্যুরো বাংলাদেশ, জনকল্যাণ সমিতি, দি ঢাকা মাকেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিঃসহ বিভিন্ন এনজিও, রেজিঃভুক্ত সমিতি ও মুনাফাখোরী ও দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ছোটখাটো ব্যবসা করছেন।

আবার অনেকে ঋণের টাকায় ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার, ইঞ্জিন চালিত ভ্যান কিনে এনজিও’র কিস্তির টাকা পরিশোধ করছেন। কিন্তু লকডাউনে আয় বন্ধ থাকায় বর্তমানে তারা কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যার্থ হয়ে আদায়কারীদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

করোনা সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হওয়ায় খুলনা জেলা প্রশাসক ঘোষিত কঠোর বিধি নিষেধাজ্ঞায় ফুলতলায় অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, নিম্ন আয়ের মানুষ, বেকার হয়ে পড়া ভ্যান চালক ও দিনমজুর পরিবার তাদের দৈনন্দিন ভরণ পোষণে হিমশিম খাচ্ছে। অপরদিকে প্রশাসন ঘোষিত বিধি ভঙ্গ করে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় ঋণের কিস্তি আদায়ের জন্য এনজিও কর্মীরা এখন রয়েছে কাবুলিওয়ালাদের ভূমিকায়।

দামোদর জমাাদ্দারপাড়া এলাকার আঃ সালাম বলেন, একদিকে লকডাউনের কারণে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চালাতে পারছি না। যে কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে আশা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সময়মতো কিস্তির টাকা দিতে না পারলে তাদের আদায়কারীরা বাড়িতে এসে নাজেহাল করছে।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় গাড়াখোলা গ্রামের গাজী পাড়ায় ফল চাষী ফারহানা ইয়াসমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এনজিও আশা এর কিস্তি আদায়কারী সহিষ্ণু বাবু কিস্তির টাকার জন্য বসে আছেন। টাকা আদায় করেই তার অফিসে ফিরতে হবে। একই অভিযোগ দামোদর ঋষিপাড়ার বিধবা সখিনা বেগম (৫২) এর।

এ ব্যাপারে আশার-২ ফুলতলা শাখার ম্যানেজার করনা আফরোজ বলেন, অফিস খোলা ও বন্ধ রাখার কোন নির্দেশনা পাইনি। ঋণ কার্যক্রম ও আদায় একই হারে চলছে। সেচ্ছায় কিস্তি পরিশোধকারীদের টাকা নেয়া হচ্ছে। কারো কাছ থেকে জোর পূর্বক আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।

গাড়াখোলা গ্রামের মোঃ মাহাবুব হোসেন বলেন, ইসলামী ব্যাংক আরডিএস প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। করোনার আগে নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলাম। বর্ষা ও লকডাউনে বেকার হয়ে পড়ায় কোনো আয় রোজগার নেই। ফলে কিস্তি পরিশোধ না করতে পারায় আদায়কারীর চাপে রয়েছি।

ব্যাংকের আরডিএস প্রকল্প ম্যানেজার আঃ সালাম বলেন, ব্যাংক খোলা থাকার কারণে ঋণের কিস্তিও চালু রয়েছে।

শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ রোস্তম আলী বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা না পাওয়ায় ঋণ আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে নির্দেশনা পেলেই সব কিছু বন্ধ করে দেয়া হবে।

দি ঢাকা মাকেন্টাইল ব্যাংকের আদায়কারী মো: মইনুল ইসলাম বলেন, দৈনিক কিস্তিতে ফুলতলা বাজারের ৩ শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ঋণ নিয়েছে। কিস্তি আদায়ে জন্য দোকানে দোকানে গিয়ে লকডাউনের কারণে অধিকাংশ দোকান বন্ধ থাকায় ঋণ আদায় হচ্ছে না।

ঋণগ্রহীতাদের নানাবিধ অভিযোগ থাকলেও জাগরণী চক্রের শাখা ম্যানেজার খন্দকার মনিরুজ্জামান বলেন, আমাদের ঋণ কার্যক্রম চাকরিজীবীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বেতন পেয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। কেউ সেচ্ছায় কিস্তির টাকা দিতে চাইলে শুধুমাত্র সেটাই আদায় করা হচ্ছে, তবে কাউকে প্রেসার দিয়ে নয়।

ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন বলেন, ‘সপ্তাহব্যাপী কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে মানুষ ঘর থেকে বের না হতে পারলে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করবে কি ভাবে? এর মধ্যে  কোন এনজিওর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের উপর চাপ প্রয়োগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায় তবে সংশ্লিষ্ট এনজিও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!