যশোরে যুবলীগ নেতা জিল্লুর রহমান শিমুল হত্যায় জড়িত অভিযোগে দু’জনকে আটক করেছে পিবিআই। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তাদের গডফাদার সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে, এমন তথ্যও চাউর হয়েছে। এ তথ্য স্বীকার করেছেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন। হত্যার ঘটনায় নিহত শিমুলের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় এখনো কোন মামলা দায়ের করেননি।
এদিকে, শুক্রবার (২২ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে মাইক্রোযোগে যুবলীগ নেতা শিমুলের মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি গোবিলায় পৌঁছায়। এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মা-স্ত্রী-সন্তান ও ভাইসহ আত্মীয়-স্বজনের আর্তনাদ ও আহাজারীতে গ্রামের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। এ সময় পাড়া-প্রতিবেশি ও দলীয় সহকর্মীরাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে তার নামাজে জানাজা শেষে পরিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) রাতে আমির হোসেনের বাইসাইকেলের পেছনে বসে বাড়িতে ফিরছিলেন শিমুল। বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছালে স্থানীয় নাঈম (২৭) ও বুলবুল (৫০) তাদের পথরোধ করে শিমুলকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এ সময় বাইসাইকেলের চালক আমির হোসেন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হামলাকারীরা সটকে পড়ে। আমির ও শিমুলের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাঁকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সাকিব তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানান জরুরি বিভাগের চিকিৎসক।
শনিবার হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মুতদেহ পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠির গোবিলা গ্রামে চিহিৃত সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ও এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেয় বুলবুল, নাঈম ও সজীব। নিহত শিমুল সাবেক ইউপি মেম্বার মকলেছুর রহমান বিশ্বাসের ছেলে। তিনি চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের য্বুলীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় স্কুলের অভিভাবক সদস্য ছিলেন। তিনি গ্রুপ রাজনীতির শিকার-দাবি করেন নিহতের ভাই রাকিব।
শিমুলের মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে গেলে মা-স্ত্রী ও ভাইসহ স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নিহতের ভাই রাকিব অভিযোগে করেন-এটি একটি রাজনৈতিক হত্যাকান্ড। এলাকায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় বুলবুল, সজীব ও নাঈম আগেই শিমুলকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের গ্রুপ রাজনীতির অনুসারী কিশোর গ্যাং।
নিহতের স্ত্রী নাসরিন অভিযোগ করেন, এলাকার পরিচিত লোকজনই তাকে হত্যা করেছে। শুধু রাজনীতি করার কারণে প্রাণ দিতে হলো তার স্বামীকে। তার ৩ মেয়েকে এতিমকে করে দিলো দলীয় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
স্থানীয় এক যুবক বলেন, খুনিরা সবাই সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যানের ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে। গত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পেয়ে তাকে পরাজিত করে প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা দাউদ হোসেন দফাদার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দাউদ দফাদার যশোর সদরের এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী বলে পরিচিত। যুবলীগ নেতা শিমুল দাউদ হোসেনের পক্ষে ভোট করেছিলেন। তিনি চেয়ারম্যানের অতি ঘনিষ্টজন ছিলেন।
এদিকে, পরাজিত ওই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভূমিদখল, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাং লালনের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তিনি পরাজয়ের পর প্রতিহিংসায় মেতে ওঠেন। চুড়ামনকাঠি ইউপি চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন দফাদার বলেন, নিহত যুবক আমার আত্মীয়। তাকে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। গোবিলা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে খুন করা হয়েছে। তিনি জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, বৃহস্পতিবার ২১ মার্চ শিমুল হত্যার পরই আমরা তদন্ত শুরু করি। তদন্তে নাঈম ও বুলবুলের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যায়। শিমুলকে কুপিয়ে তারা পালিয়ে যায়। আমরা তাদের পিছু নিই। এক পর্যায়ে ঝিনাইদহ থেকে তারা তাদের মুঠোফোন বন্ধ করে দেয়। এরপর তাদের আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সারারাত তাদের পিছু নিয়ে অবশেষে শুক্রবার সকালে ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে নাঈম ও বুলবুলকে আটক করা হয়েছে। তবে কী কারণে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে, সেটা আমরা জনাতে পেরেছি। আটক দু’জন এ বিষয়ে দায় স্বীকার করে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে বক্তব্য দিয়েছে। তবে সেটা এখনই বলতে চান না বলে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান।
খুলনা গেজেট/কেডি