যশোরে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে যাওয়ায় গোটা শহরে সাতদিনের লকডাউন (কঠোর বিধিনিষেধ) শুরু হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুন) গভীররাত থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। একইসাথে নওয়াপাড়া পৌর এলাকা কঠোর বিধিনিষেধের আওতায় আনা হয়েছে।
এসব এলাকায় মার্কেট, শপিংমল ও দোকানপাটসহ গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকবে। মসজিদে প্রতি ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ ২০ জন মুসল্লি অংশ গ্রহণ করতে পারবে। এ কাজে জনগনকে সচেতন ও বিধিনিষেধ মানতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একটি স্মারকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যশোর জেলায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগ। এ কারণে ৮ জুন যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ ৯ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ১৬ জুন রাত ১২টা পর্যন্ত ৭ দিন যশোর পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। শহরের ৯টি ওয়ার্ডে ও অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভা এলাকায় এ বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে।
বিধিনিষেধের আওতায় যশোর ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় গণপরিবহণ/বাস প্রভৃতি চলাচল বন্ধ থাকবে। এছাড়া যশোর সদর থেকে যশোর-ঝিকরগাছা-বেনাপোল, যশোর-অভনগর রুটে কোন লোকাল বাস/গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে না। তবে রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক এবং জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। সকল প্রকার হাইওয়ে সড়কে আন্তঃজেলা গণপরিবহন সরকার কর্তৃক আরোপিত চলমান স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক চলাচল করতে পারবে। কাঁচাবাজার ও নিত্য প্রয়োজনীয় (মুদিখানা) পণ্যের দোকান, ওষুধের দোকান ব্যতিত সকল দোকানপাট, শপিংমল, বিপণীবিতানসমূহ বন্ধ থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা ও জরুরি পরিসেবা যেমন, কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, করোনার টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর সমূহের কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি, বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ, তাদের কর্মচারি ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। খাবারের দোকান ও হোটেল রেস্তোঁরা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা থাকবে। তবে এসব হোটেল সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খাদ্য বিক্রয়/সরবরাহ (বিক্রয়/ অনলাইনে) করতে পারবে।
সবাইকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কোনভাবেই বাড়ি থেকে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে করতে হবে। মোটরসাইকেলে চালক ব্যতিত অন্য কোন আরোহী বহন করতে পারবে না। রিকশায় শুধুমাত্র ১ জন ও সকল ধরণের ইজিবাইক ও অটোরিকশায় সর্বোচ্চ ২ জন যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে পারবে। শিল্প-কলকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা-নেয়া নিশ্চিত করতে হবে। সকল পর্যটনস্থল, পার্ক, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
জনসমাবেশ হয় এমন ধরণের সামাজিক (বিয়ে, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজসহ প্রতি ওয়াক্তের নামাজে সর্বোচ্চ ২০ (বিশ) জন মুসল্লি অংশগ্রহণ করবেন। ঘর থেকে ওজু করে সুন্নত নামাজ পড়ে মসজিদে যেতে হবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপসনালয়েও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপসনা করতে পারবেন। সকল জরুরি নির্মাণ কাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে। এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধিনিষেধের আওতাবহির্ভুত হবে। ঝিকরগাছা ও শার্শা উপজেলা উচ্চ সংক্রমণের এলাকা চিহিৃত করে সংশ্লিষ্ট করোনা প্রতিরোধ কমিটি অনুরূপ বিধিনিষেধ আরোপ করবেন। জেলার অন্যান্য উপজেলাসমূহে/ এলাকায় সরকার কর্তৃক স্মারকে ঘোষিত বিধিনিষেধ চলমান থাকবে। যশোর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার, জন সচেতনতায় শহরে মাইকিং ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।
যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, যশোরের সার্বিক করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ৮ জুন প্রতিরোধ কমিটির সভার মাধ্যমে যশোর পৌর এলাকা ও অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যা আগামী ৭দিন বলবৎ থাকবে। তিনি জানান, সবাইকে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাজারে স্বাস্থ্যবিধি পালন করতে হবে। এছাড়াও গণসমাবেশ ও অনুষ্ঠান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন ও দোকানপাট শপিংমল বন্ধ থাকবে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, যশোর জেলায় গত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনা শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। জুন মাসের শুরু থেকে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত ৩ জুন শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশ, ৪ জুন ২৩ শতাংশ, ৫ জুন ২০ শতাংশ, ৬ জুন ২৩ শতাংশ, ৭ জুন ২৯ শতাংশ, ৮ জুন ৪২ শতাংশ ও ৯ জুন বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ শতাংশে। এ পর্যন্ত জেলায় সাত হাজার ৭১৪জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে মারা গেছেন ৮৪ জন। এছাড়া যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৬৯ জন।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুন রাতে করোনা কমিটির সভায় যশোর পৌরসভার ৩ ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ও নওয়াপড়া পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডে সরকারি বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। এ দুটি ওয়ার্ডের কয়েকটি সড়কে ওইদিন রাত থেকেই বাঁশ বেধে মানষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এরপর গোটা পৌর এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলো।
খুলনা গেজেট/এমএইচবি