বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে যশোরে যাত্রা শুরু করলো মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র্র্র্র। শুধু নামাজ নয়, গবেষণা, ইসলামী সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় ধাপে এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় সারাদেশে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এরমধ্যে ছিল যশোর শহরের রেলরোডে নির্মিত মডেল মসজিদটিও।
বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তৃতীয় ধাপে এসব মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারাদেশে নির্মিতব্য মোট ৫৬৪টির মধ্যে তিন ধাপে তিনি এ পর্যন্ত ১৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করেন।
এ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান ও ধর্মসচিব কাজী এনামুল হাসান। যশোর কালেক্টরেট সভাকক্ষ থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানসহ সংশ্লিষ্টরা।
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব, মূল্যবোধ অটুট রেখে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ইসলামের অমিয়বাণী প্রচারের পাশাপাশি উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরা ও নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করছে সরকার। নিজস্ব অর্থায়নে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রথম দফায় ২০২১ সালের ১০ জুন ৫০টি মসজিদ এবং চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় আরও ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন তিনি। অবশিষ্ট মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের জুন মাসে শেষ হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতেই মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উপর নির্মিত ভিডিও প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত সুবিশাল এসব মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে নারী ও পুরুষদের আলাদা ওজু এবং নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, পবিত্র কোরআন হেফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মরদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে।
এ ছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা ও গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।
মডেল মসজিদগুলোতে দ্বীনি দাওয়াত কার্যক্রম ও ইসলামী সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি মাদক, সন্ত্রাস, যৌতুক, নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন সামাজিক ব্যাধি রোধে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ৪০ শতাংশ জমির ওপর তিন ক্যাটাগরিতে মসজিদগুলো নির্মিত হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা ও উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে নিচতলা ফাঁকা থাকবে।
যশোর জেলা প্রশাসন আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, যশোর পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) বেলাল হোসাইন, গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক বিল্লাল বিন কাশেম, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি যশোরের সভাপতি মিজানুর রহমানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও ওলামায়ে কেরামগণ উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে জোহর বাদ রেলরোড মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড