যশোরে ১৮ লাখ টাকার সম্পদ গোপন করার দায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর পৃথক মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দিয়েছে আদালত। দুদকের মামলায় সোমবার স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) সামছুল হক এ আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের পিপি আশরাফুল আলম বিপ্লব।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক সুপারিটেনডেন্ট ও মণিরামপুর উপজেলার খালিয়া গ্রামের মৃত রজব আলী মোড়লের ছেলে মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী সালেহা বেগম। এ দম্পতি বর্তমানে যশোর শহরের বারান্দীপাড়ায় বাড়িতে বসবাস করেন।
এরআগে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল হুদা বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, আসামি মকবুল হোসেন ১৯৭৮ সালের ১ জুলাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পরিদর্শক পদে চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি সুপারিন্টেনডেন্ট পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হন এবং ২০০৯ সালে ২৯ মে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। চাকরির সময়ে অবৈধ উপায়ে নিজের ও স্ত্রী সালেহা বেগমের নামে এবং বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন। এ সম্পদের হিসাব চেয়ে ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টম্বর মকবুল দম্পতির কাছে নোটিশ দেয় দুদক। ১৮ সেপ্টম্বর তিনি উপ-পরিচালক দুদকের কাছে হিসাব বিবরণী জমা দেন। কিন্তু ৯টি কলাম পূরণ করলেও ১৩টি কলাম পূরণ না করে তিনি অসামঞ্জস্য একটি হিসাব বিবরণী জমা দেন। যশোর শহরের বারান্দীপাড়ার বাড়িসহ বেশ কিছু সম্পদ অর্জনে আয়ের উৎস এবং কার নামে কি পরিমাণ জমি ও অর্থ রয়েছে তাও উল্লেখ না করেই তিনি প্রতিবেদন জমা দেন। এ অবস্থায় তার বাড়ি ঘরের তথ্য ও সম্পদের মূল্য জানতে ২০১৫ সালের পহেলা জুন যশোর পৌরসভার মেয়রকে চিঠি দেয় দুদক। পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) শিকদার মোকলেচুর রহমান এবং কার্য-সহকারী (বাড়ি/ঘর)দের সমন্বয়ে সম্পদের মূল্য নির্ধারণ করে পরের বছরের ৬ এপ্রিল দুদকে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এতে হিসেবের গরমিল পাওয়া যায়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয় মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী সালেহা বেগমের নামে বাড়ি ও দোকানের মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকৃত মূল্য ২৮ লাখ ১৮ হাজার ৫২০ টাকা। এতে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫২০ টাকা ৩১ পয়সা তথ্য গোপন করা হয়েছে। মামলাটি বাদী নিজেই তদন্ত করেন ২০১৬ সালের ২৮ জুন আদালতে চার্জশিট জমা দেন। সর্বশেষ সোমবার আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মকবুল হোসেনের ২৬ (২) ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও ২৭ (১) ধারায় চার বছরের সশ্রম কারাদন্ড ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও চার মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন। এছাড়া তার স্ত্রী সালেহা বেগমের ২৭ (১০৯) ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একইসাথে ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৫২০ টাকা ৩১ পয়সা রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্তের আদেশ দেন। রায়ের সময় দু’জনই আদালতে হাজির ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়া হয়।
খুলনা গেজেট/ টি আই