খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত
১৫ দিনে ২০ হাজার জনের আবেদন

যশোরে ভারতীয় ভিসা পেতে দীর্ঘলাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

যশোরে ভারতীয় ভিসা অফিসে মানুষের ঢল নেমেছে। করোনার কারণে দু’বছর বন্ধ থাকার পর ভারত টুরিস্ট ভিসা ছেড়ে দেয়ায় মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। গত ১৫ দিনে যশোর ভিসা অফিসে জমা পড়েছে ২০ সহস্রাধিক আবেদনসহ পাসপোর্ট। এছাড়া প্রতিদিনই তিনশ’ থেকে পাঁচশ’ জন আবেদনকারীকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ২০২০ সালে মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ভারতের জনজীবন। ওই বছরই তারা ভারতের সকল প্রকার ভ্রমণ ভিসা বাতিল করে দেয়। এরপর তারা গত দু’বছর কাউকে ভ্রমণ ভিসা দেয়নি। শুধুমাত্র জরুরি মেডিকেল ভিসা চালু রেখেছিল। সেক্ষেত্রে বিমানযোগে যাতায়াতের শর্ত বেধে দেয়া হয়েছিল। দু’বছর এ জটিল পরিস্থিতির কারণে সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়ে ব্যবসায়ীরা। তাদের মালামাল আনা-নেয়ায় ব্যাপক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছিল। এরপর ভারতে করোনা সংক্রমণ কিছুটা স্বাভাবিক হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টুরিস্ট ভিসা অবমুক্ত করার ঘোষণা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ থেকে সারাদেশের ইন্ডিয়ান ভিসা কেন্দ্রে আবেদন জমা নেয়া শুরু হয়।

যশোর অফিসেও টুরিস্ট ভিসার আবেদন পড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বাড়তে থাকে আবেদনকারীদের ভিড়। বর্তমানে চলতি সপ্তাহে সেই ভিড় রীতিমত বিশৃঙ্খলায় রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের নড়াইল রোডের নীলগঞ্জ ভারতীয় ভিসা অফিসে অন্তত দেড় হাজার মানুষের ভিড় থাকছে। তারা যশোর-নড়াইল সড়কের পাশে ভারতীয় ভিসার আবেদন নিয়ে চার থেকে পাঁচটি লাইনে দাড়িয়ে থাকছে। স্থানীয় অনেকে এ লাইন দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। তারা বুঝতে পারছেন না, মানুষ এখানে কী জন্যে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন। তাদের প্রশ্ন ভারতে ঘুরতে যাবার জন্য রাস্তার পাশে রোদে, ধূলোবালির মধ্যে তারা দাড়িয়ে রয়েছেন কেনো? অবশ্য এ প্রশ্নের সদ্যুত্তর কেউ দিতে পারছেন না।

মাগুরা শহরের বইপট্টি এলাকার অবসরপ্রাপ্ত একজন কৃষি কর্মকর্তা বলেন, রোজার সেহেরি খেয়ে ভায়নামোড় থেকে ভোর ৪টার সময় তিনি পরিবহন বাসে ওঠেন। এরপর ভোর ৫টায় তিনি ভিসা অফিসে পৌছে লাইনে তিনজনের পেছনে দাড়িয়েছেন। সকাল আটটায় ভিসা সেন্টারের গেট খুললে তিনি ভেতরে ঢুকে সহজে এক ঘন্টার মধ্যে সব প্রক্রিয়া শেষ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে ভিসা সেন্টারে আবেদনকারীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিন সকাল ৯টার মধ্যে কমপক্ষে দেড় হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়।

এদিকে, বর্তমানে প্রতিদিনই ভিসা সেন্টারে মানুষের ভিড় বাড়ছে। প্রতিদিনই ১৫শ’ থেকে দু’হাজার মানুষ তাদের আবেদন নিয়ে হাজির হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভিসা আবেদন জমা নিচ্ছেন। এ হিসেবে গত ৩০ মার্চ টুরিস্ট ভিসা ছেড়ে দেবার পর ১৫ দিনে অন্তত ২০ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। প্রতিটি আবেদনে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ফি জমা দিতে হচ্ছে ৮শ’ টাকা। এরসাথে ভ্যাট, ট্যাক্সসহ অন্যান্য ফি যুক্ত হচ্ছে আরো ৪৩ টাকা। আবেদনকারীদের অভিযোগ কাউন্টারে মহিলা যারা ভিসা আবেদন জমা নিচ্ছেন, তারা অত্যন্ত ধীরে কাজ করছেন, যার কারণে ভিড় কমছে না। একটু দ্রুত এ কাজটি করতে পারলে লাইনে দাড়ানো সবাই সহজে আবেদন জমা দিতে পারতেন ও ভিড় এড়ানো সম্ভব হতো। এছাড়া আরো পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করা প্রয়োজন বলে অনেকে মন্তব্য করেন।

এছাড়া, ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে দুপুর ১২টার পর যারা লাইনে দাড়িয়ে থাকছেন তাদেরকে কর্তৃপক্ষ পরদিন আসার কথা বলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন বলে আবেদনকারীরা অভিযোগে জানিয়েছেন। বলা হচ্ছে পরদিন এলে তাদেরকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবেদন গ্রহণ করা হবে। কিন্তু লাইনে দাড়ানোর পর তারা নতুন কি পুরনো তার খোঁজ নেয়া হচ্ছে না। লাইনে দাড়িয়েই তাদেরকে পরবর্তী ধাপ পার হতে হচ্ছে।

যদিও আবেদনকারীদের ব্যাপক ভিড় এড়াতে কাজ করছেন ভিসা সেন্টারের প্রধান বিপ্লব কুমারসহ অন্যান্যরা। বিপ্লব কখনো নীচে নেমে এসে ভিড় সামলাতে কাজ করছেন আবার কখনো উপরের লাইন সামলাতে, কখনো নিজেই ভিসা আবেদন কাউন্টারে বসে জমা নিচ্ছেন। এ কাজ করতে গিয়ে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন।

এ বিষয়ে যশোর ভারতীয় ভিসা অফিস কর্তৃপক্ষ জানান, দু’বছর পর ভিসা উন্মুক্ত করায় আবেদনকারীদের চাপ বেড়েছে। কারণ এরআগে যাদের ভিসা রয়েছে সবার ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ফলে সবাইকেই নতুন করে ভিসা নিতে হবে। এ জন্য ভিড় বাড়বে, সবাইকে মেনে নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা যথাসাধ্য ভালোভাবে কাজ করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!