খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  পিরোজপুরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে শিশুসহ ৮ জন নিহত

যশোরে বেড়েছে অপরাধমূলক কর্মকান্ড, দুই ভাইসহ পাঁচ দিনে ৫ খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

পবিত্র রমজান মাস চলছে। হিংসা ভুলে ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত করার মাসেও যশোরে অপরাধমূলক কর্মকান্ড থেমে নেই। ঘটছে লোমহর্ষক ঘটনা। আপন দুই ভাইকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনা ঘটেছে যশোরের চৌগাছায়। একদিনে দুই ভাই সহ গত পাঁচ দিনে ৫ জন খুন হয়েছেন।

একের পর এক খুন হচ্ছেন নিরীহ মানুষ।  হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন অনেকে। আবার চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে হর-হামেশা। দ্রুত পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যথাযথ পদক্ষেপ দাবি করেছে যশোরের সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, গত ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় চৌগাছা-মহেশপুর সড়কের টেঙ্গুরপুর মোড়ে একই গ্রামের আফজাল খানের ছেলে বিপুল ও মুকুলের নেতৃত্বে চাপাতি, হাসুয়া, লাঠি নিয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুই ভাই ইউনুস আলী খান ও আইয়ুব আলী খান। হামলায় জখম হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন আইউব আলী খানের ছেলে আসাদুজ্জামান খান রনি। এ জোড়া হত্যার ঘটনা দেশ জুড়ে আলোচনায় উঠে এসেছে। যদিও হত্যাকারী চারজনকে পুলিশ আটক করেছে।

এ জোড়া হত্যাকান্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই যশোরের শহরতলী আড়পাড়ায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে আব্দুর রহমান (৬০) নামে এক বৃদ্ধকে হত্যা করা হয়েছে। এসময় আরও এক যুবককে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল বিকেল ৪ টার দিকে যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুরের আড়পাড়া গ্রামে জমি নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে প্রথমে বাকবিতন্ডার পর এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এ হত্যায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে।

একইদিন রাতে সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের তীরেরহাট কাদিরপাড়া গ্রামের মৃত ইসমাইল তরফদারের ছেলে মোটরসাইকেল চালক কাইয়ুম আলী তরফদারকে (৫৫) গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরদিন যশোরের চৌগাছা উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের মাঠ থেকে পুলিশ ওই ভাড়ার মোটরসাইকেল চালকের লাশ উদ্ধার করে। তবে তার মোটরসাইকেলটি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ওই মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে।

এদিকে, যশোরের ৩টি স্পটে ৭ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত খুন হন ৪ জন। এছাড়া অপহরণের তিন দিন পর ৭ এপ্রিল যশোরের মণিরামপুরে ইকরামুল হোসেন (২০) নামে এক কলেজ ছাত্রের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করে পিবিআই। ইকরামুল হোসেন উপজেলার মশ্মিমনগর ইউনিয়নের ভরতপুর গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী মফিজুর রহমানের ছেলে। ৭ এপ্রিল দুপুর ২ টার দিকে যশোর পিবিআই-এর একটি দল হরিহরনগর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামের মাঠের নিমতলা ডোবার কিনারা থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় মাটিতে পুতে রাখা লাশটি উদ্ধার করে। ৪ এপ্রিল ওয়াজ মাহফিলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন।ইকরামুল হত্যাকান্ড নিয়ে ৭ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ দিনে খুন হলেন ৫ জন।

এর আগে ২৫ মার্চ রাতে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে খুন হন পুরাতন কসবা টালিখোলার হোসাইন মোহম্মদ রুম্মান। হত্যার ঘটনায় এলাকার চিহ্নিত ১০ জন জড়িত বলে মামলা হয়েছে। ২৪ মার্চ এক ভাইয়ের হত্যা মামলায় স্বাক্ষী হওয়ায় আরেক ভাইকে খুন করা হয়। নিহতের নাম আলম। তিনি পেশায় ইজিবাইক ব্যবসায়ী। নিহত আলম ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার রসুলের বাড়ির ভাড়াটিয়া ও মৃত শেখ মোহম্মদ আলীর ছেলে।

এক বছর আগে তার অপর ভাই কোরবান আলী পচাকে চুয়াডাঙ্গা বাসস্টান্ডে আমিরুল ও পিয়ারুজ্জামান পিরুসহ সহযোগী আসামিরা হত্যা করে। পচা হত্যার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়। মামলায় সাক্ষী ছিলেন আলম। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে আলমকে সাক্ষী দিতে নিষেধ করে ও মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়। এরপর ২৪ মার্চ দুপুরে আলমকে পুরাতন কসবা কাজীপাড়া গোলামপট্টির আঞ্জুমানআরা স্কুলের পেছনে গাছি দা দিয়ে কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

যশোরের বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে খুন, ছিনতাই ও অপহরণ মুড়ি মুড়কির মত ঘটছে। এসব ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ারা জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ভর্তি হয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। অথচ এসব বিষয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর বিশেষ কোন পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। পুলিশ আগের মতই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কেন কী কারণে এসব খুন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে সে বিষয়ে তাদের নেই কোন বাড়তি নজরদারি। এ কারণে যশোরবাসী খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েছে। তারা মানুষের হত্যার পর রহস্য উন্মোচন নয়, ঘটনার আগেই হত্যাকারীদের আটকের দাবি জানিয়েছেন। একইসাথে ক্রাইম স্পটগুলোতে পুলিশি টহল বাড়ানোসহ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে যশোর কেতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, এসব হত্যাগুলো অনাকাঙ্খিত। একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে, আবার আসামি ও জড়িতদের শনাক্ত করে আটক করা হচ্ছে। থানা এলাকায় পুলিশি টহল ও অভিযান বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনার ব্যাপারে পুলিশ সতর্ক রয়েছে। হত্যাকারী পলাতকদের দ্রæতই আটক করা হবে।

এসব বিষয়ে জেলা পুলিশের মুখপাত্র ডিবির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রূপন কুমার সরকার বলেন, চৌগাছায় জোড়া খুনের সব আসামিকে আটক ও হত্যায় ব্যবহৃত রক্তমাখা দা ও হাসুয়া উদ্ধার করা হয়েছে। মণিরামপুরের ইকরামুল হত্যাকারী আটক ও হত্যা রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই। এছাড়া বাকি দু’জনের হত্যাকারী আটকেও পুলিশ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ও জেলাব্যাপী পুলিশি তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!